১৭ মে ২০২৪, ০৩ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলকদ ১৪৪৫
`


ঈদযাত্রায় ঢাকায় ফিরতেও ভোগান্তি

৪ ঘণ্টার পথ পেরোতে ১৪ ঘণ্টা
-

অসহনীয় ভোগান্তি আর কষ্ট সহ্য করে ঈদে বাড়ি যেতে হয়েছে অগণিত ঘরমুখী মানুষকে। ঈদের ছুটি শেষে ঢাকায় ফিরতেও তাদের মুখোমুখি হতে হচ্ছে একই পরিস্থিতির। ঈদে বাড়ি যাওয়া এবং বাড়ি থেকে ফেরা যেন রীতিমতো যুদ্ধ আর দুঃসহ যন্ত্রণায় পরিণত হয়েছে অনেক বছর ধরে। এর যেন কোনো প্রতিকার নেই। অনেক কষ্টে বাড়ি পৌঁছার পর এখন ঢাকায় ফিরতে প্রথম যে সঙ্কটের মুখে পড়তে হচ্ছে তা হলো টিকিট সঙ্কট। বাস, রেল আর নৌপথ সর্বত্র একই অভিজ্ঞতার কথা জানালেন ঢাকামুখী অনেক যাত্রী।
এবার রাজধানী ঢাকা থেকে ঘরমুখো মানুষের বাড়ি যেতে এতই প্রতিকূল অবস্থা ছিল যে, ঈদের পরদিনও বিভিন্ন টার্মিনালে যাত্রীদের ব্যাপক ভিড় দেখা গেছে। টিকিট ও যানবাহন সঙ্কট আর যানজটের কারণে অনেকে ঈদের আগে বাড়ি পৌঁছতে পারেননি। সে কারণে ঈদের দিন, এমনকি ঈদের পরের দিনও ভিড় দেখা যায় রেলস্টেশন ও বিভিন্ন বাস টার্মিনালে।
ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যেতে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে অগণিতি যাত্রীকে। যানবাহন সঙ্কটের পাশপাশি বিভিন্ন রুটে যানজট ছিল এ ভোগান্তির অন্যতম কারণ। নুরুল্লাহ রুমি নামে একজন যাত্রী বলেন, ঈদের আগের রাত সাড়ে ৩টায় বনশ্রীর বাসা থেকে বের হই। ভোর ৪টায় ঢাকার কাওরান বাজার থেকে অফিসের গাড়িতে করে রওয়ানা হই নেত্রকোনোর কেন্দুয়ার উদ্দেশে; কিন্তু ময়মনসিংহ পৌঁছতেই আমাদের সাড়ে ১২ ঘণ্টা লেগে যায়। বিকেল সাড়ে ৪টায় আমরা ময়মনসিংহ পৌঁছি। ভোররাতে রওয়ানা দিয়েও টঙ্গী পৌঁছার সাথে সাথে যানজটের মুখে পড়তে হয়। এরপর ভালুকা থেকে ময়মনসিংহ বাইপাস পর্যন্ত ভয়াবহ যানজটের মুখে পড়তে হয়েছে। আমরা দেখেছি তীব্র যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে হাজার হাজার মানুষ ত্রিশাল থেকে হেঁটে ময়মনসিংহ রওয়ানা হয়েছে গাড়ি থেকে নেমে। অনেকে ১৫ থেকে ২০ মাইল পর্যন্ত রাস্তা হেঁটে পাড়ি দিয়েছে। আমাদের গাড়ি ময়মনসিংহ বাইপাস যাওয়ার পর আমরাও নেমে যেতে বাধ্য হই। এরপর কোনোমতে ময়মনসিংহ পৌঁছে সেখান থেকে কেন্দুয়া পৌঁছি। ময়মনসিংহ থেকে কেন্দুয়ার ভাড়া ১৮০ টাকা; কিন্তু আমার কাছ থেকে ৪ শ’ টাকা নিয়েছে।
তিনি বলেন, সাধারণত সরাসরি গাড়ি নিয়ে ঢাকা থেকে কেন্দুয়া পৌঁছতে চার ঘণ্টা লাগে। সেখানে আমাদের ১৪ ঘণ্টার বেশি লেগেছে। আমাকে আগামী শুক্রবার ঢাকা ফিরতে হবে; কিন্তু কোনো টিকিটের ব্যবস্থা করতে পারিনি। ভেঙে ভেঙে বিভিন্ন গাড়িতে করে আসতে হবে। পথের কষ্ট আর ভোগান্তির কারণে ঢাকায় ফেরার কথা ভাবতেই আঁতকে উঠতে হচ্ছে।
কাওসার নামে একজন জানান, তিনি বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টায় ঢাকার গাবতলী থেকে নাটোরের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। অসহনীয় ভোগান্তি শেষে শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টায় তিনি নাটোর পৌঁছেন।
আল আমিন জানান, তিনি বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মিরপুর-২ থেকে সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা দেন। শুক্রবার সকাল ৭টায় তিনি চন্দ্রা পৌঁছেন। এরপর সেখান থেকে আবার যাত্রা করেন সিরাজগঞ্জের উদ্দেশে।
ঈদের পরপরই ঢাকামুখী সব রাস্তা ফাঁকা হলেও অনেক যাত্রীকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে টিকিটের অভাবে। টিকিট সঙ্কটের কারণে বিভিন্ন রুটে বারবার যানবাহন বদল করে, লোকাল পরিবহনে করে ফিরতে হচ্ছে অনেককে। পরিবারপরিজন আর বিভিন্ন ব্যাগপত্র নিয়ে বেশ ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে তাদের। ঈদের দুই দিন পর যারা ঢাকা ফিরছেন তারা যানজটমুক্ত রাস্তায় আসতে পারলেও তিন-চার দিন পরই শুরু হবে ফিরতি পথে তীব্র যানজট বিভিন্ন রুটে। এ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছেন লাখ লাখ যাত্রী, যারা ঈদে একটু লম্বা ছুটি কাটাতে চান। অনেকের টিকিট কাটা থাকলেও যানজটের আশঙ্কা তাদের মনের শান্তি কেড়ে নিয়েছে।
সাঈদুর রহমান পিরোজপুর জেলার স্বরূপকাঠি থেকে লঞ্চে ঢাকায় পৌঁছেছেন গতকাল। সাঈদুর রহমান বলেন, আমি সব সময় ঈদের পরদিন বাড়ি থেকে ঢাকা রওয়ানা দিই। কারণ তখন অনেক সময় বিশেষ করে কুরবানির ঈদের পর লঞ্চের কেবিন পাওয়া যায়। তবে রোজার ঈদের পর দিন অনেক সময় পাওয়া যায় না। কেবিন না পেলেও ডেকে খালি জায়গা থাকে। ঈদের পর এক দিন পার হলেই আর লঞ্চের কেবিন যেমন পাওয়া যায় না তেমনি পাওয়া যায় না ডেকেও জায়গা। সে জন্য ছুটি কাটানোর সুযোগ থাকলে পথের ভোগান্তি এড়াতে ঈদের পরদিনই সব সময় ঢাকায় ফিরি পরিবার নিয়ে। ঈদের পরপরই পরিবারপরিজান নিয়ে বাড়ি থেকে বাসে করে ঢাকায় আসার কথা তো ভাবতেই পারি না।


আরো সংবাদ



premium cement