০৩ মে ২০২৪, ২০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আগারগাঁও শিশু হাসপাতালে আগুন

বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেল চিকিৎসাধীন কয়েক শ' শিশু

-


বড় ধরনের অগ্নি দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন কয়েক শ' শিশু। গতকাল শুক্রবার দুপুরে হাসপাতালের পাঁচতলায় কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগে হঠাৎ অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ধোঁয়া বের হতে থাকলে মুহূর্তের মধ্যে আগুনের খবর ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালজুড়ে। এ সময় চিকিৎসাধীন শিশুদের নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন অভিভাবকরা। হাসপাতালের বিভিন্ন
বিভাগ থেকে শিশুদের নিয়ে হুড়োহুড়ি করে ভবনের বাইরে বের হয়ে আসেন স্বজনরা। অসুস্থ শিশুদের নিয়ে তারা হাসপাতালের কম্পাউন্ডে খোলা আকাশের নিচে অবস্থান করেন। প্রচণ্ড রোদ আর গরমের কারণে শিশুরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে।

এদিকে আগুনের খবর পেয়ে একে একে ছুটে আসে ফায়ার সার্ভিসের পাঁচটি ইউনিট। ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তারা জানান, বেলা ১টা ৩৫ মিনিটের দিকে হাসপাতালে আগুন লাগে। বেলা ২টা ৪০ মিনিটের দিকে আগুন পুরোপুরি নেভানো হয়। আগুনে কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের শয্যাসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি পুড়ে গেছে। আগুনের কারণ তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারেনি ফায়ার সার্ভিস।
আগুন নিয়ন্ত্রণ শেষে মোহাম্মদপুর ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মোহাম্মদ ফখরুদ্দিন বলেন, দুপুর ২টা ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা হয়। এরপর আমাদের ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান চালায়। তবে আমরা কোনো ভুক্তভোগীকে পাইনি। আগুন লাগার পরপরই আইসিইউতে থাকা সবাইকে সরিয়ে নিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও রোগীর স্বজনরা। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা বলেন, আমরা ধারণা করছি, আইসিইউর ভেতরে এসি থেকে হয়তো আগুন লেগেছে। তবে তদন্তের পর সঠিক কারণ জানা যাবে।

ফায়ার সার্ভিস, হাসপাতাল সূত্র ও রোগীদের স্বজনরা জানান, দুপুর আনুমানিক দেড়টার দিকে হাসপাতালের পাঁচতলায় অবস্থিত কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের কক্ষে হঠাৎ বিকট শব্দ হয়ে আগুন ধরে যায়। ধোঁয়া ছড়িয়ে পড়লে আইসিইউ কক্ষের বেডে থাকা শিশুদের বাইরে নিয়ে আসেন স্বজন ও নার্সরা। আগুন লাগার খবরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগী ও তাদের স্বজনদের মধ্যে। আগুন থেকে বাঁচতে ছোটাছুটি শুরু করেন সবাই। একপর্যায়ে যে যেভাবে পেরেছেন সেভাবেই তাদের সন্তানদের নিয়ে হাসপাতালের বাইরের ফ্লোরে অবস্থান নেন। আগুন লাগার কারণে অনেক গুরুতর রোগীকেও চিকিৎসা না দিয়ে সেখানে ফ্লোরে রাখা হয়। এছাড়া প্রচণ্ড গরমের কারণে চিকিৎসাধীন শিশুরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়ে।

হাসপাতালের চারতলার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ভর্তি হাজিরা আক্তারের ১৫ মাসের শিশু হাবিবুর রহমান। আগুন লাগার খবর পেয়ে দ্রুত তাকে নিয়ে নিচে নেমে যান হাজিরা আক্তার। তিনি বলেন, একসপ্তাহ আগে আমার শিশুকে নিয়ে এ হাসপাতালে নিয়ে আসি। প্রচণ্ড জ্বরে আক্রান্ত ছিল সে। দুপুরের দিকে হঠাৎ হাসপাতালে মানুষের দৌড়াদৌড়ি লক্ষ্য করি। এর কিছুক্ষণ পরই দেখি কালো ধোঁয়া পুরো ভবনে ছড়িয়ে পড়েছে। এর মাঝে কয়েকজন আগুন আগুন বলে চিৎকার করছে। পরে দ্রুত আমার শিশুকে নিয়ে নিচে নেমে যাই। তিনি বলেন, অসুস্থ শিশুকে নিয়ে প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে রোদের মধ্যে ফ্লোরে অবস্থান করছেন। বাইরে ব্যাপক গরম থাকায় আমার বাচ্চা শুধু কান্নাকাটি করছে। এতে সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

