২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনায় দরকার বিশেষ তহবিল ও সমন্বিত কৌশল : টিআইবি

-

করোনাভাইরাস-উদ্ভূত মহাসঙ্কট মোকাবেলায় স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি জাতীয় কৌশল প্রণয়ন, জিডিপির অন্তত ১০ শতাংশের সমপরিমাণ বিশেষ তহবিল গঠন এবং এই কৌশল বাস্তবায়ন ও তহবিল ব্যবহারে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে বলা হয়, করোনা বা কোভিড-১৯-এর ঝুঁকি এবং এর বহুমুখী প্রভাব কোনো তাৎক্ষণিক সমাধানযোগ্য সমস্যা নয়, বরং এই জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় এখনই স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনাসহ একটি সমন্বিত জাতীয় কৌশল প্রণয়ন অপরিহার্য। একই সাথে অভূতপূর্ব এই দুর্যোগ মোকাবেলায় সব ধরনের আর্থিক লেনদেনসহ প্রতিটি পর্যায়ে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে টিআইবি।
টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বিবৃতিতে বলেন, ‘হোম-কোয়ারেন্টিনে দেশবাসীকে পাঠিয়ে নিতান্তই অপ্রতুল ও বিক্ষিপ্ত কিছু প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে হাতগুটিয়ে বসে থাকার সময় নেই। এখনই সংশ্লিষ্ট দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনা সংবলিত জাতীয় কৌশল চূড়ান্ত করতে হবে এবং একই সাথে তা বাস্তবায়নের জন্য জিডিপির অন্তত ১০ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ জোগানের পাশাপাশি বহুমুখী উদ্যোগ চালিয়ে যেতে হবে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ চিহ্নিত করে চিকিৎসার সক্ষমতা বাড়াতে হবে এবং সারা দেশে তা ছড়িয়ে দিতে হবে। চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে ও তাদের অমূল্য অবদানের উপযুক্ত সম্মান দিতে হবে।
রফতানি সংশ্লিষ্ট খাতের শ্রমিক ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য যে উদ্যোগ প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন তাকে সাধুবাদ জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘কিভাবে এর বাস্তবায়ন হবে, বরাদ্দকৃত অর্থ কোন প্রক্রিয়ায় শ্রমিকদের হাতে যাবে এবং এ ক্ষেত্রে কিভাবে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হবে, তার সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া এখনই নির্ধারণ করতে হবে। এই সহায়তার আওতা দেশের হতদরিদ্রদের জন্য সমভাবে সম্প্রসারিত করতে হবে। একইভাবে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী যেমনÑ স্বল্প বেতনের কর্মজীবী মানুষ, দিনমজুর, শ্রমিক, কৃষক, রিকশাচালক, গৃহকর্মী, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীÑ যাদের অনেকেই ইতোমধ্যে বেকার হয়ে পড়েছেন বা হবেন তাদেরকেও এর আওতায় আনতে হবে।’
নির্বাহী পরিচালক বলেন, সঙ্কট চলাকালীন খাদ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর সরবরাহ-লাইন প্রাধান্যের সাথে সচল রাখতে হবে, তা না হলে কোভিড-১৯-এর পাশাপাশি কোয়ারেন্টিনই মানুষের ক্ষুধা ও মৃত্যুর কারণ হবে। সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে নিয়োজিত পুলিশের একাংশের বিভ্রান্ত ও অশোভন বলপ্রয়োগ সঙ্কট ঘনীভূত করছে, যা বন্ধ করতে হবে। তিনি বলেন, এ ধরনের দুর্যোগে সরকার ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বের পাশাপাশি ক্ষমতা বাড়বেÑ এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ক্ষমতার উৎস জনগণ। সীমা লঙ্ঘন করে ক্ষমতার অপব্যবহার করা আত্মঘাতী হয়, সরকারকে তা বিবেচনায় রাখতে হবে বলে মনে করে টিআইবি। ড. ইফতেখার বলেন, ‘নাগরিকের মৌলিক অধিকার, বিশেষ করে জীবন-জীবিকার অধিকারের পাশাপাশি বাকস্বাধীনতা এবং তথ্য ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা লঙ্ঘনের সব সম্ভাবনা প্রতিহত করা সরকারের দায়িত্ব।’ তিনি বলেন, প্রয়োজনে মেগা-প্রজেক্টগুলোর অর্থায়ন আনুপাতিক হারে কমিয়ে এনে এই খাতে অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের বরাদ্দের পাশাপাশি দেশের ধনিকশ্রেণীকে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে ড. ইফতেখার বলেন, জনগণের করের টাকায় ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের একাংশ বিভিন্ন সময়ে বহুমুখী সুবিধা আদায় করে সম্পদের বিকাশ করেছেন।
এই ক্রান্তিলগ্নে আমরা বিশ^াস করতে চাই তারা জনস্বার্থে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেবেন। ‘পাঁচ হাজার কোটি টাকার যে তহবিল প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন তার পুরোটাই জোগানোর দায়িত্ব কী এ দেশের মহা-ধনীজন অনায়াসে নিতে পারেন না?’ বলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক।
বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগে জড়িত বিদেশী ও বহুজাতিক কোম্পানি, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ, যারা বাংলাদেশের উন্নয়ন ও আর্থসামাজিক স্থিতিশীলতায় আগ্রহী, অংশীদার এবং অনেকে লাভবান, তাদেরকেও নিজেদের স্বার্থে এই বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্রিয়ভাবে অবদান রাখার আহ্বান জানায় টিআইবি।
ড. জামান বলেন, ‘এই সঙ্কটকে পুঁজি করে যেন কোনো ধরনের দুর্নীতি না হয় এবং কেউ যেন অন্যায্য মুনাফা করতে না পারেন, সে ব্যাপারে কঠোর নজরদারি নিশ্চিত করতে হবে। অন্য দিকে সরকারি প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত তথ্যের ব্যাপারে আস্থাহীনতার সুযোগে গুজব ছড়াচ্ছে, যা জনমনে আতঙ্ক আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে। সংক্রমণ, প্রাণহানি, চিকিৎসা প্রদান এবং সুস্থ হওয়ার সংখ্যাসহ প্রতিরোধ ও প্রতিকারমূলক সব কার্যক্রমের তথ্য কোনো প্রকার রাখঢাক না করে প্রকাশ করাটা জরুরি। তাতে জনগণ অধিকতর সতর্ক হওয়ার সুযোগ পাবেন। এতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ওপর জনগণের আস্থা বাড়বে।’

 


আরো সংবাদ



premium cement