৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


দুর্নীতির দায়ে নিশান চেয়ারম্যান গ্রেফতার

শেয়ারবাজারে পতন
-

সারা বিশ্বের গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিগুলোর মধ্যে সম্মানজনক জায়গা করে নিয়েছে জাপানের গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি নিশান মোটর। কিন্তু গাড়ি কোম্পানিটির চেয়ারম্যান কার্লোস গোন আর্থিক অসদাচরণের অভিযোগে সম্প্রতি গ্রেফতার হয়েছেন। তার গ্রেফতারের পরপরই নিশান ও মিতসুবিশির শেয়ারদরে বড় পতন ঘটেছে। এএফপি ও রয়টার্স।
অথচ কোম্পানিকে শক্ত অবস্থানে নিয়ে আসার জন্য যেকোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতে কখনো পিছপা হননি তিনি।
রেনো-নিশান-মিতসুবিশির যৌথ উদ্যোগের প্রধান হিসেবে একটি অতিকায় শিল্প গড়ে তুলেছেন ব্রাজিলীয় বংশোদ্ভূত কার্লোস গোন গোন। উদ্যোগটিতে সারা বিশ্বে চার লাখ ৭০ হাজার কর্মী রয়েছেন। প্রতিষ্ঠানটি গত বছর বিশ্বের ১২২টি কারখানা থেকে এক কোটির বেশি গাড়ি বিক্রি করেছে।
গত ১৯ নভেম্বর সোমবার গোনকে সন্দেহজনক আর্থিক অসদাচরণের অভিযোগে গ্রেফতার করে জাপানের পুলিশ। এর পর জটিলতায় পড়ে গেছে যৌথ উদ্যোগটি। গোনের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, নিশানের চেয়ারম্যান হিসেবে শেয়ারবাজার কর্তৃপক্ষের কাছে নিজের পারিশ্রমিকের পূর্ণাঙ্গ আর্থিক রিপোর্ট প্রকাশ করেননি তিনি।
এক বিবৃতিতে নিশানের ব্যবস্থাপনা পরিষদ জানিয়েছে, এ মুহূর্তে তাকে কোম্পানি থেকে অপসারণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। গোনের অসদাচরণের ঘটনা নিয়ে একটি চাঞ্চল্যকর রিপোর্ট পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে বেশ কয়েক মাস ধরে তদন্ত চলছিল বলে বিবৃতিতে জানানো হয়েছে।
তবে নিশান চেয়ারম্যান ও রেনোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা গোন এবারই প্রথম পারিশ্রমিক নিয়ে জটিলতায় পড়েননি। গত বছর নেদারল্যান্ডসে একটি কোম্পানি গঠনের মাধ্যমে উদ্যোগটির নির্বাহীদের গোপন বোনাস দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে প্রকাশিত এক খবর অস্বীকার করেন তিনি। উল্লেখ্য, গোনের সমন্বিত বেতন তাকে ফ্রান্সের অন্যতম সর্বোচ্চ পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী এবং জাপানে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিকপ্রাপ্ত বিদেশী নির্বাহীদের একজনে পরিণত করেছে।
কিন্তু অবশেষে আর্থিক অসদাচরণের কারণেই গ্রেফতার হতে হলো তাকে। এক সংবাদ সম্মেলনে নিশানের প্রধান নির্বাহী হিরোতো সাইকাওয়া বলেন, চাঞ্চল্যকর রিপোর্টে গোনের দীর্ঘ দিন আর্থিক অসদাচরণের বিষয়টি উঠে এসেছে। এ ছাড়া তিনি নিজের পারিশ্রমিকের পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট দিচ্ছিলেন না এবং কোম্পানির সম্পদেরও অপব্যবহার করেছেন।
গোনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করার অভিযোগ তুলেছেন সাইকাওয়া। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, কর্তৃত্বের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তির হাতে অতিরিক্ত ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছিল। আমার মতে, গোন যুগে এটা একটা অন্ধকার দিক, যা বহু দিন ধরে টিকে ছিল।
জাপানের সরকারি কৌঁসুলিরা জানিয়েছেন, পাঁচ বছর ধরে প্রায় চার কোটি ৪৫ লাখ ডলার (প্রায় ৫০০ কোটি ইয়েন) আয় কম দেখিয়ে আসার অভিযোগে গোনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতারের পর নিশানকে পুনরুজ্জীবিত করার পেছনে ভূমিকার জন্য গাড়ি শিল্পে, বিশেষত জাপানে অসাধারণ খ্যাতি অর্জন করা ৬৪ বছর বয়সী গোন খলনায়কে পরিণত হয়েছেন। একদা ‘মিস্টার ফিক্স ইট’ খেতাব পাওয়া গোনকে ‘লোভী’ বলে উল্লেখ করা হচ্ছে জাপানের মিডিয়ায়। কোম্পানি কর্মীদের উদ্ধৃতি দিয়ে ইয়োমিউরি শিম্বুন নামে জাপানের একটি সংবাদপত্র জানায়, গোন সঠিক কথা বলে এলেও শেষ পর্যন্ত বিষয়টি আসলে অর্থের।
তবে কত দিন নিশান চেয়ারম্যানকে গ্রেফতার করে রাখা হবে বা কৌঁসুলিরা কবে নাগাদ তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের ঘোষণা দেবেন, বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়। গোনের গ্রেফতার খবরের পর পুরো গাড়িশিল্পই বড় ধাক্কা খেয়েছে। টোকিওর বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে।
২১ নভেম্বর নিশান ও মিতসুবিশির শেয়ারদরে ব্যাপক পতন দেখা গেছে। টোকিওর বাজারে নিশানের শেয়ারদর চার শতাংশের বেশি ও মিতসুবিশির শেয়ারদর সাত শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। অন্য দিকে প্যারিসের বাজারে আট শতাংশ শেয়ারদর হারিয়েছে রেনো।
নিশানের পাশাপাশি মিতসুবিশিও এরই মধ্যে চেয়ারম্যান হিসেবে গোনকে অপসারণের প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া রেনোর ব্যবস্থাপনা পরিষদও গোনের ভবিষ্যৎ নিয়ে বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।


আরো সংবাদ



premium cement