১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


ট্যাংকারে হামলার পেছনে ইরানের হাত রয়েছে : দাবী যুক্তরাষ্ট্রে

-

ওমান উপসাগরে দুটি তেলের ট্যাংকারে গতকাল যে হামলা চালানো হয়েছিল, তার পেছনে কি আসলে ইরানেরই হাত ছিল? যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে, তাদের কাছে এমন এক ভিডিও ফুটেজ আছে, যা প্রমাণ করে এটা ইরানের কাজ। তারা আরো দাবি করছে, এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ইরানের রেভ্যুলশনারি গার্ড ক্ষতিগ্রস্ত একটি তেলের ট্যাংকারের একপাশ থেকে একটি অবিস্ফোরিত মাইন বা বোমা সরিয়ে নিচ্ছে।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিযোগ একেবারে উড়িয়ে দিয়েছে ইরান।

মাত্র এক মাস আগে একই রকমের এক বিস্ফোরণে সংযুক্ত আরব আমিরাতের কাছে উপসাগরে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল আরও চারটি তেলের ট্যাংকার। সেবারও হামলার জন্য ইরানকে দায়ী করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর পক্ষে কোন প্রমাণ তারা দেখাতে পারেনি।

যুক্তরাষ্ট্র আর ইরানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে। তিনি ইরানের সঙ্গে করা পরমাণু চুক্তি থেকে বেরিয়ে গেছেন। নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন ইরানের বিরুদ্ধে। কোন দেশ যেন ইরান থেকে তেল কিনতে না পারে, সেজন্যেও নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় গতকাল দুটি তেলের ট্যাংকারে হামলার পর তেলের দাম চার শতাংশ বেড়ে গেছে।

যেখানে এই ঘটনাগুলো ঘটছে, সেটি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটি সমূদ্রপথ। বিশ্বে প্রতি বছর যত তেল রফতানি হয়, তার এক পঞ্চমাংশ যায় হরমুজ প্রণালী এবং সন্নিহিত উপসাগরীয় এলাকা দিয়ে। এখানে কোন ধরনের বিপত্তি ঘটলে, তেলের বাজারে বড় ধরনের অস্থিরতার আশংকা আছে।

কী ঘটেছিল ওমান উপসাগরে

যুক্তরাষ্ট্রের ভাষ্য অনুযায়ী ঐ অঞ্চলে মোতায়েন তাদের নৌবহরের কাছে দুটি বিপদ সংকেত বা এসওএস বার্তা আসে দুটি তেলের ট্যাংকার থেকে। দুটি ট্যাংকারেই বিস্ফোরণ ঘটেছিল এবং এর একটিতে আগুন ধরে গিয়েছিল। ঘটনার পর পর সেখানে ইরানের নৌ টহল বোটগুলোর তৎপরতা দেখা যায়। যুক্তরাষ্ট্র দাবি করছে এর মধ্যে একটি টহল বোট ক্ষতিগ্রস্ত একটি তেলের ট্যাংকারের পাশে গিয়ে অবিস্ফোরিত একটি মাইন সরিয়ে ফেলে। দুটি ট্যাংকারের নাবিকদেরই উদ্ধার করে কাছাকাছি থাকা অন্য জাহাজগুলো। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ওয়াশিংটনে এক সংবাদ সম্মেলনে এঘটনার জন্য সরাসরি ইরানকে দায়ী করেন।

ইরান কী বলছে

শুক্রবার এক বিবৃতিতে ইরান বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই দাবি একেবারেই ভিত্তিহীন। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভাদ জারিফ টুইট করে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র বিন্দুমাত্র প্রমাণ ছাড়াই এই অভিযোগ তুলছে। তারা কূটনীতিকে বানচাল করতে 'অন্তর্ঘাতমূলক' তৎপরতা চালাচ্ছে। বিবিসির নিরাপত্তা বিশ্লেষক ফ্র্যাংক গার্ডনার বলছেন, এবার যুক্তরাষ্ট্র যে প্রমাণ হাজির করেছে তাদের দাবির পক্ষে, সেটা হয়তো আগেরবারের চেয়ে জোরালো। এর আগের হামলার সময় তারা কিছু পারিপার্শ্বিক পরিস্থিতিতে প্রমাণ হিসেবে দেখিয়েছিল।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ করা ভিডিওতে যে টহল নৌযান দেখা যাচ্ছে, ইরানের বিপ্লবী বাহিনী সে ধরনের নৌযানই ব্যবহার করে। ইরান সাম্প্রতিক সময়ে উপসাগরীয় এলাকায় তাদের নৌবাহিনীর জায়গায় বিপ্লবী বাহিনীকেই বেশি মোতায়েন করছে।

এই বাহিনীর ছোট-বড় বহু ধরনের নৌকা এবং জাহাজ আছে যেগুলো দ্রুত চলাচল করতে পারে। মাইন, মিসাইল এবং টর্পেডোবাহী এসব ছোট নৌযান সনাক্ত করাও কঠিন। বিপ্লবী বাহিনী ঐ এলাকায় নিয়মিত মহড়া দেয়। গোপনে তৎপরতা চালায়।

তবে বৃহস্পতিবার দুই ট্যাংকারে হামলার জন্য ইরান দাবি করছে অন্য কোন পক্ষকে, যারা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে ইরানের সম্পর্কের ক্ষতি করতে চায়।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রকাশ করা ভিডিওটি আসল, নাকি নকল, তা নিয়ে তেহরানের সংশয় আছে। 


আরো সংবাদ



premium cement