০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ভ্যাট আইনে ‘দ্বৈত কর’

-

কারো পৌষ মাস, আবার কারো সর্বনাশ প্রবাদ বাক্যটি বহুক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। জাতীয় বাজেট এলে এমনটাই হয় কারো কারো ক্ষেত্রে। বাজেটে যে খাতে করের বোঝা লাঘব করা হয় ওই খাতের ব্যবসায়ীদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আয় বেড়ে যায়। ব্যবসায় পরিচালনার ক্ষেত্রে অনেকটা দুশ্চিন্তা কমে যায়। এই কারণে এ ক্ষেত্রে বাজেট হয় ওইসব ব্যবসায়ীর জন্য পৌষ মাস। আবার কোনো কোনো খাতে করের বোঝা বাড়ানো হলে অর্থাৎ করের আওতা বাড়ানো হলে ওইসব খাতের ব্যবসায়ীদের নানা দুশ্চিন্তা ভর করে। ব্যবসায় পরিচালনা ব্যয় বেড়ে যায়। মুনাফা কমে যায়। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যায়। এতে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে যেমন চাপ বাড়ে, তেমনি মুনাফার ওপরও কিছুটা প্রভাব পড়ে। এ কারণে এ ক্ষেত্রে বাজেট ওইসব ব্যবসায়ীর জন্য সর্বনাশ ডেকে আনে। তবে বেশি সর্বনাশ ডেকে আনে ভোক্তাদের।
আগামী অর্থবছরের জন্য জাতীয় বাজেট পেশ করা হবে ১৩ জুন। বাজেটে করের আওতা বাড়াতে বিদ্যমান ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) আইনের পরিবর্তে নতুন আইন করার কথা শোনা যাচ্ছে। ইতোমধ্যে নতুন আইনে ভ্যাট আইন সংশোধনের কাজ চূড়ান্ত করেছে সরকার। আর ভ্যাট আইন নিয়ে দুশ্চিন্তায় কাটাচ্ছেন শিল্প উদ্যোক্তাসহ পুরো ভোক্তাসমাজ। জানা গেছে, নতুন আইনে ভ্যাটের হার করা হচ্ছে পাঁচটি। এতে সর্বনি¤œ ২ শতাংশ এবং সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশসহ মোট ভ্যাটের হার হচ্ছে পাঁচটি। তবে ভ্যাটের আদর্শ বা স্ট্যান্ডার্ড রেট ১৫ শতাংশই বহাল থাকবে। বড় কোনো পরিবর্তন না করে বর্তমান ১৯৯১ সালের আইনের আদলেই নতুন আইনটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ ছাড়া কোনো খাতে কত ভ্যাট বসবে সেটিও চূড়ান্ত হয়েছে। এখন শুধু বাস্তবায়নের অপেক্ষা। আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর হওয়ার কথা।
যতদূর জানা গেছে, নতুন আইনে ২, ৫, সাড়ে ৭, ১০ এবং ১৫ শতাংশÑ এই পাঁচটি রেট নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। নতুন আইনে সেবার বেশির ভাগ খাত ১০ শতাংশ রেটে নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে সেবার অন্যতম খাত হোটেল ও রেস্টুরেন্টকে সাড়ে ৭ শতাংশে রাখা হতে পারে। এ ছাড়া উৎপাদনমুখী পণ্যগুলোকে পাঁচ শতাংশ স্তরে রাখা হতে পারে। বর্তমানে এসব পণ্যে ট্যারিফ ভ্যালু (নির্ধারিত) ভিত্তিতে এবং যতটুক মূল্য সংযোজন হয় তার ওপর (সঙ্কুচিত) ভিত্তি করে বিশেষ ছাড় দিয়ে ভ্যাট আহরণ করা হয়। নতুন আইনে প্রচলিত প্রথা উঠিয়ে দিয়ে তার পরিবর্তে বাজার মূল্যের ওপর উল্লিখিত হারে ভ্যাট আহরণের প্রস্তাব করা হয়। নতুন আইনে ভ্যাটমুক্ত সীমা বার্ষিক ৫০ লাখ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এক থেকে তিন কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের চার শতাংশ হারে টার্নওভার কর দিতে হবে। এ ছাড়া আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং স্থানীয় পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট আদায়ের নিয়ম আগের মতো বহাল রাখা হয়। একই সাথে সম্পূরক শুল্ক এগারোটি স্তরের পরিবর্তে আটটি স্তর নির্ধারণ করা হয়।
