২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`


গোড়ালিতে ব্যথা : কী করবেন?

গোড়ালিতে ব্যথা - সংগৃহীত

শরীরের বিভিন্ন হাড় ও জোড়ায় অতিরিক্ত হাড় গজায়। এর মধ্যে গোড়ালির হাড় (ক্যালকেনিয়াম) অন্যতম, যেখানে আতিরিক্ত হাড় গোড়ালির নিচে ও পেছনে গজায়। এ অতিরিক্ত হাড়কে ক্যালকেনিয়াম স্পার বলে। পায়ের সবচেয়ে বড় হাড় ক্যালকেনিয়াম যা দাঁড়ালে বা হাঁটলে সবচেয়ে প্রথম মাটির সংস্পর্শে আসে এবং শরীরের পূর্ণ ওজন বহন করে। এর যেকোনো ক্ষুদ্র অসঙ্গতির ফলে বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।

অতিরিক্ত হাড় বা স্পারের কারণ : অসঙ্গতিপূর্ণ জুতা পরিধান করলে স্পার হয়। লেগের পেশি দুর্বল হলে পায়ের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে। ফলে স্পার তৈরি হয়। দীর্ঘ দিন ধরে প্লান্টার ফাসা ও টেনডনের প্রদাহ হলে গোড়ালিতে অতিরিক্ত হাড় গজায়। শরীরে অতিরিক্ত ওজন থাকলে স্পার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বিভিন্ন ধরনের আর্থ্রাইটিস যেমন রিউমাটয়েড ও অস্টিও-আর্থ্রাইটিসে হিল স্পার হয়। অনেকের বংশানুক্রমিকভাবে স্পার হয়।

উপসর্গ : প্রধান উপসর্গ হলো ব্যথা। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর বা অনেকক্ষণ বসার পর পা ফেলতে গেলেই ব্যথা শুরু হয়। কিছুক্ষণ হাঁটাহাঁটি করলে ব্যথা আস্তে আস্তে কমে আসে। বিশ্রাম অবস্থায় ব্যথা থাকে না। অনেক সময় ব্যথা এত তীব্র হয় যে, পায়ে ভর দেয়া যায়া না। অতিরিক্ত হাড় পেশি, টেনডন, ফাসা, রক্তনালী ও স্নায়ুকে ট্রাকশন ইনজুরি করে। ফলে টিস্যু জমে থাকে। কখনো কখনো পায়ের তলা লাল হয়, হিলপ্যাড শুকিয়ে যায় এবং পা ফ্ল্যাট হয়; অর্থাৎ পায়ের আর্চ নষ্ট হয়ে যায়।

করণীয় : উপযুক্ত মাপের ও নরম জুতা পরিধানে উপসর্গ লাঘব হবে। হিল ও আর্চ সাপোর্ট জুতা পরিধান করা একান্ত প্রয়োজন। সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর আড়াআড়িভাবে পায়ের তলা ম্যাসাজ করতে হবে। দিনে দু’বার কুসুম গরম পানির সেক বা ঠাণ্ডা সেকে উপসর্গ নিরাময় হবে। পায়ের তলা ও লেগের পেশির স্ট্রেসিং নমনীয় ও শক্তিশালী হওয়ার ব্যায়াম করতে হবে। অ্যানালজেসিক ওষুধ সেবনে ব্যথা কমে আসবে। কখনো কখনো স্থানীয়ভাবে স্টেরয়েড ইনজেকশন পুশ করলে ব্যথা দ্রুত নিরাময় হবে।

ইনজেকশন পুশ করতে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে; অন্যথায় হিলপ্যাড (গোড়ালি) শুকিয়ে যাবে এবং রোগ ত্বরান্বিত হবে। ফিজিক্যাল থেরাপি যেমন এসডব্লিউডি, ইউএসটি এবং ওয়াক্স বাথ ব্যবহারেও উপকার পাওয়া যায়। তবে দুঃখের বিষয় রোগের পুনরাবৃত্তি ঘটে। কারণ, হাড়ের বৃদ্ধি কিছুটা কমিয়ে আনা যায় কিন্তু বিদ্যামান স্পার বা হাড়কে সমূলে নিঃশেষ করা যায় না।

আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারি : মেডিক্যাল চিকিৎসায় ভালো না হলে, রোগের পুনরাবৃত্তি হলে, হিলপ্যাড শুকিয়ে গেলে, পায়ে ভর দিতে অসুবিধা হলে এবং হাড় বাড়তে থাকলে আর্থ্রোস্কোপিক সার্জারির প্রয়োজন হয়। গোড়ালির দুই পাশে ছোট ছিদ্র দিয়ে আর্থ্রোস্কোপ প্রবেশ করিয়ে অতিরিক্ত হাড় সেভিং করে বের করা হয় এবং প্ল্যান্টার ফাসা বিচ্ছেদ করা হয়। এতে রোগের উপসর্গ দ্রুত লাঘব হয়।

 

গোড়ালি মচকে গেলে কী করবেন?

