১৬ মে ২০২৪, ০২ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫
`


প্যানিক অ্যাটাক : সচেতনতা ও চিকিৎসা

-

প্যানিক ডিজঅর্ডার এক ধরনের একটি মানসিক সমস্যা। বিশেষ করে বর্তমানে নানা কারণে মানুষের মধ্যে নানা অনিশ্চয়তা এবং ভীতি জন্মাচ্ছে। এর দরুন মানুষ নিজের ওপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। এ সময় মানুষ তার মানসিক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অনেক অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি করে।
প্যানিক ডিজঅর্ডার মূলত কী?
প্রথমে যে নেতিবাচক চিন্তাটা মাথায় আসে তাহলো শরীরে অস্বস্তি অনুভব করা, হাঁটতে মন চায় না, বসে থাকতে ইচ্ছে করে না, শুলে ঘুম আসে না, মনের ভেতর প্রচণ্ড চিন্তা আসে যে মৃত্যুভয় কাজ করে, আমার মারাত্মক অসুখ হয়েছে, ডাক্তাররা কিছুই ধরতে পারছেন না, আমি আর সুস্থ হবো না, মনে হয় প্রেশার বেড়ে গেছে কিন্তু মাপলে দেখা যায় প্রেশার ঠিকই আছে। মনে হতে থাকে বুকে ব্যথা, হয়তো হার্টফেল করবে। কেউ তার কষ্ট বুঝতে পারছে না। পৃথিবীটা অশান্তিময় স্থান মনে হয়। এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়ে মানুষের স্বাভাবিক চলাফেরা বন্ধ হয়ে যায় এবং স্বাভাবিক জীবন যাপনে নিজের এবং অন্যদেরও ব্যাঘাত ঘটে।
প্যানিক হবার কারণ
প্যানিক ডিজঅর্ডার মূলত আমাদের স্নায়ুতন্ত্র অটোনমিক সিস্টেমের দুটি অংশ আছে- সিম্প্যাথেটিক ও প্যারাসিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম। আমরা যখন কোনো কারণে নিজেদের বিপদাপন্ন মনে করি, ভয় পাই বা নার্ভাস হয়ে পড়ি তখন আমাদের শরীরের সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম স্বয়ংক্রিয়ভাবে সক্রিয় হয়ে যায়। এই সময় অ্যাড্রেনালিন নামক একটি বিশেষ হরমোন ক্ষরণ হতে থাকে, যা আমাদের দেহের বিভিন্ন গ্রন্থি ও অঙ্গকে আসন্ন বিপদ মোকাবিলায় প্রস্তুত করে তোলে। শরীর চঞ্চল হয়ে ওঠে, অ্যাড্রেনালিন অপ্রয়োজনীয় অঙ্গ এবং পরিপাক প্রক্রিয়ায় রক্ত সংবহন কমিয়ে দিয়ে স্নায়ু, মাংসপেশি এবং মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ বাড়িয়ে দেয় এটি হৃৎস্পন্দন কমায়। এভাবে আমাদের দেহে আক্রমণ থেকে অতিরিক্ত শক্তি সঞ্চিত হয়।
কিন্তু এই অ্যাড্রেনালিন যদি সঠিক উপায়ে কাজ না করে। নেতিবাচক চিন্তায় আমরা নিজেকে আটকে রাখি, আমরা দীর্ঘদিন মানসিক উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে যাই, তখন আমাদের মস্তিষ্কের সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি পায়, যার কারণে আমরা তুচ্ছ বিষয়েরও অতিরঞ্জিত ব্যাখ্যা করে বিপজ্জনক হিসেবে ধরে নিই। ফলে একে বিপদ হিসেবে ধরে নিয়ে সৃষ্ট তথাকথিত বিপদ আর শিগগিরই কাটে না (কারণ আসলে তো কোনো বিপদই নেই)। তবে দেহ এটিকে বিপদ হিসেবে ধরে নেয়, ফলে দীর্ঘ সময় ধরে সিম্প্যাথেটিক নার্ভাস সিস্টেম সক্রিয় থাকে এবং আমরা উৎকণ্ঠিত বোধ করি।
উপসর্গ
- বুক ধড়ফড় করা, হৃৎস্পন্দনের অস্বাভাবিকতা
- তীব্র আতঙ্ক
- বুকে ব্যথা, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া
- অবস বা অজ্ঞান হওয়ার অনুভূতি সৃষ্টি
- দেহে কাঁপুনি সৃষ্টি হয় এবং প্রচুর ঘাম হওয়া
- দাঁতে দাঁতে বাড়ি খাওয়া, হাত-পায়ে ঝিনঝিন করা
- পেটে গণ্ডগোল, ভুটভাট শব্দ হওয়া
- বিভিন্ন ধরনের ভয়ের চিন্তা মাথায় আসা, যেমন এখনই মারা যাবো, কেউ বাঁচাতে পারবে না ইত্যাদি
সাধারণত প্রতিটি প্যানিক অ্যাটাকের স্থায়িত্বকাল দশ থেকে পনেরো মিনিটের মতো হয়, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তা আধা ঘণ্টারও অধিক হতে পারে। সাধারণত পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে এ ব্যাধির বিস্তারের হার বেশি, যেকোনো বয়সেই দেখা দিতে পারে, তবে কিশোরদের সর্বাধিক ঝুঁকি থাকে।প্যানিক ডিজঅর্ডারে আক্রান্ত ব্যক্তিরা সব সময় উৎকণ্ঠায় থাকেন, অসুখ বাড়ল কি না, তা খতিয়ে দেখতে সার্বক্ষণিক শরীরের ওপর নজরদারি চালিয়ে যান। কেউ কেউ মিনিটে কতবার শ্বাস নিচ্ছেন, সেটা পরিমাপ করতেও বাদ রাখেন না।
চিকিৎসা
এরকম লক্ষণ দেখা মাত্রই চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসক যদি মনে করেন এটা প্যানিক ডিজঅর্ডার তবে তিনি সেটা মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞ বা সাইকিয়াট্রিস্ট চিকিৎসকের কাছে রেফার করবেন।
মানসিক সমস্যায় অবশ্যই সাইকিয়াট্রিস্ট এর পরামর্শে চিকিৎসা সেবা, কাউন্সেলিং ও সাইকোথেরাপি চলবে। রোগীর অবস্থা ও রোগের তীব্রতা অনুযায়ী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসা পরামর্শ দিবেন।
লেখক : জনস্বাস্থ্য গবেষক ও ফ্যামিলি মেডিসিন চিকিৎসক, পরিচালক, সেন্টার ফর সাইকোট্রমাটোলজি অ্যান্ড রিসার্চ, ঢাকা


আরো সংবাদ



premium cement
মানিকগঞ্জে সান লাইফ ইন্স্যুরেন্সের গ্রাহকদের টাকা না দেয়ায় মানববন্ধন চট্টগ্রামে পিকআপ ও সিএনজির সংঘর্ষে নিহত ১ ম্যাঙ্গো ক্যালেন্ডারের দ্বিতীয় দিনেও রাজশাহীর বানেশ্বর হাট আমশূন্য ভালুকায় আইসক্রিম কারখানায় রান্নার সময় পাঁচকের মৃত্যু আইনি সহায়তায় জাতীয় হেল্পলাইন কল সেন্টারের কর্মপরিধি-সময়সীমা বাড়ছে সিদ্ধিরগঞ্জে চিহ্নিত হয়নি স্বপ্না হত্যার ঘাতক, স্বজনদের মানববন্ধন বান্দরবানে জমি নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ : নিহত ১, আহত ৭ বিশ্বকাপের দক্ষিণ আফ্রিকা শিবিরে দুঃসংবাদ ইসলাম ধর্ম অবমাননার দায়ে কুবি শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার গাজা যুদ্ধ : বিভক্ত হয়ে পড়েছে ইসরাইলি মন্ত্রিসভা রূপপুরসহ ১০ প্রকল্পে বরাদ্দ ৫২ হাজার কোটি

সকল