এটি বাস্তবায়ন হলে ওষুধ, পেট্রোলিয়ামসহ বেশ কিছু পণ্য আছে, নতুন আইনে কার্যকর হলে ওইসব পণ্যের দাম বাড়তে পারে, যা জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এসব পণ্যের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে নতুন করে বিশেষ ছাড় দিয়ে ন্যূনতম ২ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা হচ্ছে। তবে, নতুন আইনে ভ্যাটের জাল আরো বিস্তৃৃত হবে। বর্তমানে ১৯৯১ সালের আইনে নির্দিষ্ট খাতে (৩৯টি) প্রযোজ্য হারে ‘উৎসে’ ভ্যাট আদায় করা হয়। নতুন আইনে উৎসে ভ্যাট কর্তনের পরিধি ব্যাপক বাড়ানো হচ্ছে। এখন শুধু আমদানি পর্যায়ে বাণিজ্যিক পণ্যে (কমার্শিয়াল ইমপোর্টার) ‘অগ্রিম’ ভ্যাট (এটিভি) আদায় করা হয়। নতুন আইনে বাণিজ্যিকসহ সব পণ্যে অগ্রিম ভ্যাট দিতে হবে। ফলে ভ্যাটের আওতা ব্যাপক বাড়বে। নতুন আইনে যে রেটগুলো নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে দেখা যায়, মোট কর-ভার পণ্য ও সেবার মূল্যে গড়ে ২৭ শতাংশ থেকে ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে, যা এখন আছে ২০ শতাংশ। এ প্রস্তাব কার্যকর হলে ভ্যাট আহরণের ক্ষেত্রে করের ওপর কর বা ‘দ্বৈত কর’ ব্যবস্থা চালু হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে। তখন পণ্য ও সেবার খরচ বাড়বে। ফলে জনগণের ওপর করের বোঝা চাপবে বেশি।
নতুন ভ্যাট আইনের ইতিবাচক দিক তুলে ধরে এনবির সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আগের মতোই বেশির ভাগ ভ্যাট আসবে ১৫ শতাংশ স্তর থেকে। ফলে আদায় কমবে না। বর্তমানে যারা ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দেন, রেয়াত বা ক্রেডিট পান তারা। নতুন আইনে একই নিয়মে ভ্যাট আহরণ করা হবে। এ স্তরে সাধারণত বড় ব্যবসায়ীরা ভ্যাট দেন এবং তারা রেয়াত পেয়ে আসছেন। ১৫ শতাংশের নিচের রেট বা স্তরে যারা ভ্যাট দেবেন, তাদের ক্ষেত্রে রেয়াত সুবিধা থাকবে না।
তবে, এ রীতি হবে অনেকটা জগাখিচুড়ি। কেউ ভ্যাট দিয়ে কর রেয়াতি সুবিধা পাবেন, আবার কেউ পাবেন না এটা ন্যায়বিচার করা হবে না। কেননা যারা ১৫ শতাংশ হারে ভ্যাট দেবেন, শুধু তারাই রেয়াত পাবেন। এই শ্রেণী সাধারণত বড় ব্যবসায়ী। ফলে তারা প্রকৃত ভ্যাট সিস্টেমে থাকবেন। অপর দিকে, ১৫ শতাংশের নিচে অর্থাৎ ৫, সাড়ে ৭ ও ১০ শতাংশ হারে যারা ভ্যাট দেবেন তারা রেয়াত সুবিধা পাবেন না। এ পদ্ধতি হবে প্রকারান্তরে আবগারি প্রথা চালু করার শামিল, যা ভ্যাট আইনের পরিপন্থী। কেননা এতে এক পক্ষ রেয়াত পাবেন, অন্য পক্ষ রেয়াত পাবেন না। একই আইনে দুই পদ্ধতি চালু করা হলে ট্যাক্স অন ট্যাক্স বা করের ওপর কর (দ্বৈত কর) আরোপ করা হবে। তখন পণ্য ও সেবার খরচ বাড়বে, যা ভোক্তার ঘাড়ে এসে পড়বে।
এ ছাড়া, নতুন আইনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হচ্ছে অব্যাহতি সীমা নির্ধারণ করা। কারণ কে ৫০ লাখ টাকা বিক্রি করবে, আর কে করবে না, তা নির্ধারণের কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা নেই। ফলে সৎ ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। অসৎরা আরো লাভবান হবেন। তাই এ আইন বাস্তবায়নের আগে আরো পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement
ফিলিস্তিনে যুদ্ধাপরাধে দায়ীদের জবাবদিহি করার আহ্বান পররাষ্ট্রমন্ত্রীর জয়পুরহাট ট্রাক ও সিএনজির মুখোমুখি সংঘর্ষ, নিহত ২ জিম্বাবুয়েকে ৬ উইকেটে হারাল বাংলাদেশ নেতানিয়াহুকে যুদ্ধবিরতির চুক্তিতে পৌঁছার আহ্বান ম্যাক্রোঁর গাজীপুরে পাওনা আদায়ের দাবিতে শ্রমিকদের অবস্থান লেবাননে ইসরাইলি হামলায় একই পরিবারের ৪ জন নিহত ঢাকায় এবার কোরবানির পশুর হাট ২২টি ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক না করা পর্যন্ত সৌদির সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তি নয় : যুক্তরাষ্ট্র নোয়াখালীর চরজব্বার থানার ওসি প্রত্যাহার বগুড়ায় সড়ক দুর্ঘটনায় বিএনপি নেতা নিহত কালবৈশাখী ঝড়ের সতর্কতা জারি, বৃষ্টি থাকতে পারে ৭ দিন

সকল