০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


তামাকের বিষাক্ত ছোবলে আমাদের যুবসমাজ

তামাকের বিষাক্ত ছোবলে আমাদের যুবসমাজ -

মাদকদ্রব্যের মধ্যে যতগুলো উপাদান বা বস্তু আছে তার মধ্যে তামাক কিছুটা ব্যতিক্রম। ব্যতিক্রম শুধু তার কেমিক্যাল গঠন বা অন্য কোনো কারণে নয়। এটি মূলত অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও সংস্কৃতির একটা অংশ মাত্র। অনেক আগে থেকেই এ দেশের মানুষ তামাকের বিভিন্ন রকমের ব্যবহারে অভ্যস্ত। গ্রামে, শহরে এর প্রভাব, জনপ্রিয়তা, মার্কেটিং কোনো দিক থেকেই কম নেই। এটি এমন একটি মাদক যা প্রকাশ্যে সবাই গ্রহণ করে কিন্তু লজ্জিত হয় না বরং আরো গর্ব করে সবার সামনে তামাক জাতীয় মাদকদ্রব্য সেবন অনেকটা বাহাদুরির পর্যায়ে চলে গেছে। অনেকে আবার একে মাদকদ্রব্য মানতেই নারাজ! এ নিয়ে বিজ্ঞান মহল থেকে শুরু করে চায়ের দোকানেও চলে বিস্তর বিতর্ক এবং যুক্তি-পাল্টা যুক্তির ঢেউ। তামাক যে এক প্রকার মাদক বা তার চেয়েও খারাপ কিছু এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আমাদের সমাজে বহুকাল আগে থেকেই এটি সহজলভ্য এবং সুপরিচিত। তরুণরা একটু বড় হলেই এই তামাকের বানানো সিগারেট বা বিড়ি মুখে নিতে উদগ্রিব থাকে।

নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন আর নতুন কিছুর স্বাদ নিয়ে তারা বুঝতে চায় এবং বোঝাতে চায় তারা আজ বড় হয়েছে। বাবা চাচা মামাদের দেখে আসছে কিভাবে উনারা এসব সেবন করছেন! এরকম সামাজিক সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠা তরুণ সমাজকে এসব ক্ষতিকর দ্রব্য থেকে দূরে রাখা বা তাদেরকে এসবের ব্যবহারের ফলে ভবিষ্যৎ ক্ষতির ভয় দেখিয়ে বিরত রাখা অনেকটা অসম্ভব মনে হয় তবে যারা সচেতন অভিভাবক কিংবা যাদের ফ্যামিলি পরিবেশ সুন্দর, পরিবারে নীতি-নৈতিকতার চর্চা আছে তাদের জন্য ব্যাপারটা খুব সহজ। এবং এসব পরিবারের ছেলেমেয়েরা এসব বাজে বস্তুর নেশায় খুব একটা পরে না আবার পরলেও তাদেরকে তুলে আনা সম্ভব হয়। কিন্তু অভিভাবক সচেতন না হলে কিংবা তিনি যদি নিজেই ধূমপায়ী বা মাদকসেবী হন তাহলে তার নিজের সন্তানকে এসব থেকে দূরে রাখার নৈতিক শক্তি ও মনোবল হারাবেন। তাই এসব মাদক বা তামাকজাত পণ্য ই-সিগারেট থেকে শুরু করে অন্যান্য তামাক পণ্যের ব্যবহার যেন তরুণদের গ্রাস করতে না পারে সে জন্য আমাদের সবাইকে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে তামাক পণ্যের কর বৃদ্ধি, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের যুগোপযোগীকরণ, পাঠ্যসূচিতে তামাক ও মাদকের ক্ষতিকর প্রভাবসমূহের বিস্তারিত বিবরণসহ প্রবন্ধ যুক্ত করা এবং তামাক কোম্পানিগুলোর প্রক্রিয়াজাত, বাজারজাতসহ সব ক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগ বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।

তাই রাষ্ট্রীয়,সামাজিক,পারিবারিক ও ব্যক্তিগতভাবে সবার উচিত আমাদের তরুণদের স্বাস্থ্যগত ও অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা করে মাদক তামাকের ভয়াবহ ভবিষ্যৎ এই মহামারী থেকে বাঁচানোর জন্য চেষ্টা করে যাওয়া এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা।
লেখক : এমবিবিএস (ঢাবি), এমপিএইচ;
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও গবেষক; পরিচালক,
সেন্টার ফর সাইকোট্রমাটোলজি অ্যান্ড রিসার্চ


আরো সংবাদ



premium cement