১৬ মে ২০২৪, ০২ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫
`


ঢাকায় খামারিদের মিলনমেলা বসছে কাল

উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
রাজধানীর আগারগাঁওয়ে প্রাণিসম্পদ মেলার প্রস্তুতি পরিদর্শনে মন্ত্রী আব্দুর রহমান : নয়া দিগন্ত -


বগুড়ার তরুণ তৌহিদ পারভেজ পড়াশোনা করতে যান নিউজিল্যান্ডে। পড়ার ফাঁকে ঘুরে বেড়াতেন বনে বাদাড়ে। তুলতেন জীবজন্তুর ছবি। আন্তর্জাতিক নানা গণমাধ্যমে তার ছবি নিয়মিত ছাপা হয়। জিতেছেন উইকি লাভস আর্থ ২০২১ পুরস্কারও। দুগ্ধ খামারে খামারে ঘুরে বেড়ানোও তার আরেকটি শখ ছিল। বড় বড় বিদেশী গাভী দেখে বিস্মিত হতেন। দেশে ফিরে ২০১১ সালে সাতটি এঁড়ে বাছুর কিনে নিজেই একটি গরুর খামার দিয়ে বসেন। এখন প্রায় ১২ বিঘা জায়গাজুড়ে তার বগুড়া ভাণ্ডার ডেইরি অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফার্ম লিমিটেড। এর বাইরে ৩৫ বিঘা জমিতে ধান ও বিদেশী জাতের ঘাস চাষ করছেন। গাভী ছাড়াও খামারে মোটাতাজাকরণ করা কয়েক শ’ গরু লালন-পালন করা হচ্ছে।
আরেক যুবক মোহাম্মদ ইমরান হোসেন। বিবিএ করেছেন ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ২০০২ সালে পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে পৈতৃক ঢেউটিনের ব্যবসায় নিজেকে জড়ান। সেই ব্যবসায় মন টেকেনি। ২০০৮ সালে হাঁটেন নতুন পথে। রাজধানীর বছিলায় ১০ কাঠা জমিতে গড়ে ওঠা ইমরান হোসেনের ‘সাদেক অ্যাগ্রো’ এখন দুগ্ধশিল্পের এক অনন্য উদাহরণ। তার খামারে এখন পশুর সংখ্যা তিন হাজারেরও বেশি।
ইমরান হোসেন ও বিপ্লবের মতো হাজার হাজার শিক্ষিত তরুণ খামার করে হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা। শুধু ব্যবসা নয়, সময়ের প্রয়োজনে দেশের ক্ষুদ্র ও বড় খামারিদের এক ছাতার নিচে আনার প্রয়াসে তারা প্রতিষ্ঠা করেছেন বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিডিএফএ)। যে সংগঠনের সদস্য এখন ৫৫ হাজারেরও বেশি খামারি। সরকারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই খামারিরাই প্রাণিসম্পদ খাতকে করেছেন স্বয়ংসম্পূর্ণ। সংগঠনের উদ্যোগে জেলায় জেলায় প্রাণীমেলা, সুলভমূল্যে গোশত-দুধ বিক্রি, প্রশিক্ষণ, সভা-সেমিনার, খামারি উৎসবসহ নানা আয়োজন করে চলেছেন। গত কয়েক বছর ঢাকায় প্রাণিসম্পদ মেলার আয়োজন করছে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়, প্রাণিসম্পদ অধিদফতর, ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ পোলট্রি ইন্ডাস্ট্রিজ কাউন্সিল (বিপিআইসি)। প্রতি বছরের মতো এবারো রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পুরনো বাণিজ্যমেলা মাঠে বসছে দুই দিনের প্রাণিসম্পদ মেলা। বৃহস্পতিবার সকালে জমকালো এ মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এবারের আয়োজনের প্রতিপাদ্য ‘প্রাণিসম্পদে ভরবো দেশ, গড়বো স্মার্ট বাংলাদেশ’। মেলা বাস্তবায়ন করবে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এবং প্রাণিসম্পদ অধিদফতর। সহযোগিতায় থাকছে বিডিএফএ ও বিপিআইসিসি।

গতকাল মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে দেখা গেছে, পশু প্রদর্শনের জন্য তৈরি করা হচ্ছে স্টল। মেলার অন্যতম আকর্ষণ গরুর র‌্যাম্প শোর জন্য বানানো হয়েছে গ্যালারি। বিকেলে মেলার প্রস্তুতি ঘুরে দেখেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী মো: আব্দুর রহমান, মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহা: সেলিম উদ্দিন, অতিরিক্ত সচিব এ টি এম মোস্তফা কামাল, প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা: মোহাম্মদ রেয়াজুল হক।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো: ইমরান হোসেন বলেন, বিভিন্ন অঞ্চলের খামারি দেশসেরা পশুপাখি নিয়ে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ করতে মুখিয়ে আছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে খামারিরা তাদের কথা তুলে ধরবেন। এ মেলার মাধ্যমে দর্শনার্থীদের প্রাণিসম্পদের উন্নয়ন ও বিপণনে আগ্রহী করে তোলাই লক্ষ্য।
সিনিয়র সহসভাপতি আলী আজম শিবলী বলেন, সমৃদ্ধ এই খাত নানা কারণে এখন ধুঁকছে। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমরা নানা দাবি তুলে ধরব। গো-খাদ্যের দাম কমানো, পশুর জাত উন্নয়ন, বিদ্যুৎ বিলে ভর্তুকিসহ নানা রকম নীতিসহায়তা দিলে এক সময় বাংলাদেশ গোশত ও দুধ রফতানি করতে পারবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহা: সেলিম উদ্দিন বলেন, ব্যতিক্রমী এ মেলায় কয়েক হাজার খামারি তাদের সেরা গরু, ছাগল, গয়াল, মহিষ, ঘোড়া, ভেড়া, দুম্বা, পোষাপ্রাণী, পাখিসহ নানা পশু তুলবেন। মেলার মূল আকর্ষণ হিসেবে গরুর র‌্যাম্প শো অনুষ্ঠিত হবে। মেলায় ১৯টি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার দেয়া হবে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী মো: আব্দুর রহমান বলেন, এই মেলা প্রান্তিক খামারিদের জন্য একটি বড় সুযোগ। এখানে তারা পালন করা প্রতিটি গরু ভালো দামে দেশের স্বনামধন্য খামারিদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। এটি সব খামারির মিলনমেলায় পরিণত হবে। পাশাপাশি সবার মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপিত হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement