২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রক্তদানে আপনার উপকার

বিশ্ব রক্তদাতা দিবস
-


আমাদের বছরে প্রায় পাঁচ লাখ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন হয়। কিন্তু এর পুরোটা সংগ্রহ করা সম্ভব হয় না। দেশে রক্তের চাহিদার অভাব আছে। কিন্তু এখনো দেশের অনেকেই রক্তে অভাবে মারা যান। কিন্তু এ প্রাণগুলো রক্ষা করা যায় খুব সহজেই। ২০১৩ সালে বিশ^ব্যাপী প্রায় তিন লাখ নারী সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যান। এদের ২৭ শতাংশ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণজনিত কারণে, রক্তের অভাবে। অথচ রক্ত সঠিক সময়ে সংগ্রহ করে পরিসঞ্চালন করা গেলে অনেক জীবনই বাঁচানো সম্ভব। এ প্রাণগুলো অকালে ঝরে যাওয়া রোধ করতে প্রয়োজন আমাদের একটু সহানুভূতি, সচেতনতা। আমাদের এক ব্যাগ রক্তই পারে এদের জীবন বাঁচাতে। যারা স্বেচ্ছায় ও বিনামূল্যে রক্তদান করে লাখ লাখ প্রাণ রক্ষা করতে সহায়তা করছেন তাদের উৎসাহিত করতে প্রতি বছর ১৪ জুন পালন করা হয় বিশ^ রক্তদাতা দিবস।
অনেকে রক্তদান করতে ভয় পান। আসলে রক্তদান একটি সহজ প্রক্রিয়া। যারা একবার রক্তদান করেছেন তিনি আর রক্তদানে ভয় পান না। তাই ভয়টাকে জয় করাই রক্তদানের প্রধান বাধা। কিন্তু সাহস নিয়ে একবার গিয়ে দেখলাম কোনো সমস্যাই হচ্ছে না। আজকাল অনেকেই রক্ত দিচ্ছেন। দেশে এখন প্রায় ৭০ ভাগ রক্ত সংগৃহীত হয় আমাদের মতো অপেশাদার বা যারা কখনো রক্তদান করেননি তাদের কাছ থেকে। রক্তদান করলে সমস্যা হলে এত লোক কি রক্ত দিত? বরং আপনার এক ব্যাগ রক্তে যদি কারো জীবন বাঁচে এর প্রতিদান মূল্যমানে হিসাব করা কি সম্ভব?
রক্তদান করলে শুধু অন্যজনের উপকার তা কিন্তু নয়। রক্তদান করলে আপনিও উপকার পাবেন। প্রথম হলো মানসিক শান্তি। আপনার রক্তে জীবন ফিরে পেয়েছেন কেউ একবার ভাবুন তো কতটা পরোপকারী কাজ এটি। একবার চিন্তা করুন আপনার জীবন বাঁচাতে এক ব্যাগ রক্ত প্রয়োজন। আপনার মা-বাবা, ভাইবোন হন্যে হয়ে খুঁজছেন কিন্তু কেউই রাজি হচ্ছে না। রক্তের অভাবে আপনার মূল্যবান জীবন প্রদীপ নিভে গেলে আমাদের সমাজের জন্য কতটা ক্ষতি হবে। তাই সবার জীবনই মূল্যবান। রক্তদান করলে আপনার বাড়বে আপনজন। যার জীবন রক্ষায় আপনি সহায়তা করলেন তিনি না হোক আপনার প্রয়োজনে অন্য কেউ এগিয়ে আসবে নিশ্চয়। মনে রাখবেন হাদিসে আছেÑ ‘কেউ যদি কোনো মানুষকে সহায়তা করে তবে তার সাহায্যকারী হয়ে যান স্বয়ং আল্লøাহ’।
গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত রক্ত দিলে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। কোলেস্টেরল যে কতটা ক্ষতিকর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। কোলেস্টেরল বেশি হলে রক্তনালীতে জমে রক্তনালী সঙ্কুচিত হয় ফলে রক্ত চলাচল বিঘিœত হয়ে দেখা দেয় হার্ট অ্যাটাকসহ অন্যান্য হৃদরোগ, স্ট্রোক। নিয়মিত রক্তদান করলে কিন্তু এগুলো থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
শরীরের বিপাক ক্রিয়ায় অক্সিজেন ফ্রি রেডিকেল তৈরি হয়। এগুলোর জন্য আমরা বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে বুড়িয়ে যাই। রক্তদান করলে এ ক্যামিকেলগুলো শরীর থেকে বাইরে বের হয়ে যায়। ফলে শরীর বিষমুক্ত হয়। তাই রক্তদানে বুড়িয়ে যাওয়া দেরিতে ঘটে।
রক্তদানের আগে আপনার স্বাস্থ্য চেকআপ হয় বিনামূল্যে। আপনার রক্তে বেশ কিছু রোগের জীবাণু যেমনÑ হেপাটাইটিস, সিফিলিস, ম্যালেরিয়া, এইডস আছে কি না তা পরীক্ষা হয়ে যায় বিনামূল্যে।
পেশাদার রক্ত বিক্রেতা নির্ভরশীলতা কমবে। লাল রক্তের কালো ব্যবসা কমবে, ঘাতক রোগের বিস্তার কমবে, সামাজিক সম্প্রীতি এবং বন্ধন বাড়বে।
রক্তদানে কোন শরীরিক ক্ষতি হয় না। এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে রক্তদানের ফলে অস্থিরতা, মাথা ঘেরানো, দুর্বলতার মতো ক্ষণস্থায়ী সমস্যা দেখা দিতে পারে। চার থেকে ছয় ঘণ্টার অভুক্তি, ক্লান্তি বা অবসন্নতা, হইচই, হট্টগোল, মানুষের ভিড়, দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা, অত্যাধিক ঠাণ্ডা বা গরম, দুশ্চিন্তা, ভয়, আতঙ্ক, অন্য ডোনারের দেখাদেখি ফিটলাগাÑ এ সমস্যা সমাধানে বাড়তি মনোযোগ দিয়ে মানসিক চাপ নিরসন, যতœ নেয়া ও ভালো ব্যবহার/সেবা, তরল খাবার দিয়ে আপ্যায়ন, দুশ্চিন্তা দূরীকরণে ভূমিকা রাখা, বিশ্রাম, আশ্বাস প্রদান, পায়ের দিক উত্তোলন করা, শান্ত, নীরব, অন্ধকারাচ্ছান্ন এলাকায় স্থানান্তরকরণ, কপালে, চোখে-মুখে ঠাণ্ডা জলের ছিটা দেয়া। রক্ত দেয়ার আগে আধা লিটার পানি বা পানীয় পান করুন।
আপনার বয়স যদি ১৮ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে হয় তাহলে আপনি প্রতি তিন মাস পরপর আপনি রক্ত দিতে পারবেন। বছরে আপানার রক্তে চারটি প্রাণ রক্ষা পাক এ হোক ব্রত।


আরো সংবাদ



premium cement