মিসরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং সরকার সমর্থিত ব্যক্তিদের পিটিশনের উপর ভিত্তি করে মিসরের বর্তমান সেনা সমর্থিত স্বৈরশাসক আবদেল ফাতাহ আল-সিসি রাষ্ট্র ক্ষমতায় তার দ্বিতীয় মেয়াদের চাইতেও বেশি সময় ধরে থাকতে পারে বলে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
দেশটির একজন সিনিয়র রাজনৈতিক নেতা দি গার্ডিয়ানকে পিটিশনটির একটি আলোকচিত্র সরবরাহ করেন। ওই দলিল অনুযায়ী বলা যাচ্ছে যে, এটি ‘জনগণের চাহিদা’ নামে একটি কর্মসূচির অংশ এবং এটি সিসিকে তার দ্বিতীয় মেয়াদের অধিক সময় ধরে মিসরের রাষ্ট্রপতি হিসাবে মনোনীত করার জন্য সংবিধান সংশোধনের জন্য আহ্বান জানানোর একটি প্রক্রিয়া।
পিটিশনটিতে স্বাক্ষরকারীরা এতে তাদের ব্যক্তিগত তথ্য যেমন- জাতীয় পরিচয় নম্বর দেয় যাতে মিসরের সংবিধানের ১৪০ নং অনুচ্ছেদ সংশোধন করা যায়, এবং এতে পুনস্থাপিত হবে যে, রাষ্ট্রপতি দ্বিতীয়বার নির্বাচিত হয়েছিলেন সর্বমোট চার বছরের জন্য ‘আমাদের দাবী এটি সংশোধন করে ৩য় মেয়াদে বর্ধিত করা হোক’।
তবে এটা এখনো পরিষ্কার নয় যে, পিটিশনটি দেশটির কোন কোন অঞ্চল পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং কত সংখ্যক মানুষ এতে স্বাক্ষর করেছে। তথাপিও এর মাধ্যমে দেশটির সরকার তাদের পরিকল্পনার মূল ভিত্তিকে পরীক্ষা করে দেখছেন। ২০১৮ সালের মার্চের নির্বাচনের ৭ মাস পূর্বে দেশটির আইনসভার সদস্যরা এইরকম আরেকটি পিটিশনে স্বাক্ষর করা চালু করেছিলেন সিসিকে দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি করার জন্য।
অনেক চড়াই উৎরাইয়ের পর ২০১৩ সালের মার্চে লোক দেখানো নির্বাচনে ৯৭.৮ শতাংশ ভোট পেয়ে সিসি মিসরের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছিল তখন পাঁচজন বিরোধী প্রার্থীকে নির্বাচন করা থেকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সে সময় তার একমাত্র নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল তার একজন প্রকাশ্য সমর্থক মুসা মোস্তফা।
পিটিশনটির উদ্যোক্তারা তাদের ৬ মাসের প্রচারণার পর ঘোষণা করেছিলেন যে, তারা ১৩ মিলিয়নেরও অধিক স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন যাতে সিসি দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকতে পারেন। জানুয়ারিতে যখন দি গার্ডিয়ানের একজন সাংবাদিক পিটিশনটির প্রচারণা অফিস পরিদর্শনের জন্য যান তখন তিনি দেখতে পান পুরো অফিসে একটি স্বাক্ষরহীন পিটিশন নিয়ে একজন মাত্র কর্মী বসে রয়েছেন।
পিটিশনটির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ আসে যে, মিশরের নাগরিকদেরকে তাদের ক্ষতি করার হুমকি দেয়া হয় পিটিশনটিতে স্বাক্ষর করার জন্য। স্থানীয় একটি টেলিভিশন চ্যানেল দিনমজুরদেরকে পিটিশনটিতে স্বাক্ষর করার জন্য ঘুষ দেয়া হচ্ছে এরকম একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করে।
দি গার্ডিয়ান থেকে যখন পিটিশনটির উদ্যোক্তাদের সাথে যোগাযোগ করা হয় এবং জানতে চাওয়া হয় যে তারা কি পুনরায় পিটিশন স্বাক্ষর করার উদ্যোগ নিচ্ছে কিনা তখন তারা এ ব্যাপারে কোনো প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেনি বা পিটিশনটি পুনরায় চালু করার বিষয়েও কোনো উত্তর দেয়নি। রাষ্ট্রপ্রতির মূখপাত্র বাসাম রাডি এর সাথে এ ব্যপারে যোগাযোগ করা হলে তিনিও কোনো উত্তর দেননি।
২০১৩ সালের বিদ্রোহে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পিটিশনের উদ্যোগ নেয়া হয় (যাকে আরবী ভাষায় ‘ডকাত’ বলে অভিহিত করা হয়) যাতে করে সিসির পূর্বসূরী মোহাম্মদ মুরসীকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করা যায় এবং এ জন্য তারা প্রায় ২২ মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছিল।
বর্তমানে এই পিটিশনটি মাসখানেক ধরে স্বাক্ষর চলার পরে সিসি হয়তো সংবিধন সংশোধন করতে চাইবেন এ জন্য যে, যাতে করে তিনি দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষমতায় থাকতে পারেন এবং ক্ষমতায় থাকার নির্দিষ্ট মেয়াদের বিষয়টি সংবিধান থেকে বাদ দিতে পারেন।
মিসরের সংবিধান সংশোধন করার জন্য ভোটাভুটির প্রয়োজন হয় যাকে রেফারেন্ডাম বলে অভিহিত করা হয়। সাম্প্রতিক সময়ে দেশটির আইনসভাতে বর্তমান বিশেষত সরকার সমর্থিত মুসার বিরোধী দল এবং অন্য রাজনৈতিক দল সমূহকে একত্রিত করে শুধুমাত্র একটি একক রাজনৈতিক দলে পরিণত করা যায়।
দেশটির অবরুদ্ধ রাজনৈতিক দলগুলো আগামী জুন মাসে সিসির দ্বিতীয় মেয়াদে রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেয়ার পূর্বেই সংবিধান সংশোধনের এ উদ্যোগকে রুখে দিতে চায়। ‘আমরা এটাকে মেনে নিয়েছি এবং চিন্তায় আছি কিভাবে আমরা এর মোকাবেলা করবো।’- মার্চে সাবেক একজন রাষ্ট্রপতি প্রার্থী দি গার্ডিয়ানকে এমনটি জানান। সিসির বিজয়ের জন্য দূঃসহ অপেক্ষা সত্ত্বেও তিনি বলেন, ‘আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে সংবিধান সংশোধনের বিরোধীতা করে একটি বৃহৎ আন্দোলন হবে কিন্তু এত কিছুর পরও সিসি এটা করে ফেলবে।’
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা