খালেদা জিয়া সম্পর্কে মিথ্যাচার করেছেন মাহফুজ আনাম : রিজভী

ইংরেজি দৈনিক ‘ডেইলি স্টার’ সম্পাদক মাহফুজ আনামকে ‘গণতন্ত্র হন্তারকদের নাটের গুরু’ হিসেবে অভিহিত করে খালেদা জিয়াকে নিয়ে তার লেখা প্রবন্ধের প্রতিবাদ জানিয়ে এর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছে বিএনপি। গতকাল শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই প্রতিবাদ জানান।
তিনি বলেন, ওয়ান ইলেভেনের অন্যতম কুশীলব মাহফুজ আনাম মুখে গণতন্ত্র গণতন্ত্র বলে চিৎকার করলেও তিনি আপন স্বার্থসিদ্ধির জন্য গণতন্ত্র হন্তারকদের নাটের গুরু, ফ্যাসিবাদের তল্পিবাহক।
তিনি বলেন, মাহফুজ আনামদের সাংবাদিকতা বস্তুনিষ্ঠতার জন্য নাকি মুখোশ, সেটি এখন জনমনে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। আমরা মাহফুজ আনামের ফরমায়েশি, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত একদেশদর্শী প্রবন্ধে ২১ আগস্ট ও দেশনেত্রীকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন সেটি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবসে ডেইলি স্টারে মাহফুজ After 30 years of autocracys demise, democracy still remains a distant dream’ শিরোনামে একিটি নিবন্ধ লেখেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সম্পর্কে এই নিবন্ধে যেসব বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে তাকে নির্জলা মিথ্যাচার, বিভ্রান্তিকর তথ্য, অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও অসংলগ্ন মতামত বলে মন্তব্য করেন রিজভী।
তিনি বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলতে গিয়ে তিনি (মাহফুজ আনাম) ইনিয়ে বিনিয়ে বারবার বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে বিষোদগার করেছেন, যা হলুদ সাংবাদিকতা ও বর্তমান মিডনাইট সরকারের নির্লজ্জ স্তুতিরই সমতুল্য। মাহফুজ আনাম ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা নিয়ে তার প্রবন্ধে যা লিখেছের তা অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার পরিষদবর্গের হাইপার-প্রপাগান্ডা ও কলুষিত মিথ্যাচারের প্রতিধ্বনি মাত্র। মিথ্যা বানোয়াট গল্প সাজিয়ে সংবাদ পরিবেশনের দায়ে বারবার ক্ষমা চেয়ে এখন সরকারের কাছে সাধু সাজার প্রতিযোগিতায় নেমেছেন তিনি। ভয়ে হোক বা উচ্ছিষ্ট ভোগিচ্ছায় হোক গণতন্ত্রহীন ও বেপরোয়া আচরণে লিপ্ত আওয়ামী সরকারকে খুশি করাই এখন তার আরাধ্য। মাহফুজ আনাম এখন আওয়ামী নব্য নাসিবাদের উপাসকে পরিণত হয়েছেন।
রিজভী বলেন, মাহফুজ আনামদের সারথি হয়ে তথাকথিত সুশীল শ্রেণীর বেশ কয়েকজন এ দেশে গণতন্ত্র হত্যা করে এক এগারোর অসাংবিধানিক শাসন প্রতিষ্ঠার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। স্বচ্ছ সাংবাদিকতা নয়, বিদেশী অর্থদাতা প্রভু ও দেশীয় গোয়েন্দাদের এজেন্ট হিসেবেই কাজ করেছেন তিনি। মাহফুজ আনামদের বাংলাদেশে গণতন্ত্র ধ্বংস এবং ফ্যাসিবাদের উত্থানে ভূমিকা ও অপতৎপরতা কলঙ্কিত ইতিহাস হয়ে থাকবে।
