২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
দু’দিনের বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

দুর্ভোগে নিম্ন আয়ের মানুষ

-

সাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে মৌসুমি বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। গত ১৮ অক্টোবর ভোর ৫টা থেকে ১৯ অক্টোবর বিকেল পর্যন্ত দুই দিনের টানা বর্ষণে সাতক্ষীরা সদর, তালা, কলারোয়া, আশাশুনি, দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে শতাধিক পরিবার। ভেসে গেছে জমির ফসল, আমন ক্ষেত, মাছের ঘের ও পুকুর। টানা বৃষ্টিতে সাতক্ষীরার সদর উপজেলার ধুলিহর, ফিংড়ি, ব্রহ্মরাজপুর, লাবসা, বল্লী, ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নের রোপা আমন ক্ষেত পানিতে নিমজ্জিত হয়ে পড়েছে। শতাধিক মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
এছাড়া সাতক্ষীরা পৌরসভার নিম্ন অঞ্চলের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়িতে পানি উঠেছে। বৃষ্টির কারণে চরম দুর্ভোগে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। বিশেষ করে দৈনন্দিন উপার্জনের উপর নির্ভরশীল দরিদ্র পরিবারগুলো নিদারুণ কষ্টের মধ্যে পড়েছে।
সাতক্ষীরা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নাজমুল হোসেন জানান, শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বেতনা নদী নাব্যতা হারিয়ে এখন আমাদের মরণ ফাঁদে পড়েছি, নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় আমরা দীর্ঘ দিন পানিবন্দী হয়ে পড়েছি। তার ওপর আবার নিম্নচাপের ফলে বাড়ি ছেড়ে ভাড়া বাড়িতে উঠছি। গত দুই দিনের বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে সাতক্ষীরা পৌর এলাকার পুরাতন সাতক্ষীরা কুলিনপাড়া, বসতিপাড়া, কামালনগর, ইটাগাছা, খড়িবিলা, বদ্দিপুর কলোনি, শহরতলির বকচরা, কাশেমপুর, সরকারপাড়া, আমতলার মোড় এলাকা। পানি নিষ্কাশনের কোনো পথ না থাকায় বৃষ্টির পানি এসব এলাকার বাড়িঘরে উঠতে শুরু করেছে। সাতক্ষীরা শহরের মধ্য দিয়ে বয়ে যাওয়া প্রাণসায়ের খালও পানি টানতে পারছে না।
শহরতলির গোপীনাথপুর এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, গত প্রায় ২০-২২ দিন আগের বৃষ্টিতে পুরো গোপীনাথপুর এলাকার সব বাড়িঘরে পানি উঠেছিল। কয়েকদিন পর পানি একটু কমলেও গত দুই দিনের টানা বৃষ্টিতে ফের পানি মগ্ন হয়ে পড়েছে পুরো এলাকা। বাড়ির উঠান পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে ঘর থেকে বের হওয়া মুশকিল হয়ে পড়েছে। বাড়ি থেকে মেইন রাস্তায় যেতে হাঁটু সমান পানি।
ভ্যান চালক মনিরুল ইসলাম বলেন, রোজগার করতে না পারলে সংসার চলে না। গতকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে ভ্যান নিয়ে শহরে বের হলেও কেউ ভ্যানে উঠেনি। ফলে খালি হাতেই গতরাতে বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফিরেছি। আজো বৃষ্টি হচ্ছে। যাত্রীরা কেউ ভ্যানে উঠতে চায় না। সবাই ইজিবাইকে ওঠে। বৃষ্টির কারণে আমরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছি।
দিনমজুর শামসুর রহমান বলেন, প্রতিদিন সকালে সাতক্ষীরা শহরের পাকাপুলের মোড়ে গিয়ে কাজের জন্য বসে থাকি। সেখান থেকে কাজের চুক্তিতে বাসাবাড়ি বা ক্ষেত খামারে গিয়ে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। কিন্তু বৃষ্টির কারণে দুই দিন ধরে কেউ কাজে নিতে আসেনি। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়েছি আমরা।
এদিকে গত ২৭ জুলাই থেকে ২৯ জুলাই পর্যন্ত টানা ভারী বর্ষণে সাতক্ষীরা জেলা শহরসহ জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়। সে সময় গদাইবিল, ছাগলার বিল, শ্যালের বিল, বিনেরপোতার বিল, রাজনগরের বিল, মাছখোলার বিলসহ কমপক্ষে ১০টি বিলে পানিতে তালিয়ে যায়। এসব বিলের মাছের ঘের ভেসে গেছে। বেতনা নদী তীরবর্তী এই বিলগুলোর পানি নদীতে নিষ্কাশিত হতে পারছে না। এই পানি পৌরসভার দিকে এগিয়ে আসছে। অতিবৃষ্টিতে গ্রামাঞ্চলের সব পুকুর পানিতে তলিয়ে গেছে। বেরিয়ে গেছে শত শত টাকার মাছ। এছাড়া কাঁচা ঘরবাড়ি রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। সবজি ক্ষেতগুলো পানিতে টইটম্বুর করছে। এখন পর্যন্ত সেসব এলাকার পানি নিষ্কাশিত হয়নি। এসব এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগে দিন কাটাচ্ছিলেন। এর মধ্যেই আবারো টানা বর্ষণে দুর্ভোগ আরো দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক মো: নুরুল ইসলাম বলেন, এই বৃষ্টিতে ৭১০ হেক্টর আমনের ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া ১০২ হেক্টর শাকসবজির ক্ষতি হয়েছে। আবহাওয়া অফিসের তথ্য মতে পরশু দিন থেকে বৃষ্টিপাত কমতে পারে। সেক্ষেত্রে এই বর্ষণে কৃষির উপর খুব বেশি প্রভাব পড়বে না বলে জানান তিনি।


আরো সংবাদ



premium cement