০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


  চাপে পড়বে ব্যাংকিং খাত

-

ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শক্তিশালী যে কয়েকটি ভিত্তি আছে তার মধ্যে অন্যতম হলো মূলধন। কোনো প্রতিষ্ঠানের মূলধন যত বেশি ওই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক ভিত্তি তত শক্তিশালী। আর জনগণের আমানত নিয়ে কারবার করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানের আস্থার সূচক শক্তিশালী হয় মূলধনের পরিমাণের ওপর। তাই সাধারণ গ্রাহক যখন কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে আমানত রাখতে চান তখন সচেতন গ্রাহক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মূলধনের পরিমাণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হন। উচ্চ মাত্রার খেলাপি ঋণে বেশির ভাগ ব্যাংকের বাড়তি প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হচ্ছে। এ জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রক সংস্থা প্রতিষ্ঠানগুলোর মূলধন বাড়ানোর ওপর জোর দেন। নেন কার্যকর পদক্ষেপ।
বর্তমানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দিকে তাকালে দেখা যায়, অনেক ব্যাংক শেয়ারহোল্ডারদের নগদে লভ্যাংশ দিতে পারছে না। এর অন্যতম কারণ হলোÑ উচ্চ মাত্রার খেলাপি ঋণ। ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণ করছে। কিন্তু গ্রাহকেরা তা ফেরত দিচ্ছে না। আর এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার পরিবর্তে বোনাস শেয়ার দেয়া হচ্ছে। এতে এক দিকে পুঁজিবাজারে শেয়ারহোল্ডারদের শেয়ারের পরিমাণ যেমন বাড়ছে, তেমিন ব্যাংকগুলো মূলধন বাড়ছে। আবার নগদে লভ্যাংশ দেয়ার পর যে পরিমাণ অর্থ ব্যাংকগুলোর হাতে থাকে তা ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়ানোর জন্য রিজার্ভ ফান্ডে রাখে।
আগামী অর্থবছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে এ মূলধন সংরক্ষণের ওপর ১৫ শতাংশ করের বোঝা চাপানো হয়েছে। বলা হয়েছে, কোনো কোম্পানির কোনো আয় বছরে রিটেইন আর্নিংস, রিজার্ভ ইত্যাদির সমষ্টি পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশের বেশি হলে, বেশিটুকুর ওপর সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে ১৫ শতাংশ কর প্রদান করতে হবে। একই সাথে শেয়ারহোল্ডাদের নগদে লভ্যাংশ দেয়ার পরিবর্তে বোনাস শেয়ার দিলে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিকে বোনাস শেয়ারের ওপর ১৫ শতাংশ কর প্রদান করতে হবে।
ব্যাংক খাতের ওপর এ কারারোপ করায় বড় ধরনের চাপ আসবে, মনে করছেন ব্যাংকাররা। বর্তমানে সঙ্কটে পড়া ব্যাংকগুলোর সঙ্কট আরো বাড়বে। অন্য কোম্পানিগুলোর সাথে ব্যাংকগুলোকে এক করা ঠিক হবে না। ব্যাংকগুলো জনগণের আমানত নিয়ে কারবার করে। জনগণের আমানত সুরক্ষা করতে ব্যাংকগুলোর মূলধন বা ভিত্তি শক্তিশালী করার বিকল্প নেই। কিন্তু এ মূলধন সংরক্ষণের ওপর করের বোঝা চাপানো হলো, দেশের ব্যাংকখাত আরো বেকায়দায় পড়ে যাবে। জনগণের আমানত সুরক্ষা হওয়ার পরিবর্তে ঝুঁকির মুখে পড়ে যাবে।
ব্যাংকাররা বলেন, ব্যাংক খাতে এ সিদ্ধান্ত বড় ধরনের চাপ আসবে। কেননা ব্যাংকের রিজার্ভ বাড়ানো হয় ব্যাংকগুলোর ভিত্তি শক্তিশালী করার জন্য। এর ওপর করের বোঝা চাপানো হলে মূলধন সংরক্ষণের ওপর চাপ বেড়ে যাবে। কমে যাবে ব্যাংকের মুনাফা। চূড়ান্ত বাজেটে এটি যেন বিবেচনা করা হয় সে জন্য ব্যবস্থা নেবো।
তারা বলেছেন, যেসব ব্যাংকের আর্থিক সঙ্কট নেই তারা বোনাস শেয়ারের পরিবর্তে নগদে লভ্যাংশ দিলে তাদের কোনো ক্ষতি হবে না। কিন্তু যারা সমস্যায় আছে তাদের ওপর চাপ বাড়বে। তাদের তহবিল সঙ্কট আরো বেড়ে যাবে। তবে সবচেয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে সবচেয়ে বেকায়দায় ফেলবে মূলধন সংরক্ষণের ওপর কর বসানোতে। কারণ আমানতকারীদের স্বার্থে সব ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে হয়। যে ব্যাংকের মূলধন যত বেশি ওই ব্যাংকের ভিত্তি তত শক্তিশালী। ঝুঁকি তত কম। কিন্তু এই মূলধন সংরক্ষণের ওপর করারোপ করায় সব ব্যাংকই কমবেশি সমস্যায় পড়ে যাবে। এটা সংশোধন হওয়া প্রয়োজন।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি। কেউ কেউ বলছেন, ব্যাংকিং খাতে অবলোপন বাদেই খেলাপি ঋণ এখন পাহাড় সমান। এক লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা এ খেলাপি ঋণ। এর বাইরে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকার মন্দমানের খেলাপি ঋণ অবলোপন করা হয়েছে। অর্থাৎ খেলাপি ঋণের হিসাব থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। প্রায় প্রতিটি ব্যাংকেরই কমবেশি খেলাপি ঋণ বেড়েছে। খেলাপি ঋণের প্রায় ৯০ শতাংশই মন্দ ঋণ। আর এ মন্দ ঋণের বিপরীতে শতভাগ প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। আর এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকগুলোর মুনাফা থেকে। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্য মন্দার কারণে বেশির ভাগ ব্যাংকেরই মুনাফা আগের বছরের চেয়ে কমে গেছে। এর ফলে মন্দ ঋণের বিপরীতে অনেক ব্যাংকই কাক্সিক্ষত হারে প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারছে না। আর প্রভিশন সংরক্ষণ করার মতো পর্যাপ্ত আয় না হওয়ায় ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি বাড়ছে। এর পরও পুঁজিবাজারের স্বার্থে কিছু কিছু ব্যাংকের প্রভিশন সংরক্ষণের জন্য এক বছরের সময় দেয়া হয়েছে। একই সাথে ব্যাংকগুলোকে বোনাস শেয়ার দেয়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। কারণ কিছু কিছু ব্যাংক নগদে লভ্যাংশ দিয়ে মূলধন হারাচ্ছে। এ কারণে তাদের বোনাস শেয়ার দেয়ার অনুমোদন করা হয়। কিন্তু এখন প্রস্তাবিত বাজেটে বোনাস শেয়ারের ওপর ১৫ শতাংশ করারোপ করায় ব্যাংকগুলোর নগদ টাকার সঙ্কট আরো বেড়ে যাবে। এমনিতেই প্রভিশন সংরক্ষণের মতো পর্যাপ্ত অর্থ তাদের হাতে নেই। এরওপর করারোপ করা হলে ব্যাংকগুলোর সঙ্কট আরো বেড়ে যাবে।
আবার কেউ বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে নগদ লভ্যাংশ দেয়ার অনুমোদন কোনোভাবেই ঠিক হবে না। কারণ ব্যাংকগুলো সঠিক উপায়ে খেলাপি ঋণ নবায়ন করছে না। এর ফলে যথাযথভাবে প্রভিশন সংরক্ষণ করছে না। এতে বাড়ছে মুনাফা। এ মুনাফার ওপর ভর করে নগদে মুনাফা দেয়ার অনুমোদন দেয়ার অর্থ সাধারণ আমানতকারীদের অর্থ কারো পকেটে চলে যাওয়া। এটা বন্ধ না করতে পারলে সামনে আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দেয়াই ব্যাংকের কষ্টকর হয়ে পড়বে। এতে আস্থার সঙ্কট দেখা দেবে ব্যাংকিং খাতে, যা ব্যাংকিং খাতকে বিপর্যয়ের মধ্যে ফেলে দেবে। এ পরিস্থিতিতে বোনাস শেয়ার দেয়ার অনুমোদন দেয়া যেতে পারে। আর বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে তাই করা হচ্ছে। তিনি মনে করেন, ব্যাংক কোম্পানির সাথে অন্য কোম্পানির আইন এক করা ঠিক হবে না। কারণ, ব্যাংকগুলো জনগণের আমানত নিয়ে কারবার করে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জনগণের আমানত সুরক্ষা করতে নীতিপ্রণয়ন করে। জনগণের আমানত সুরক্ষা করতে ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। এখন মূলধন বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনো নীতি প্রতিবন্ধকতা হলে ব্যাংক খাত সমস্যায় পড়বে। জনগণের আমানত সুরক্ষা হওয়ার পরিবর্তে ঝুঁকির মুখে পড়বে। এ কারণে প্রস্তাবিত বাজেটে বোনাস শেয়ারের ক্ষেত্রে ও মূলধন সংরক্ষণের ক্ষেত্রে যে করারোপ করা হয়েছে, তা থেকে ব্যাংকগুলোকে বাইরে রাখা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।


আরো সংবাদ



premium cement
জাল দলিলে আপনার জমি দখল হয়ে গেলে কী করবেন? আমির খানকে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিশেষ সম্মাননা টানা জয়ের খোঁজে অপরিবর্তিত একাদশ নিয়ে মাঠে বাংলাদেশ ‘শুক্রবার ক্লাস নেয়ার বিষয়টি ভুল করে ফেসবুকে পোস্ট হয়েছিল’ চকরিয়ায় চিংড়ি ঘের থেকে একজনের লাশ উদ্ধার জনগণের কথা চিন্তা করে জনবান্ধব আইন তৈরি করতে হবে : আইনমন্ত্রী হাওরের ৯৭ শতাংশ বোরো ধান কাটা শেষ : কৃষি মন্ত্রণালয় শিক্ষকদের ওপর হামলাকারী শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার চায় শিক্ষক সমিতি কিশোরগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়ে অন্তঃসত্তা মা ও পাঁচ বছরের ছেলের মৃত্যু ঝড়ে পড়ে যাওয়া মাদরাসা ঘর এক মাসেও মেরামত হয়নি গুচ্ছের‘বি' ইউনিটের ফল প্রকাশ, পাশ ৩১ হাজার

সকল