সাধারণত রাস্তাঘাটে হাঁটাচলা করার সময় হোঁচট খেলে পায়ের গোড়ালি মচকে যায়। পড়ে গেলে কিংবা মোটরগাড়ি দুর্ঘটনায় কিংবা যারা নিয়মিত খেলাধুলা করেন, তাদের পায়ের গোড়ালি মচকে যাওয়া কিংবা ভেঙে যাওয়া বিচিত্র কিছু নয়। গর্তে পড়ে গিয়ে, রিকশা বা বাস থেকে নামতে গিয়ে, সিঁড়ি থেকে নামার সময় ধাপে ঠিকমতো পা না পড়লে, খেলাধুলার সময় জুতার সমস্যার কারণে এমনকি বিছানা থেকে উঠতে গিয়েও গোড়ালি মচকাতে পারে।

কী করবেন :

* পায়ে জুতো বা কেডস থাকলে খুলে ফেলুন।

* রোগীকে শুইয়ে দিয়ে তার আহত পায়ের নিচে বালিশ বা কম্বল দিয়ে পা এমন উঁচুতে রাখতে হবে যেন তা হৃদপিণ্ডের লেভেল থেকে ওপরে থাকে।

* গোড়ালির জয়েন্টে একখণ্ড বরফ কিংবা ঠাণ্ডা ভেজা কাপড় কিছুটা সময় চেপে রাখুন। তবে বরফ সরাসরি না দেয়াই ভালো। একটি পরিষ্কার কাপড়ে বরফ পেঁচিয়ে সেটা দিয়ে সেঁক দেয়াটা সঠিক পদ্ধতি। আঘাত পাওয়ার প্রথম ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা অথবা ফোলা না কমা পর্যন্ত প্রতি দুই থেকে তিন ঘণ্টা পরপর ১০ থেকে ২০ মিনিট পরে আইস প্যাক লাগান। এতে ফোলা অনেকটা কমে যাবে।

* কোনো ধরনের তেল কিংবা হাত দিয়ে জায়গাটি মালিশ করবেন না।

* মোটা কাপড় দিয়ে গোড়ালির কিছুটা ওপর থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত পেঁচিয়ে কিংবা মোটা কাপড়ের মধ্যে পা ঢুকিয়ে তারপর ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে ফেলুন।

* মোটা কাপড় না থাকলে তুলোর প্যাড ব্যবহার করে তারপর ব্যান্ডেজ বাঁধুন।

* বাঁধনটি যেন খুব শক্ত না হয়ে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

* রোগীকে পায়ের ওপর দাঁড় করানো কিংবা হাঁটতে বলা যাবে না।

* যদি হাড় সরে যায়, তাহলে তা টেনে ঠিক করার চেষ্টা করবেন না।

* এরপর রোগীকে স্ট্রেচারে করে হাসপাতালে পাঠান। হাসপাতালে পাঠানোর সময় খেয়াল রাখবেন যেন গোড়ালিতে চাপ না পড়ে।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্র্রমাটোলজি বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, অর্থোপেডিকস ও ট্রমা বিভাগ, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল। চেম্বার : পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার লিঃ, ২, ইংলিশ রোড, ঢাকা। ফোন: ০১৬৭৩৪৪৯০৮৩ (রোমান)


আরো সংবাদ



premium cement
উপজেলা নির্বাচন : কেন্দ্রে থাকবে সর্বোচ্চ পুলিশ-আনসার ফেসবুকে ভিডিও দিয়ে মাসে লাখ টাকা আয় মুন্নার নোয়াখালীতে পানিতে ডুবে দুই ভাইয়ের মৃত্যু বেনাপোলে সামুদ্রিক মাছের ট্রাকে ৪৭০ কেজি চিংড়ি আটক তাপমাত্রা ছাড়িয়েছে ৪৩ ডিগ্রি, লোডশেডিং রেকর্ড ৩২০০ মেগাওয়াট যথাযথ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালন করুন : শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় বিআরটিএ অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ লঙ্কান প্রিমিয়ার লিগে খেলতে চান তামিম-মুশফিক বরিশালে ২ শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ছাত্রলীগের মারধর পাংশায় সজনে পাড়তে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যু কক্সবাজারে পুলিশের অভিযানে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবা জব্দ

সকল