২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পাইলস ফিস্টুলা এনালফিশার ও ক্যান্সার চিকিৎসায় সফলতা

-


পাইলস, ফিস্টুলা, পায়ুপথে রক্তক্ষরণসহ পায়ুপথের নানাবিধ জটিল স্বাস্থ্য সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রোগীরা হাতুড়ে ডাক্তার কর্তৃক অপচিকিৎসার শিকার হয়ে আসছে দীর্ঘ দিন ধরে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগীরা যে বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হন না তা নয়। তবে এদের সংখ্যা নিতান্তই অপ্রতুল। এর একটা কারণ অবশ্যই আছে, আর তা হচ্ছেÑ গোপন এ স্থানের সমস্যার কথা রোগীরা প্রকাশ করতে চান না। বিশেষ করে মহিলা রোগীদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা আরো বেশি। তবে আশার কথা সাম্প্রতিক বছরগুলোয় পাইলস, ফিস্টুলা, রেকটাল ক্যান্সার এসবের চিকিৎসা ও অপারেশনের ক্ষেত্রে এক বিপ্লব সৃষ্টি করেছেন এ দেশের সার্জন লেখক নিজেই। তিনি ১৯৯৪ সালে সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ল্যাপরোস্কপি সার্জারির ওপর এবং পরে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে হেপাটোবিলিয়ারি ও কলোরেক্টাল সার্জারি বিভাগে এক বছর রেজিস্ট্রার হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে আসেন। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, তিনি বাংলাদেশে ক্যারিয়ার করতে চেয়েছিলেন ল্যাপরোস্কপি সার্জারির ওপর। অর্থাৎ পেট না কেটে গলব্লাডারের পাথর অপসারণ করতে চান তিনি। বাংলাদেশে অবশ্য গলব্লাডারের পাথরের রোগীর সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। সম্ভবত আত্মীয়তা অথবা পরিচয় সূত্রে তিনি দেখা করলেন ইত্তেফাকের জেনারেল ম্যানেজার এককালের বিশিষ্ট সাংবাদিক খন্দকার শাহাদাৎ হোসেনের সাথে। তিনি লেখককে পাঠালেন আমার কাছে। উদ্দেশ্য, স্বাস্থ্য পাতায় লেখালেখি করবেন। লেখকের ইচ্ছে হলো তিনি সিঙ্গাপুরে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন ল্যাপরোস্কপি সার্জারির ওপর। প্রতিষ্ঠা পেতে চান ল্যাপরোস্কপি সার্জন হিসেবে। আমি তার কাছে বিস্তারিত জেনে তাকে ল্যাপরোস্কপিক সার্জন হিসেবে ক্যারিয়ার করতে নিরুৎসাহিত করি। কারণ সে সময় বাংলাদেশে ল্যাপরোস্কপিক সার্জারির ক্ষেত্রে নতুন বিপ্লব সৃষ্টি হয়েছে। আর এ বিপ্লবের পেছনেও রয়েছে ইত্তেফাকের অপরিমেয় অবদান। কারণ এ দেশে ল্যাপরোস্কপি সার্জারিকে জনপ্রিয় করতে সদ্য পিএইচডি করে জাপান থেকে দেশে ফেরা ডা: সরদার এ নাঈমকে উৎসাহিত করে ইত্তেফাকই সর্বপ্রথম এ দেশে ল্যাপরোস্কপি সার্জারির প্রসারে অবদান রাখে। এর আগে প্রতি বছর হাজার হাজার রোগী গলব্লাডারের পাথর ও অন্যান্য সমস্যাজনিত রোগী ভারতসহ বিদেশে যেত। ডা: নাঈমের পথ ধরে এ দেশে তৈরি হয়েছে এ পর্যন্ত শতাধিক ল্যাপরোস্কপিক সার্জন। আজ আর গলব্লাডারের পাথর অপারেশনে রোগীরা বিদেশে যায় না। যা হোক, লেখক যেহেতু ইত্তেফাকের মহাব্যবস্থাপকের মাধ্যমে আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন, সে কারণে ল্যাপরোস্কপিক সার্জারির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে একটা ধারণা দিতে চেষ্টা করলাম। বরং লেখকের কথামতো জানতে পারলাম, তিনি সিঙ্গাপুরে শুধু ল্যাপরোস্কপি সার্জারির ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন তাই নয়, তিনি পাইলস, ফিস্টুুলার ওপরও বিশেষ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন এবং অপারেশন ছাড়াই পাইলসের চিকিৎসা করা যায় এমন একটি ধারণা দিলেন। আমি আর কালবিলম্ব না করে তাকে পাইলস, ফিস্টুলাসহ পায়ুপথের বিশেষজ্ঞ হিসেবে ক্যারিয়ার করতে পরামর্শ দিলাম এবং তিনি প্রথমত রাজি ছিলেন না, তথাপি টেস্ট কেস হিসেবে আমার কথামতো পাইলস ও ফিস্টুলার ওপর ইত্তেফাকের স্বাস্থ্য পাতায় কয়েকটি লেখা দিলেন। কিন্তু রোগীরা বেশ খানিকটা সাড়া দিলো। যারা দীর্ঘ দিন ধরে পাইলস, ফিস্টুলার রোগে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছিলেন তারা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন। লেখক সার্জনের চেম্বারে রোগীদের ভিড় পড়তে থাকল। পাইলস, ফিস্টুলা চিকিৎসার