২০০১ সালের পরে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে ক্ষমতায় আসার পর থেকে অসাংবিধানিক শাসন কায়েম করার নীল নকশা বাস্তবায়নে মাহফুজ আনামরা কাজ করেছে উল্লেখ করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, কারণে অকারণে তাদের (মাহফুজ আনামদের) প্রায় প্রতিদিন দেখা যেত জাতির সামনে নানা সবক নিয়ে হাজির হতে। তাদের নেতৃত্বেই তখন নানা ইস্যু বানিয়ে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরির পালে হাওয়া দেয়া হয়। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি অবৈধ ক্ষমতা গ্রহণকারীদের মাধ্যমে সুশীল সমাজের কিছু ব্যক্তি তাদের প্রথম লক্ষ্য হাসিল করে। সেই লক্ষ্য হাসিলে পুরোধা ছিলেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম।
তিনি বলেন, ফখরুদ্দীন আহমদের সরকার নিয়ে সে দিন তিনি উল্লাস করেছিলেন। এ সরকার আনার পেছনে নিজের কৃতিত্ব নিয়ে সগর্বে কলাম লিখেছিলেনÑ ‘দুই নেত্রীকে বিদায় নিতে হবে’। ডেইলি স্টার গ্রুপের পত্রিকায় গণতান্ত্রিক সরকারের পরিবর্তে সেনাসমর্থিত অগণতান্ত্রিক, একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরশাসনকে স্বাগত জানিয়ে প্রকাশ করা হয়েছিল একটির পর একটি নিবন্ধ। মাইনাস ফর্মুলায় রাজনীতিশূন্য করতে মাহফুজ আনাম মিথ্যা, অসত্য ও ভিত্তিহীন সংবাদ পরিবেশন করে রাজনীতিকদের গ্রেফতারের পটভূমি রচনার ক্ষেত্রে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন।
মাহফুজ আনামকে ১/১১ সরকার গঠনের ‘প্রধান কারিগর’ হিসেবে অভিহিত করে রিজভী বলেন, জরুরি আইনের সরকারের আইনমন্ত্রীর সাথে সম্পাদকদের এক বৈঠক শেষে টেলিভিশন ক্যামেরার সামনে হাজির ১/১১ সরকার তৈরির প্রধান কারিগর মাহফুজ আনাম বলেছিলেন, ‘এ সরকার হচ্ছে আমাদের আন্দোলনের ফসল’। তার কিছু দিন পরে শেখ হাসিনাও বলেছিলেন ‘এ সরকার হচ্ছে আমাদের আন্দোলনের ফসল’। মাহফুজের ভাষার সঙ্গে গণতন্ত্র হত্যাকারী শেখ হাসিনার ভাষার কোনো পার্থক্য ছিল না, এখনো নেই। তখনই তৈরি হয়েছিল ‘গেম প্ল্যান’। সেই ‘গেম প্ল্যান’ অনুযায়ী আজকের আওয়ামী নাতসিবাদের উত্থান।
রিজভী বলেন, দেশের জনগণ মনে করে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ছিল ওয়ান ইলেভেন সৃষ্টির মহড়া। এই মহড়ার কুশীলবদের সঙ্গে মাহফুজ আনামরাও জড়িত থাকতে পারেন। এখন বাঁচার জন্য সরকারের সুরে সুর মিলিয়ে গীত গাইছেন। তার লেখার মধ্যে তিনি অবৈধ শেখ হাসিনা সরকারের পক্ষে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেছেন, যা এক দিকে যেমন নিশুতি সরকারের প্রতি তার নির্লজ্জ দালালির সাক্ষ্য বহন করে, অন্য দিকে তেমনি বাংলাদেশের মানুষের গণতান্ত্রিক সংগ্রামের প্রতি গভীর এক ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত বলে বিএনপি মনে করে।
নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সাবেক ছাত্রনেতা ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, হাবিব উন নবী খান সোহেল, আজিজুল বারী হেলাল, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, মীর সরাফত আলী সপু, সাইফুল আলম নিরব, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আসাদুল করিম শাহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।