০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


হিসাবের ম্যারপ্যাঁচে পুঁজিবাজার

-

পুঁজিবাজারের ওষুধ ও রসায়ন গ্রুপের শেয়ার বার্জার পেইন্টস। গত ১৬ জুন প্রতিটি শেয়ার লেনদেনে হয়েছে ১ হাজার ৪৪৫ টাকা। এটির ফেইস ভ্যালু ১০ টাকা। অর্থাৎ ১০ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৪৪৫ টাকায়। পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বছর শেষে শেয়ারহোল্ডারদের মুনাফা বা লভ্যাংশ দেয়া হয় ফেইস ভ্যালুর ওপর ভিত্তি করে। এখন যদি কোম্পানিটি ভালো মুনাফা করে আর ৪০০ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ দিলে শেয়ারহোল্ডাররা পাবেন ১০ টাকার ওপর ৪০ টাকা। অর্থাৎ প্রতি শেয়ারে ১ হাজার ৪৪৫ টাকা বিনিয়োগ করে শেয়ারহোল্ডার পাবেন ৪০ টাকা। আর যদি ৫০ ভাগ বোনাস শেয়ার দেয়া হয়; তাহলে প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে শেয়ারহোল্ডার পাবেন দেড়টি শেয়ার, যার বাজারমূল্য ২ হাজার ১৬৭ টাকা ৫০ পয়সা (১৪৪৫+৭২২.৫/৫০%)। এ থেকে দেখা যায়, নগদে লভ্যাংশ দেয়ার পরিবর্তে বোনাস শেয়ার দিলে শেয়ারহোল্ডাররা যেমন লাভবান হন, তেমনি কোম্পানির ভিত্তিও শক্তিশালী হয়। আর প্রকৃত মুনাফা না করে ভুয়া মুনাফার ভিত্তিতে নগদে লভ্যাংশ দিলে নগদ অর্থ কোম্পানি থেকে বের হয়ে যায়। এতে কোম্পানির যেমন ঘুনে ধরার অবস্থা হয়, তেমনি বিনিয়োগকারীর বিনিয়োগও ঝুঁকির মুখে পড়ে যায়। কারণ কোম্পানি লোকসানের মুখে পড়লে তার ইপিএস (আর্নিং পার শেয়ার) কমে যায়। আর ইপিএস কমলে আগের বছরের হারে লভ্যাংশ দিতে পারে না। এতে মুনাফার হার কমে যায় বিনিয়োগকারীদের।
আগামী অর্থবছরের (২০১৯-২০) প্রস্তাবিত বাজেটে পুঁজিবাজারে বোনাস শেয়ার দেয়ার ওপর নিরুৎসাহিত করা হয়েছে। এ জন্য ১৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে বোনাস শেয়ারের ওপর। এ জন্য অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, ‘কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করে বিনিয়োগকারীরা কোম্পানি থেকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রাপ্তির প্রত্যাশা করেন। সে বিবেচনায় ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান পুঁজিবাজারে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের মূল্য বৃদ্ধি ও পুঁজিবাজার শক্তিশালীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ক্যাশ ডিভিডেন্টের পরিবর্তে স্টক ডিভিডেন্ড তথা বোনাস শেয়ার বিতরণের প্রবণতা কোম্পানিগুলোর মধ্যে লক্ষ করা যায়। স্টক ডিভিডেন্ডের পরিবর্তে ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদানকে উৎসাহিত করার জন্য কোনো কোম্পানি স্টক ডিভিডেন্ড প্রদান করলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ওই স্টক ডিভিডেন্ডের ওপর ১৫ শতাংশ কর প্রদানের বিধান প্রস্তাব করছি।’
পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ বাড়াতে বোনাস শেয়ারকে নিরুৎসাহিত করার অর্থমন্ত্রীর এ প্রস্তাব বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি, বরং উল্টো পথে যাত্রা করে পুঁজিবাজার। এর বড় প্রমাণ হলো বাজেট প্রস্তাবের পরের দুই দিন পঁজিবাজারের সামগ্রিক লেনদেনের অবস্থা। বাজেট প্রস্তাবের পরের দুই দিন অর্থাৎ ১৬ ও ১৭ জুনে বাজারে শেয়ারের দরপতন হয়েছে প্রায় ১০০ পয়েন্ট। পরের তিন দিন অর্থাৎ ১৮-২০ জুন পর্যন্ত বাজার বাড়লেও ওই ১০০ পয়েন্ট দরপতন সমন্বয় হয়নি। অর্থাৎ প্রথম দুই দিনে বাজার ১০০ পয়েন্ট দর হারালেও পরের তিন দিন সমপরিমাণ দাম বাড়েনি। এর অর্থ এই দাঁড়ায় ক্যাশ ডিভিডেন্ডকে নিরুৎসাহিত করা বিনিয়োগকারীরাও ভালোভাবে নিতে পারেননি। বিনিয়োগকারীদের মতে, তারা পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে যেমন মুনাফা চান, তেমনি তার বিনিয়োগের সুরক্ষাও চান। দুর্বল মৌলভিত্তির ওপর গড়ে ওঠা কোনো কোম্পানির শেয়ার থেকে বাজার দরপতনের সময় বিনিয়োগকারীরা যে হারে ক্ষতিগ্রস্ত হন, তার চেয়ে কম হারে ক্ষতিগ্রস্ত হন শক্তিশালী মৌলভিত্তির ওপর গড়ে ওঠা কোম্পানির শেয়ার থেকে।