ক্ষেত্রে তিনি হয়ে উঠলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী সার্জন। স্বীকৃতি মিলল আন্তর্জাতিকপর্যায়ে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃস্থানীয় কলোরেক্টাল সার্জনরা তাকে বিশ্বের ব্যস্ততম ‘পায়ুপথ সার্জারি বিশেষজ্ঞ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তিনি সম্প্রতি বৃহদান্ত্র ও পায়ুপথ সার্জারিতে নেতৃস্থানীয় ভূমিকা পালনের স্বীকৃতিস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রের বিরল সম্মানজনক ‘ইন্টারন্যাশনাল স্কলারশিপ’ অর্জন করেন। প্রতি বছর ‘যুক্তরাষ্ট্রের সোসাইটি অব কোলন অ্যান্ড রেক্টাল সার্জনস’ একজন বিদেশী বিশেষজ্ঞকে এই স্কলারশিপ প্রদান করে। এ বছর বাংলাদেশের কলোরেক্টাল সার্জন এই লেখক এ সম্মান অর্জন করে বিশ্ববাসীকে হতবাক করে দিয়েছেন। বাংলাদেশের একজন বিশেষজ্ঞ সার্জনের এ কৃতিত্ব চিকিৎসক মহলেও আলোচিত হয়েছে। তিনি ওই স্কলারশিপের সুবাদে যুক্তরাষ্ট্রের সোসাইটি অব কোলন অ্যান্ড রেক্টাল সার্জনসের বার্ষিক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ‘অপারেশন সত্ত্বেও বারবার ফিস্টুুলা হওয়া কি রোগটির ধর্ম? নাকি পূর্ববর্তী অপারেশনের ত্র“টি’ শীর্ষক এক বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ উপস্থাপন করেন। বিশ্বের ৪৬টি দেশের এক হাজার ৬৩২ জন সার্জন তার নিবন্ধ শোনেন এবং তার তথ্য ও উপস্থাপনা প্রশংসিত হয় বলে তিনি জানান এবং স্থানীয় পত্রপত্রিকার কিছু কাটিং দেখান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিখ্যাত তিনটি হাসপাতাল, লাহি ক্লিনিক, ক্লেভল্যান্ড ক্লিনিক ও মায়ো ক্লিনিকে তিন সপ্তাহ প্রশিক্ষণ গ্রহণ ও তার বিষয় বস্তুর ওপর বক্তব্য রাখেন। মায়ো ক্লিনিকের অধ্যাপক বিশ্বের স্বনামধন্য সার্জন সানহাত নিভা টভংস ও অধ্যাপক রজার ডোজয়েস এবং অন্যান্য ক্লিনিক ও হাসপাতাল থেকে লেখককে যেসব সনদপত্র প্রদান করা হয়েছে তাতে কালোরেক্টাল সার্জারির ক্ষেত্রে তার দক্ষতার প্রশংসা করা হয়েছে। এ ছাড়া আমেরিকান সোসাইটি অব কোলন অ্যান্ড রেকটাল সার্জনস এ বছর বিশ্বের ছয়টি দেশের ৪৬ জন সার্জনকে আন্তর্জাতিক ফ্যাকালটি হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছেন। তার মধ্যে বাংলাদেশের এই লেখক সার্জনের নাম অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ওই সোসাইটির ফ্যাকালটিভুক্ত অপর পাঁচটি দেশ হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল ও সুইডেন।
এ কথা বলার অবকাশ নেই, লেখক দেশের একমাত্র কলোরেক্টাল সার্জন। দেশে সরকারি ও বেসরকারিপর্যায়ে বেশ কয়েকজন খ্যাতিমান কলোরেক্টাল সার্জন রয়েছেন। তবে এ কথাও সত্য, লেখক পাইলস-ফিস্টুলা চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাংলাদেশে সুনাম অর্জন করেছেন এবং নতুন পদ্ধতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্যাপক সাড়া পেয়েছেন।

লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ বিশেষজ্ঞ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান (অব:), কলোরেকটাল সার্জারি বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা।
চেম্বার : ইডেন মাল্টি-কেয়ার হসপিটাল, ৭৫৩, সাতমসজিদ রোড, (স্টার কাবাবসংলগ্ন) ধানমন্ডি, ঢাকা।
ফোন : ০১৭৫৫৬৯৭১৭৩-৬

 


আরো সংবাদ



premium cement
বনশ্রীতে কিশোরী গৃহকর্মীর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার সৌদি আরবে আরব ও ইইউ কূটনীতিকদের গাজা নিয়ে আলোচনা ইউক্রেনকে দ্রুত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দিতে যাচ্ছে পেন্টাগন ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৯ মিয়ানমারের জাতীয় গ্রন্থাগারে বাংলাদেশ দূতাবাসের বই অনুদান ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশী প্রভুদের দাসত্ব করছে : কাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু সুলতান মাহমুদকে বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩ বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের চাপায় নিহত ৩ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল

সকল