০২ জুন ২০২৪, ১৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২৪ জিলকদ ১৪৪৫
`

জলবায়ুর ক্ষতির বড় হুমকিতে বাংলাদেশ

-


বৈশিক জলবায়ু পরিবর্তনে দায়ী না থেকেও এখন বড় হুমকিতে বাংলাদেশ। জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নত রাষ্ট্রগুলো বেশি দায়ী থাকলেও ইতোমধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচাইতে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। ফলে দিন দিন বন্যা, ঝড়, সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস, অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি ও লবণাক্ততা ইত্যাদির মাত্রা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। উত্তরাঞ্চলে দেখা দিতে পারে খরা এবং দক্ষিণাঞ্চলে ঝড় ও সাইক্লোনের প্রকোপ বাড়বে। সমুদ্রপৃষ্ঠ স্ফীত হলে বাংলাদেশের নদী-মোহনা ও উপকূলীয় অঞ্চলের লোকদের ওপর নেমে আসবে বিপর্যয়। শত শত বর্গকিলোমিটার উপকূলীয় ও অন্যান্য নিম্নাঞ্চল অধিক মাত্রায় প্লাবিত হবে। বন্যার ব্যাপকতায় মানুষের জীবনধারণ, কৃষি, গবাদিপশু, দালানকোঠা ও ভৌত কাঠামোসহ ব্যাপক হুমকির সম্মুখীন হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দূষণের ১ হাজার ভাগের ১ ভাগের জন্যও বাংলাদেশ দায়ী নয়। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলো দূষণের শীর্ষে থাকলেও বাংলাদেশের মতো তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। তারপরও জাতিসঙ্ঘের হিসেবে বিশে্ব জলবায়ু পরিবর্তনে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৭টি রাষ্ট্রের একটি হচ্ছে বাংলাদেশ।

চলমান সমস্যা মোকাবেলায় দ্রুত পদক্ষেপের তাগিদ দিয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বের ধনী ও উন্নত দেশের প্রায় ১ভাগ মানুষ যে পরিমাণ কার্বন নির্গমণ করে সেই পরিমাণ কার্বন নির্গমন করে বিশ্বের প্রায় ৬৬ ভাগ মানুষ। সেদিক থেকে বাংলাদেশের কার্বন নির্গমনের পরিমাণ খুবই নগণ্য। তারপরও প্রতিনিয়ত দেশ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত বিভিন্ন দুর্যোগ ও বিপদাপন্নতার শিকার হচ্ছে। এজন্য বিশ^কে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর পাশাপাশি ‘নেট জিরো’ নিয়ে কথা বলা বন্ধ করে বাস্তবতার আলোকে সমাধানে এগিয়ে আসতে হবে।
জলবায়ু পরিবর্তনে বায়ু দূষণ, খাদ্য নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন সমস্যা বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র আইসিডিডিআর বলছে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, লবণাক্ততা, সমুদ্র পৃষ্ঠের তাপমাত্রা, বায়ুমণ্ডলীয় কার্বন ডাই-অক্সাইড, বৈশ্বিক উষ্ণতা, গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমনের কারণে ভেক্টর বাহিত রোগ, তাপমাত্রা বৃদ্ধিসহ নানান সমস্যা দিন দিন বাড়ছে।
অন্য দিকে প্রতিষ্ঠানটির এমেরিটাস সায়েন্টিস্ট ও প্রকল্প প্রধান ড. পিটার কিম বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি বাংলাদেশের জন্য বড় হুমকি। এর ফলে যেসব নেতিবাচক প্রভাব সারা বিশ্বে পড়বে তার সবকিছুই বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য। এতে করে পার্শ্ববর্তী বেশ কিছু অঞ্চল নিকট ভবিষ্যতে পানিতে তলিয়ে যেতে পারে। এর কারণে লাখ লাখ মানুষের বাস্তুচ্যুতির আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি শিল্প কারখানায় পণ্য ও কৃষি উৎপাদন হুমকির মুখে পড়বে।

