সাতক্ষীরায় করোনা বৃদ্ধির মূল কারণ সীমান্ত : কঠোর বিধিনিষেধ জারি

সাতক্ষীরায় করোনা আক্রান্তের মূল কারণ সীমান্ত দিয়ে ভারত ফেরত নাগরিকের আগমন এবং ভারতীয়দের প্রবেশ। এজন্য সীমান্ত এলাকায় বাড়ানো হয়েছে বিজিবির নজরদারি। বিজিবিকেও বিশেষ ক্ষমতা দেয়ার জন্য ইতোমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির সর্বশেষ অবস্থা অবহিতকরণে গতকাল মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল তার সম্মেলন কক্ষে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
জেলা প্রশাসক বলেন, সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে করোনা ইউনিট ঘোষণা করা হয়েছে। আরো একটি ইউনিট বাড়ানো হবে। শুধু সীমান্তে নজরদারি নয়, করোনা প্রতিরোধে সীমান্তের প্রতিটি গ্রামে একটি শক্তিশালী কমিটিও গঠন করা হবে। এ ছাড়া স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপরও কঠোর আইন প্রয়োগ করা হবে। মাস্ক ব্যবহার ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত কল্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে রোগীর দর্শনার্থীদের প্রতিও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে।
করোনা ও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের এ দুর্যোগের সময়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল।
মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে সাতক্ষীরা সিভিল সার্জন ডা: হুসাইন শাফায়াত বলেন, সাতক্ষীরা সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় ভারতীয় নাগরিক এবং ভারত ফেরত বাংলাদেশী নাগরিকদের যাতায়াতের কারণে দিনদিন করোনার হটস্পট হয়ে উঠেছে। এজন্য সাতক্ষীরা সীমান্তের চোরাপথ দিয়ে অবৈধ লোকজনের প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী উপজেলা সাতক্ষীরা সদর, কলারোয়া, কালিগঞ্জ, দেবহাটা এবং শ্যামনগরের কৈখালি ইউনিয়ন সংলগ্ন সীমান্ত পাহারায় স্থানীয়ভাবে প্রতিরক্ষা কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটিতে থাকছেন উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, বিজিবি প্রতিনিধি এবং স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানরা। প্রতিরক্ষা কমিটি সীমান্তের চোরাচালানি, মানুষ পাচারকারি এবং অবৈধ যাতায়াতকারীদের চিহ্নিত করবে। একই সাথে তাদের বাড়িঘর এবং চলাফেরার ওপর কড়া নজরদারি রাখা হবে। এ ছাড়া সীমান্ত গলিয়ে লোকজনের অবৈধ পারাপার রোধ করতে বিজিবি মাঠে রয়েছে।
তিনি জানান, ভোমরা বন্দর দিয়ে প্রতিদিন আসা ৩০০ পণ্যবাহী গাড়ির পাঁচ শতাধিক চালক ও হেলপার যাতে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াতে না পারে সে ব্যাপারেও বাধানিষেধ জারি করা হয়েছে। এ দিকে করোনা সংক্রমণ রোধে প্রত্যেককে মাস্ক ব্যবহার করে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই নির্দেশ লঙ্ঘন করলে ভ্রাম্যমাণ আদালত তাকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করতে পারবে। বর্তমান করোনা সংক্রমণের হার কতটা তা নিশ্চিত করে আগামী ৩ জুনের পর থেকে সাতক্ষীরা জেলায় লকডাউনের সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
সিভিল সার্জন ডা: হুসাইন শাফায়াত জানান, গত ২২ মের পর থেকে সাতক্ষীরায় করোনা সংক্রামণ বৃদ্ধি পেয়েছে। ২৩ মে করোনা সংক্রমণের হার ছিল ৩৮ শতাংশ। পরের দিন ২৪ মে এই হার বেড়ে দাঁড়ায় ৪১ শতাংশে। ২৫ মে আবার কমে দাঁড়ায় ৪০ শতাংশে। ২৬ মে সংক্রমণের হার দাঁড়ায় ৪৬ শতাংশে। ২৭ মে শূন্য থাকার পরে ২৮ মে সংক্রমণের হার দাঁড়ায় ৪৩ শতাংশে। আর ২৯ মে সংক্রমণের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৩৬ শতাংশে। ৩০ মে ৯১ জনের টেস্টের বিপরীতে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ জন। এ দিকে ২৩ মে করোনায় একজন মারা গিয়েছিলেন। বেশ কয়েক দিন বিরতির পরে রোববার রাতে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে রহিমা খাতুন নামের একজন বয়স্ক নারী মারা গেছেন। এ নিয়ে জেলায় করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেলেন ৪৭ জন। আর উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ২০৯ জন। এ ছাড়া জেলায় ৯ হাজার ১১১ জনের করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ১ হাজার ৫৮৪ জন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মমতাজ আহমেদ বাপী, সাবেক সভাপতি আবু আহমেদ, সাবেক সভাপতি আবুল কালাম আজাদ, সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামান প্রমুখ।