০১ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১, ২১ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ইরানি জবাব নিয়ে ভুল হিসাব করেছিল ইসরাইল!

ইরানি জবাব নিয়ে ভুল হিসাব করেছিল ইসরাইল! - ফাইল ছবি

দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে ‌১ এপ্রিলের হামলার ইরানের জবাব নিয়ে ইসরাইলি কর্মকর্তারা মারাত্মক ভুল হিসাব করেছিল। এরান যে ওই হামলার জবাবে ইসরাইলের দিতে শত শত ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাবে, তারা তা ভাবতেই পারেনি। নিউ ইয়র্ক টাইমসে বুধবার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।

পত্রিকাটিতে বলা হয়, 'ইসরাইলিরা খুবই বাজে হিসাব করেছিল। তারা মনে করেছিল যে ইরান তেমনভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে না।' ইরানি হামলার পর উচ্চ পর্যায়ের আলোচনায় জড়িত আমেরিকান কর্মকর্তারা এই তথ্য দিয়েছেন।

সিরিয়ার রাজধানীতে ওই হামলায় নিহতদের মধ্যে ছিলেন ইরানের দুই শীর্ষ জেনারেল।

নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন কর্মকর্তারা এই কারণে ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন যে তাদেরকে দামেস্কের হামলার মাত্র কয়েক মিনিট আগে অবগত করা হয়েছিল। এমনকি এর তাৎপর্য সম্পর্কেও তাদেরকে কিছু বলা হয়নি। তাদেরকে 'নিম্ন পর্যায়ের তথ্যের' মাধ্যমে বার্তা দেয়া হয়েছিল।

হামলার দু'দিন পর মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড জে অস্টিন ফোন করেন ইসরাইলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টকে। তিনি সরাসরি অভিযোগ করেন, এই হামলার ফলে এই অঞ্চলে মার্কিন বাহিনী ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যাবে এবং প্রতিরক্ষা জোরদার করার জন্য সময় রয়েছে খুবই কম।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, এই পর্যায়ে মধ্যস্ততাকারীদের মাধ্যমে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আকস্মিক কূটনীতি শুরু হয়। এর ফলে ইরান তাদেরকে আশ্বাস দেন যে আঞ্চলিক যুদ্ধ শুরু হয়, এমন কোনো জবাব ইরান দেবে না।

দুই ইসরাইলি কর্মকর্তা নিউ ইয়র্ক টাইমসকে বলেন, দামেস্কে হামলার পরিকল্পনা শুরু হয় দুই মাস আগে। আর ইসরাইলের যুদ্ধ মন্ত্রিসভা তা অনুমোদন করে ২২ মার্চ।

পত্রিকাটি জানায়, অভ্যন্তরীণ রেকর্ডপত্রে দেখা গেছে, ইরান কী ধরনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারে, তা নিয়ে ইসরাইলিরা বিশ্লেষণ করেছিল। কিন্তু তার কোনোটিতেই ধারণা করা হয়নি যে তেহরান ৩০০ ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে ইসরাইলে হামলা করতে পারে। এসব প্রজেক্টাইলের বেশিভাগই যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জর্ডান এবং ইসরাইলি বিমান প্রতিরক্ষা বাহিনী আকাশেই ধ্বংস করে দেয়। অল্প কয়েকটি রকেট ইসরাইলে আঘাত হানে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরাইলি গোয়েন্দারা প্রাথমিকভাবে অনুমান করেছিলেন যে ইরান সর্বোচ্চ ১০টি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলে নিক্ষেপ করবে। কিন্তু ইরানের ৬০ থেকে ৭০টি ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ছিল নাটকীয় ভুল হিসাব।

হামলার দিন সন্ধ্যায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সুইস রাষ্ট্রদূতকে তলব করে ওয়াশিংটনকে তাদের ক্রোধের কথা জানায় এবং বলে যে এসব ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দায়ী।

আর ওমান, তুরস্ক এবং সুইজারল্যান্ডের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র পরিষ্কারভাবে ইরানকে জানায় যে ওই হামলায় তারা জড়িত ছিল না এবং তারা যুদ্ধ চায় না।

ইরানও কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে জানায়, তারাও ইসরাইল কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে যুদ্ধ চায় না।

পত্রিকাটিতে বলা হয়, মাস্কাটে ৭ এপ্রিল ইরান ও ওমানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা হয়। এতে ইরান বার্তা দেয় যে তাদের জবাবি হামলা অপরিহার্য। তবে আঞ্চলিক যুদ্ধ এড়ানোর জন্য তারা সংযত জবাব দেবে।

এই পর্যায়ে মার্কিন প্রেসিডেন্টি জো বাইডেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন, জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ চালর্স কিউ ব্রাউন জুনিয়রসহ মার্কিন কর্মকর্তারা ইসরাইল, চীন, ভারত, ইরাক এবং সেইসাথে ন্যাটো মিত্র ও অন্যদের সাথে ব্যাপক যোগাযোগ করে।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, ওয়াশিংটন বুঝতে পারে যে তারা হামলা থেকে ইরানকে সংযত রাখতে পারবে না। তবে আশা করেন যে হামলার আকার হবে সীমিত।

এক ইসরাইলি কর্মকর্তা বলেন, অবশ্য ইরান জানিয়ে দেয়, তাদের হামলায় ইসরাইল জবাব দিতে পারবে না। তারা এমনভাবে পরিকল্পনা করে, যাতে কয়েকটি অন্তত ইসরাইলে আঘাত হানে।

ব্লিনকেন তকন ইসরাইলি নেতাদের আশ্বাস দেন যে ইসরাইলকে রক্ষায় যুক্তরাষ্ট্র সহায়তা করবে। একইসাথে পর্যাপ্ত বিবেচনা না করে দ্রুত পাল্টা হামলা না চালাতে ইসরাইলকে অনুরোধ করে।

এদিকে জর্ডান এবং অন্যান্য দেশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলি গোয়েন্দারা ইরানি পরিকল্পনার চিত্র পেয়ে যায়। তারা জানতে পারে যে তেহরান সামরিক স্থাপনায় হামলা চালাবে। তারা বেসামরিক কোনো স্থানকে টার্গেট করবে না।

এই তথ্য পেয়ে ইরান কোথায় কোথায় হামলা করতে পারে, সে হিসাব কষতে থাকে ইসরাইল। তারা কয়েকটি বিমান ঘাঁটি থেকে লোকজন এবং বিমান অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেয়।

ইরানি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, হামলার সময় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং হামলার তদারকির দায়িত্বে থাকা রেভ্যুলশনারি গার্ড কোর ওমানি সরকারের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখতে থঅকে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে বার্তা বিনিময় হতে থাকে।

রোববার সকালে হামলা শেষ হলে ইরান আবারো সুইস রাষ্ট্রদূতকে তলব করে। এবার গার্ডদের একটি ঘাঁটিতে তাকে ডাকা হয়। তাকে যুক্তরাষ্ট্রকে এই বার্তা দিতে বলা হয়, ইসরাইল যদি প্রতিশোধ নিতে চায়, তাতে যুক্তরাষ্ট্র যেন জড়িত না হয়। যদি করে, তবে আরো কঠোরভাবে আঘাত হানা হবে। আর এবার কোনো ধরনের হুঁশিয়ারি না দিয়েই তা করা হবে।

প্রতিবেদেন বলা হয়, মার্কিন কর্মকর্তারা এখন ইসরাইলি নেতাদের এটা বোঝাতে চাইছেন যে আর কোনো সামরিক পদক্ষেপ না নেয়ার মধ্যেই বিজয় হিসেবে সফল প্রতিরক্ষা রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement