২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ম্যালেরিয়া হোক নক আউট

-

অতীতের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তুলনায় বর্তমানে অনেক নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ আছে। জীবাণুবাহিত সাধারণ জনগণকেও অত্যন্ত সূক্ষ্ম মলিকুলার পদ্ধতির মাধ্যমে পিসিআর শনাক্তকরণ করা যেতে পারে

দেশে ম্যালেরিয়া রোগীর সংখ্যা দিন দিন কমছে। এক দশক আগেও যেখানে ৭০-৮০ হাজার জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত্র হতেন সেখানে এ সংখ্যা কমে ২৬ হাজারে নেমে এসেছে। মৃতের সংখ্যাও কমে এসেছে। আগে যেখানে পাঁচ শতাধিক মারা যেত এখন তা কমে ২০১২ সালে ১১ জন, ২০১৩ সালে ১৫ জন মারা যান। ঈর্ষণীয় এ অগ্রগতির পেছনে বিশেষ করে পার্বত্য জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি, বান্দরবানে পরিবার প্রতি ২টি কীটনাশকযুক্ত মশারি বিতরণ, বাড়ির কাছে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও সহযোগী সংস্থা এবং সরকারি মাঠপর্যায়ের স্বাস্থ্যকর্মী ও কম্যুনিটি ক্লিনিকের মাধ্যমে দ্রুত রোগ নির্ণয় পদ্ধতির বহুল ব্যবহার ও পজিটিভ রোগীদের দ্রুত আর্টিমিসিনিনসহ কার্যকরী ওষুধ এসিটি (আর্টিমিথার লুমফনট্রিন) মুখে প্রয়োগ এবং জটিলতাসহ ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ইঞ্জেকশন আর্টসুনট ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।

মাঠপর্যায়ে প্রায় ১৩ জেলায় কীটনাশক প্রয়োগকৃত মশারি ব্যবহার করা হচ্ছে। জনগণ মশারি ব্যবহারে সুফল পেয়েছেন। গরম আবহাওয়াতে যথাযথ নিয়মে এসব মশারি ব্যবহার করার জন্য সার্বক্ষণিকভাবে জনগণকে জানানো ও উদ্বুদ্ধ করতে হবে। যদিও মশারি ব্যবহারের সুনিশ্চিত বিজ্ঞানভিত্তিক আফ্রিকার মতো তথ্য এশিয়াতে নেই। আগের মতো রোগ নির্ণয় হাসপাতালে গিয়ে রক্তকাচ পরীক্ষার চেয়ে অতি সহজ বাড়ির কাছে মাঠকর্মীর কাছে র্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট (আরডিটি) পরীক্ষায় প্রজাতিসহ ম্যালেরিয়া দ্রুত নির্ণয় করে ফ্যালসিপেরাম ম্যালেরিয়ায় কা-আর্টম প্রয়োগ ও ভাইভক্স ম্যালেরিয়ায় তিন দিনের ক্লারাকুইন ও ১৪ দিনের প্রাইমাকুইন দেয়া হচ্ছে। ১২১টি নতুন মাইক্রোসকোপ ক্ষুদ্র ও আরডিটি রোগ নির্ণয় পদ্ধতি, ম্যালরিয়ার সব ওষুধ ও মশারি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, গ্লোবাল ফান্ডের অর্থায়ন বিনা পয়সায় দিচ্ছেন। ‘এসিটি’ ও ইঞ্জেকশন আর্টিসুনট প্রয়োগের সিদ্ধান্তের পূর্ব প্রায়োগিক গবেষণা কাজ ‘ম্যালেরিয়া রিসার্চ গ্রুপ’ ও স্বাস্থ্য বিভাগ যথাযথভাবে কাজ করে। ম্যালেরিয়ার নিম্নমুখী সংখ্যা বিষয় তথ্য-উপাত্ত নিশ্চিত করার জন্য এরই মধ্যে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কয়েক হাজার বেসরকারি চিকিৎসাকর্মী ও হাসপাতাল থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা প্রয়োজন। এরই মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর তা সংগ্রহের উদ্যোগ নিয়েছে।

বর্তমানে ক্রম সঙ্কুচিত সংখ্যক রোগীর মাঝে জাতীয় ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি, ‘ম্যালেরিয়া প্রাক-নির্মূল কর্মসূচি’ গ্রহণের বিশেষজ্ঞতা যাচাই করছে। বিশেষ করে উত্তর-পূর্বের আটটি জেলায় সীমিত সংখ্যক রোগী থাকাতে প্রাক-নির্মূল কর্মসূচি এ এলাকায় করা সম্ভব। এর জন্য মশার সামগ্রিক বিষয় বায়োলজিক্যাল আবশ্যিক তথ্য সংগ্রহ আবশ্যক, যার আলোকে পর্যালোচনা কর্মকাণ্ড গ্রহণ করতে হবে।
তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের কিছু উপজেলায় মশার তথ্য সংগ্রহ ও পর্যালোচনার পাশাপাশি উঁচু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী চিহ্নিত করে তাদেরকেও প্রতিরোধ ও দ্রুত চিকিৎসার আওতাধীন আনা জরুরি।
উঁচু ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী যেমন- জুমচাষি, বাঁশ-গাছ কাটার শ্রমিক, বন বিভাগ কর্মরত কিংবা অল্প সময়ের জন্য কাজ করতে আসা লোকজন কিংবা ভ্রমণকারীদের জন্য বিভিন্নমুখী প্রতিরোধ কর্মসূচি, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসাপদ্ধতি ব্যবহার জরুরি। এখনো পার্বত্য জেলার কিছু এলাকায় রোগীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ। এসব রোগীর জন্য মোবাইল ক্লিনিক কিংবা নিবিড়ভাবে সেবা প্রদানের জন্য মাঠকর্মীর সংখ্যা বাড়ানো প্রয়োজন।
এমডিজি পরবর্তী ২০১৫ সালের পর ম্যালেরিয়াসহ সমন্বিত প্রাথমিক স্বাস্থ্য প্রদানের জন্য কম্যুনিটি ক্লিনিকগুলো যথাযথ ও কার্যকরভাবে পরিচালনা করা প্রয়োজন। সমতল অঞ্চল ছয় হাজার জনগণের জন্য নির্ধারিত একটি কম্যুনিটি ক্লিনিকের পরিবর্তে পাহাড়ি অঞ্চলের তুলনায় কমসংখ্যক জনগণের জন্য (যেমন দুই হাজার-দুই হাজার ৫০০ জনের জন্য) একটি কম্যুনিটি ক্লিনিক প্রয়োজন হতে পারে। এর জন্য প্রায়োগিক গবেষণা জরুরিভাবে প্রয়োজন। একই সাথে ম্যালেরিয়া অঞ্চল ইউনিয়ন পর্যায়ে স্থাপিত স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের আওতাধীন স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোয় যথাযথভাবে সমন্বিত প্রথম স্তরের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের জন্য সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বাস্তবায়ন আবশ্যিক।

অতীতের ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির তুলনায় বর্তমানে অনেক নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ আছে। জীবাণুবাহিত সাধারণ জনগণকেও অত্যন্ত সূক্ষ্ম মলিকুলার পদ্ধতির মাধ্যমে পিসিআর শনাক্তকরণ করা যেতে পারে।
আর্টিমিসিনিনের কার্যকারিতা শেষ হওয়ার আগেই এসব জীবনসংহারী ফ্যালসিপরাম ম্যালেরিয়ার জীবাণু ব্যাপক আকার ধ্বংস করার জন্য এখন মাস ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রিশন নিয়ে পাইলট গবেষণা জরুরি । পরে সীমিত সংখ্যক রোগী হলে তাদের ব্যাপারে স্বাস্থ্য বিভাগ সহজেই ব্যবস্থা নিতে পারবে। একই সাথে ম্যালেরিয়ার চিকিৎসায় ক্লারাকুইনের সাথে ১৪ দিনের প্রাইমাকুইন যক্ষ্মার চিকিৎসার মতো ‘ডট্স’ পদ্ধতির মাধ্যম চিকিৎসা গ্রহণ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
ম্যালেরিয়া নির্মূল সম্ভব। তার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার, আর্থিক সঙ্কুলান, অর্জিত সফলতা ধরে রাখার জন্য কর্মকাণ্ডগুলো চালু রাখা, জনগণকে সম্পক্ত করে মশা নিয়ন্ত্রণ উল্লেখযোগ্য।
অধ্যাপক এম এ ফয়েজ : সাবেক মহাপরিচালক, স্বাস্থ্য অধিদফতর ও
ডা: খালিসা আফরোজ : ডেভ কেয়ার ফাউন্ডেশন, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement
টুকুর সাজার প্রতিবাদে ফেনীতে যুবদলের বিক্ষোভ জামালপুরের ইসলামপুর পৌরসভার মেয়র সাময়িক বরখাস্ত পেকুয়ায় হিট স্ট্রোকে একজনেরর মৃত্যু স্কটল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী হুমজা ইউসুফের পদত্যাগ মঙ্গলবারও বাড়বে তাপমাত্রা, অসহনীয় হবে গরম ইতিহাসের উষ্ণতম এপ্রিল দেখল মিয়ানমার আইসিসির সম্ভাব্য গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে উদ্বিগ্ন ইসরাইলি কর্মকর্তারা নোয়াখালীতে হিট স্ট্রোকে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রের মৃত্যু ভূমি সেক্টরে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ক্ষেত্র চিহ্নিত করতে ভূমিমন্ত্রীর নির্দেশ বাইপাস সার্জারির জন্য কৃত্রিম রক্তনালী তৈরির চেষ্টা হামাসকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে ইসরাইলি প্রস্তাব বিবেচনার আহ্বান যুক্তরাজ্যের

সকল