এ বিষয়ে পরিবেশ বিজ্ঞানী ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আবদুর রব নয়া দিগন্তকে বলেন, উন্নত দেশগুলো কার্বন ও গ্রিন হাউস গ্যাস নিঃসরণ বা ‘নেট জিরো’র যে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে বাস্তবে তা অসম্ভব। কারণ নেট জিরো বা কার্বন নিঃসরণ পুরোপুরি বন্ধের অন্যতম প্রধান উপায় গাছ লাগানো।
ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, কার্বন নিঃসরণে দেশগুলো যে পরিমাণের কথা বলছে বাস্তবে তার পরিমাণ বছরে ১৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন টন বেশি। এই পরিমাণ কার্বন নিঃসরণ কমাতে গেলে বিশে^র ৩০০ কোটি গাড়ি চলাচল বন্ধ ও চার বিলিয়ন একর নতুন বনভূমি সৃজন করতে হবে। অর্থাৎ বর্তমানে পৃথিবীতে যে পরিমাণ চাষযোগ্য জমি আছে তার সবটাই প্রয়োজন। এক কথায় কার্বন নিরপেক্ষকরণ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে পৃথিবীর মতো আরেকটি পৃথিবী লাগবে। যা অবাস্তব ও অসম্ভব। সুতরাং চলমান সমস্যা সমাধানে বাস্তবতার আলোকেই বিশ^কে সমাধানের চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।

অন্য দিকে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ও স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমাদ কামরুজ্জামান মজুমদার নয়া দিগন্তকে বলেন, বিশে^ কার্বন নিঃসরণে বাংলাদেশ মাত্র দশমিক শূন্য চার এক ভাগ কার্বন নিঃসরণ করে। যা দেশের লোক সংখ্যার তুলনায় খবুই ন্যায্য। কিন্তু উন্নত রাষ্ট্রগুলো যেপর্যায়ে কার্বন নিঃসরণ করে আজকে উন্নত হয়েছে সেগুলো খুবই উদ্বেগজনক। সার্বিকভাবে বলা যায় বৈশিক জলবায়ু পরিবর্তনে বাংলাদেশ মোটেও দায়ী না কিন্তু বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত একটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে এবং এটির জন্য অবশ্যই উন্নত রাষ্ট্রগুলো বেশি দায়ী।
তার মতে- চীন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর উন্নত রাষ্ট্রগুলো দূষণের শীর্ষে থাকলেও বাংলাদেশের মতো তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না। তারপরও জাতিসঙ্ঘের হিসাবে বিশে^ জলবায়ু পরিবর্তনে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ৭টি রাষ্ট্রের একটি হলো বাংলাদেশ। অথচ দূষণের ১ হাজার ভাগের ১ ভাগের জন্যও বাংলাদেশ দায়ী নয়। তারপরও এখন ক্ষতির বড় ঝুঁকিতে রয়েছে বাংলাদেশ।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সৌদি পৌঁছেছেন ৫৫১১৬ হজযাত্রী, আরো একজনের মৃত্যু ফৌজদারি অভিযোগের রায়ে দোষী ঘোষণার বিরুদ্ধে আপিলের অঙ্গীকার ট্রাম্পের ইউক্রেন শান্তি শীর্ষ বৈঠকের সমর্থন চাইলেন জেলেনস্কি মালয়েশিয়া যেতে না পারা কর্মীদের ভাগ্যে কী আছে, টাকা ফেরত পাবে? ইউরোপীয় পার্লামেন্ট নির্বাচন : ঝুঁকির মুখে যেসব বিষয় ঈদুল আজহার ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু আজ ইসরাইল কি যুদ্ধবিরতি চুক্তি মানবে? ভারতের নির্বাচন : বদলে যাবে বুথ ফেরত সমীক্ষা? কুয়েতের নতুন ক্রাউন প্রিন্স সাবাহ খালেদ আল-সাবাহ পর্দা উঠেছে বিশ্বকাপের, বাউন্ডারি দিয়ে শুরু আসর ট্রাম্পের নির্বাচনী তহবিলে রেকর্ড ৫ কোটি ৩০ লাখ ডলার অনুদান!

সকল