আমি যদি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাবো, বেশির ভাগ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বছর শেষে মুনাফা হিসাবায়নের ক্ষেত্রে যথাযথ নীতি অনুসরণ করেন না। কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রকৃত মুনাফা আড়াল করে ভুয়া সূচকের ওপর ভিত্তিতে মুনাফাকে স্ফীত করে। যেমনÑ কোনো ঋণখেলাপি হয়ে গেলে আর সে খেলাপি মন্দমানের হলে তার বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন অর্থাৎ নিরাপত্তা সঞ্চিতি রাখতে হয়। আর এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকের আয় খাত থেকে অর্থ এনে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খেলাপি ঋণ যথোপযুক্তভাবে দেখানো হয়নি। প্রভিশন ফাঁকি দেয়ার জন্য প্রকৃত খেলাপি ঋণ আড়াল করে প্রভিশন কম করা হয়। এতে প্রকৃত খেলাপি ঋণের বিপরীতে যে পরিমাণ প্রভিশন রাখার কথা ছিল খেলাপি ঋণ আড়াল করে তার চেয়ে কম প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। এতে ব্যাংকের আয় বেড়ে যায়। আবার কোনো ঋণ মন্দ হলে মন্দমানের খেলাপি ঋণের বিপরীতে যে সুদ হয় সেটা আয় খাতে নিতে পারে না। সেটা আলাদা হেসেবে রাখতে হয়। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের বিপরীতে অর্জিত আয় স্থগিত রাখা হয়। কিন্তু বেশির ভাগ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান খেলাপি ঋণের বিপরীতে অর্জিত আয় স্থগিত না রেখে আয় খাতে স্থানান্তর করা হয়। এতে আয় বেড়ে যায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের। এরকম আরো শত উদহারণ দেয়া যায় ব্যাংকগুলোর আয় বাড়ানোর ওপর। আর এ ভুয়া আয়ের ওপর ভিত্তি করে নগদে মুনাফা দেয়া হলে ব্যাংক থেকে নগদ অর্থ বের হয়ে যাবে। একদিকে ব্যাংকের প্রকৃত মূলধন খোয়া যায়, তেমনি ব্যাংকের ভিত্তি দুর্বল হয়ে যায়। এ জন্য সম্ভবত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোকে নগদে লভ্যাংশ দেয়ার পরিবর্তে বোনাস শেয়ার দেয়ার ওপর জোর দেয়া হয়।
কিন্তু আগামী অর্থবছরের বাজেটে পুঁজিবাজার নিয়ে যে প্রস্তাব করা হয়েছে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতির সাথে সাংঘর্ষিক হয়েছে। তাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে ও তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ভিত্তি শক্তিশালী করতে বাজেটের এ প্রস্তাব সংশোধন হবে এটা সবরাই প্রত্যাশা।

 

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
প্রতিদ্বন্দ্বীর আনারস খেয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেন চেয়ারম্যান প্রার্থী পাথরঘাটায় দেড় মণ হরিণের গোশত উদ্ধার টঙ্গীবাড়ীতে অজ্ঞাত কিশোরের গলা কাটা লাশ উদ্ধার জাল দলিলে আপনার জমি দখল হয়ে গেলে কী করবেন? আমির খানকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিশেষ সম্মাননা টানা জয়ের খোঁজে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে বাংলাদেশ ‘শুক্রবার ক্লাস নেয়ার বিষয়টি ভুল করে ফেসবুকে পোস্ট হয়েছিল’ চকরিয়ায় চিংড়ি ঘের থেকে একজনের লাশ উদ্ধার জনগণের কথা চিন্তা করে জনবান্ধব আইন তৈরি করতে হবে : আইনমন্ত্রী হাওরের ৯৭ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ : কৃষি মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার চায় শিক্ষক সমিতি

সকল