৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ইরান-ইসরাইলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নতুন মোড়, এখন যা হবে

- ছবি : সংগৃহীত

ইসরাইলের ওপর রোববার ভোরে ইরানের নজিরবিহীন ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর সবার দৃষ্টি এখন ইসরাইলের দিকে। তারা কি আরো সামরিক পদক্ষেপ নেবে, যখন যুক্তরাষ্ট্র কূটনৈতির মাধ্যমে আঞ্চলিক উত্তেজনা কমানোর চেষ্টা করছে?

ইরান বলেছে, চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে তাদের কূটনৈতিক ভবনে হামলার পাল্টা জবাব হিসেবে তারা ইসরাইলে আক্রমণ করেছে।

দামেস্কে যে হামলায় ইরানের আধা-সামরিক রেভলুশনারি গার্ড বাহিনীর দু’জন জেনেরাল নিহত হন, সেটা ইসরাইলি বিমান থেকে করা হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়।

ইসরাইল বলেছে, তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের সাহায্যে ইরানের নিক্ষেপ করা তিন শতাধিক ড্রোন এবং ক্ষেপণাস্ত্রের প্রায় সবগুলোকেই ভূপাতিত করেছে।

তারা আরো বলছে, একটি ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইলের একটি বিমান ঘাঁটিতে আঘাত করে, তবে তাতে খুব বেশি ক্ষতি হয়নি।

তারপরও রেভলুশনারি গার্ড বাহিনীর প্রধান তাদের অভিযানকে সফল বলে বর্ণনা করেন।

গবেষণা কেন্দ্র ইউএস ইন্সটিটিউট অফ পিস-এর মিডল ইস্ট অ্যান্ড নর্থ আফ্রিকা স্টাডিজ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট মোনা ইয়াকুবিয়ান বলেন, ইরান দামেস্কে হামলার প্রতিশোধ নেয়া এবং ইসরাইলকে আরো হামলার জন্য উস্কে দেয়ার মধ্যে ভারসাম্য রাখতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তে দু’পক্ষেরই (ইরান এবং ইসরাইল) সম্ভব বিজয় দাবি করা এবং খাদের কিনারা থেকে সরে আসা। বিশেষ করে যেহেতু ইসরাইলে কোনো বেসামরিক লোক মারা যায়নি।’

আরবদের সাথে জোট
ইসরাইলে কট্টরপন্থীরা পাল্টা জবাব দেয়ার জন্য চাপ দিচ্ছে, কিন্তু অন্যান্যরা সংযত হওয়ার পক্ষে মতামত দিয়েছে। তারা বলছে, ইসরাইলের উচিত আরব দেশগুলোর সাথে তার সম্পর্ক উন্নয়নের দিকে মনোযোগ দেয়া।

ইসরাইলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রীসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ বলেন, ‘আমরা একটা আঞ্চলিক জোট গঠন করব এবং ইরানের কাছ থেকে একটি মূল্য আদায় করব, যার সময় এবং পদ্ধতি আমাদের সুবিধা অনুযায়ী হবে।’

বিশ্লেষণকারীরা বলছেন, ইরান একটি বার্তা দিয়েছে যে প্রয়োজনে তারা সঙ্ঘাত আরো বিস্তৃত করতে প্রস্তুত এবং ইসরাইলের সাথে ‘ছায়া যুদ্ধের’ নিয়মাবলী তারা বদলে দিয়েছে।

সুইডিশ ডিফেন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের স্ট্রাটেজিক উপদেষ্টা ম্যাগনুস র‍্যানস্টরপ বলেন, ‘এটা ছিল একটা সাবধানতা বার্তা, যার সারমর্ম ছিল ইসরাইল যদি নিয়ম ভঙ্গ করে তাহলে তার পরিণতি থাকবে।’

গাজার যুদ্ধ যে গোটা অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করতে পারে, ইরানের আক্রমণ সেই শঙ্কা আবার সৃষ্টি করেছে।

কিন্তু ইরান বলছে যে তারা সমগ্র অঞ্চলে পুরদমে যুদ্ধ চাইছে না।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির আব্দোল্লাহিয়ান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) এক বার্তায় বলেন, ‘আক্রান্ত না হলে এই সময়ে ইরানের আত্মরক্ষামূলক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।’

ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি
ইরান জোর দিয়ে বলছে, তারা ইসরাইলের সেই সব স্থাপনা লক্ষ্য করে আক্রমণ করেছে যেগুলো দামেস্ক হামলায় জড়িত ছিল। কোনো বেসামরিক বা অর্থনৈতিক এলাকা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়নির।

গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে ইসরাইল অভিযান শুরু করার পর থেকে ইরান-সমর্থিত গোষ্ঠীগুলো সামরিক কার্যকলাপে জড়িত ছিল, আর তেহরান দূরত্ব বজায় রাখছিল।

লেবাননের হিজবুল্লাহ ইসরাইলের উত্তরাঞ্চলে রকেট নিক্ষেপ করে। ইয়েমেনের হাউছিরা লোহিত সাগরে পাশ্চাত্যের বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ করে। ইরাকে ইরান-সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর একটি জোট ইরাক এবং সিরিয়ায় মার্কিন সামরিক স্থাপনায় হামলা চালায়।

এখন ইরান তার সহযোগী গোষ্ঠীগুলোর ওপর নির্ভর না করে ‘ঝুঁকির মাত্রা বৃদ্ধি’ করতে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন কারনেজি মিডল ইস্ট সেন্টারের পরিচালক মাহা ইয়াহিয়া।

কিন্তু তারপরও ইরান শুধু অল্প কিছুটা ঝুঁকি নিয়েছে।

মাহা ইয়াহিয়া বলেন, ‘তারা যথেষ্ট সতর্কবাণী দিয়েছে যে এই আক্রমণটি আসছে এবং আমার মনে হয় তারা জানত যে তাদের ড্রোন আর ক্ষেপণাস্ত্র ইসরাইল পৌঁছানোর আগেই ভূপাতিত করা হবে।’

তিনি আরো বলেন, গাজায় তার যুদ্ধের ধরন নিয়ে ইসরাইল সম্প্রতি যে চাপের মুখে ছিল, সেটা এখন বদলে আঞ্চলিক উত্তেজনা কমানোর দিকে চলে গেছে।

ইয়াকুবিয়ান বলেন, নতুন করে সঙ্ঘাত বিস্তার রোধ করতে ওয়াশিংটনের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

ইসরাইলি গবেষণা কেন্দ্র ইসরাইল-ইউএস রিসার্চ প্রোগ্রাম-এর প্রধান এলদাদ শাভিট বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রসহ ইসরাইলের মিত্ররা চায় না যে ইসরাইল আর কোনো সামরিক পদক্ষেপ নিক।

হোয়াইট হাউস ন্যাশনাল সিকিউরিটি মুখপাত্র জন কারবি টেলিভিশন চ্যানেল এনবিসিকে বলেন, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন চান না যে আঞ্চলিক সঙ্ঘাত বিস্তৃত হোক বা ইরানের সাথে যুদ্ধ বাধুক।

তিনি বলেন, ‘তিনি ব্যক্তিগতভাবে কূটনৈতিক প্রচেষ্টার সাথে কাজ করছেন।’
সূত্র : ভয়েস অব আমেরিকা


আরো সংবাদ



premium cement