০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শিশুদের দেশের প্রকৃত ইতিহাস শেখানোর ওপর প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা - ফাইল ফটো

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিশুদের দেশের প্রকৃত ইতিহাস শেখানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন, যাতে কোনো স্বার্থান্বেষী (হায়েনা) গোষ্ঠী বাঙালির অর্জনগুলো আবারো ছিনিয়ে নিতে না পারে।

তিনি বলেন, ‘এ জন্য দেশবাসীকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ শুক্রবার বিকেলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০২তম জন্মবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনায় সভাপতির ভাষণে একথা বলেন।

তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ কমপ্লেক্সে অনুষ্ঠিত এই আলোচনা সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েদের ইতিহাসটা শিখাতে হবে। তিনি বলেন, ২১ ফ্রেব্রুয়ারি আমাদের ভাষা দিবস, বাংলা ভাষার জন্য এদেশের মানুষ বুকের রক্ত দিয়ে গেছে। যে দিবসটা এখন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এটা কিন্তু প্রজন্মের পর প্রজন্মের সব শিশুদের জানতে হবে এবং শিখাতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস এবং ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস। এই বিজয় এবং স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে যে আত্মত্যাগ সেই আত্মত্যাগ সম্পর্কেও সবাইকে জানতে হবে। তাহলেই তাদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত হবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ১৭ মার্চ এবং জাতীয় শিশু দিবস সহ প্রত্যেকটি জাতীয় দিবস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে দীক্ষা দেয়ার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি বলবো আমাদের পক্ষ থেকেও উদ্যোগ নিতে হবে ছেলে-মেয়ে সহ সবাই যেন প্রজন্মের পর প্রজন্ম এই সত্যগুলো জানতে পারে। কারণ ২১টি বছরতো সবকিছুই নিষিদ্ধ ছিল। কিন্তু সত্যকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। আজকে সেটাই প্রমাণ হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আবার যেন কোনো হায়েনার দল বাঙালির অর্জনগুলোকে কেড়ে নিতে না পারে। তার জন্য দেশবাসীকে সাথে নিয়ে উন্নয়নের এই গতিধারাটা অব্যাহত রাখতে হবে। আর এই উন্নয়নের প্রত্যেকটি ধারার সঙ্গে সাধারণ মানুষকে সম্পৃক্ত করেই তাদের জন্য কাজ করে যেতে হবে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শাজাহান খান এমপি, জাহাঙ্গীর কবির নানক ও আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, দলের কেন্দ্রিয় ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলি আলোচনা সভায় বক্তৃতা করেন।

দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা আজম এমপি, গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলী খানও বক্তৃতা করেন এবং গণভবন থেকে দলের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের যে দারিদ্রের হার ছিল ৪০ ভাগেরও ওপরে তাকে আমরা এখন ২০ ভাগে নামিয়ে এনেছি। সেনসাস রিপোর্ট বের হলে এই সংখ্যা আরো কমে আসবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন।

তার সরকার জনগণের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সমর্থ হওয়ার পরপরই পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিয়েছে তাই আজকের দিনে সকলের কাছেই তিনি নিজ পরিমণ্ডলে কিছু না কিছু উৎপাদন করার আহবান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই বার্তাটা শুধু আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের কাছেই নয়, আওয়ামী লীগের মাধ্যমে সমগ্র দেশের কাছে। দেশের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। যার যেখানে যতটুকু সুযোগ আছে এবং যে যেখানে যতটুকু পারেন উৎপাদন করবেন। অর্থাৎ কারো কাছে ভিক্ষা চেয়ে বাংলাদেশের মানুষ চলবে না, কারণ জাতির পিতা বলেছিলেন ‘ভিক্ষুক জাতির ইজ্জত থাকে না।’

তিনি বলেন, “আমাদের যে মাটি আছে এবং মানুষ আছে তাই দিয়েই আমরা নিজেদের দেশকে গড়ে তুলবো’- এটাই ছিল জাতির পিতার যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশ গড়ে তোলার সময়কার অঙ্গীকার। আর তাই ’৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে মাত্র দুই বছরের মধ্যেই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে আমরা দেখিয়েছি আমাদের মাটি অত্যন্ত উর্বর এবং আমরা চেষ্টা করলেই পারি। কিন্তু সেটাও আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।’’

সরকার প্রধান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘গৃহহীনকে ঘর করে দেয়ার পদক্ষেপ হিসেবে ’৯৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ঘর বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। আরো দেড় লাখ ঘর তৈরির পদক্ষেপের অংশ হিসেবে ৫০ হাজার ঘর তৈরি করা হচ্ছে। এ জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্ট ফান্ডে পাঁচ কোটি টাকা দিয়ে একটি ফান্ড করে দেয়া হয়েছে। সেখানে শিল্পপতি, ব্যবসায়ী এবং ব্যাংক মালিকরা অনেকে অনুদান দিয়েছেন- যেখান থেকে দুই কাঠা জমি সহ বিনে পয়সায় ঘর করে দেয়া হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তিনি আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহবান জানান।

তিনি বলেন, প্রত্যেকের এলাকাতেই এ ধরণের ঘর তৈরি হচ্ছে। এই করোনাভাইরাসের সময় যেমন প্রণোদনা দিয়েছি পাশাপাশি এই ঘরগুলো নির্মাণ কাজে যারা সম্পৃক্ত সেখানেও একটা আর্থিক স্বচ্ছলতা মানুষ পেয়েছে। কাজেই সেখানেও আপনাদের কিন্তু একটা দায়িত্ব রয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘এদেশের প্রকৃতি-পরিবেশ রক্ষা এবং গৃহহীনদের-দরিদ্র মানুষের পাশে থাকার জন্যও আপনাদের স্ব স্ব অবস্থানে থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে সবসময় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর বিষয়টা আপনাদের সবসময় মাথায় রাখতে হবে।’

মাঠ পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক করে দিয়ে জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার পাশাপাশি শিক্ষা সম্প্রসারণে তার সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা যেমনটি চেয়েছিলেন তেমনটি করার জন্যই আমরা একে একে সব পদক্ষেপ নিয়েছি।’

তিনি এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা সকলকে পুনরায় স্মরণ করিয়ে দিয়ে করোনাভাইরাস দূর না হওয়া পর্যন্ত তা অবশ্যই মেনে চলার আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন।

সূত্র : বাসস


আরো সংবাদ



premium cement