ডায়রিয়ার কারণে গত সাত দিন ধরে শিশু হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিল পাঁচ মাসের শিশু আয়াত। বৃহস্পতিবার তাকে আইসিউ থেকে চতুর্থ তলার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে স্থানান্তর করেন চিকিৎসকরা। আগুন লাগার সাথে সাথে আয়াতের মা নীলা কোনো রকমে তার শিশু বাচ্চাকে নিয়ে নিচে নামেন। নীলা বলেন, হঠাৎ দৌড়াদৌড়ি আর ধোঁয়া দেখে ভয় পেয়ে দ্রুত নিচে নেমে আসি। আমার বাচ্চাটা একসপ্তাহ আইসিইউতে ছিল, সে এখনো পুরপুরি সুস্থ হয়নি। তাকে নিয়ে এই গরমে বাইরে আছি। আবার অসুস্থ হয়ে যায় কি না সেই ভয়ে আছি এখন। তিনি বলেন, তবে পাঁচতলার আইসিইউতে যেসব বাচ্চা ছিল তাদের সমস্যা
হয়েছে। অনেক বাচ্চা আছে যাদের অক্সিজেন ছাড়া নিচে নামানো হয়। তারা এখন কোথায় আছে জানি না। তাদের প্রত্যেকের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। এদিকে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের আইসিইউতে যেসব শিশুরা
চিকিৎসা নিচ্ছে তাদের জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। দশটি অক্সিজেন সিলিন্ডার সংগ্রহ করে আইসিইউ শিশুদের অক্সিজেন সেবা দেয়া হচ্ছে। আইসিইউতে চিকিৎসা নেয়া শিশুদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি :
শিশু হাসপাতালের কার্ডিয়াক আইসিইউতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল বিকেলে শিশু হাসপাতালে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছেন হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম। তিনি বলেন, ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির পাঁচ সদস্যের মধ্যে কার্ডিয়াক আইসিইউ বিভাগের প্রধানকে আহবায়ক করা হয়েছে। এছাড়া কমিটিতে আছেন একজন মেইনটেইন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার, ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, ওয়ার্ড মাস্টার, একজন নার্স ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি। তারা তিন দিনের মধ্যে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেবেন।
তিনি বলেন, এখন আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে সেবা চালু করা। আমাদের নিজস্ব টেকনিক্যাল টিম, ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার, ডিপিডিসি ও ফায়ার সার্ভিস চেক করে যদি সিদ্ধান্ত দেয় তাহলে আমরা নিচতলার সেবা থেকেই চালু করতে চাই। এভাবে ধীরে ধীরে আমরা সব ফ্লোরের সেবা চালু করতে চাই। সেবা শুরু করার কাজ শুরু হয়ে গেছে। তবে তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্ত ছাড়া কিছু এখন বলতে পারছি না।

গত মঙ্গলবারও শিশু হাসপাতালে আগুন লেগেছিল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, কয়েক দিন আগে পাঁচ নম্বর ওয়ার্ডে আগুনের বিষয়টি বড় কিছু না। খাবার গরম করার চুলায় রোগীর স্বজনের কাপড়ে আগুন লেগেছিল। যা নার্সসহ স্টাফদের চেষ্টায় সাথে সাথে নিভানো হয়। আজকের যে আগুন সেটির বিষয়ে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। হাসপাতালের প্রস্তুতিতে ব্যর্থতা আছে কি না জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, হাসপাতালে দুই শতাধিক এসি রয়েছে। শীত শেষে গরম আসার সাথে সাথে প্রত্যেকটি এসি সার্ভিসিং করা হয়। সেদিনের আগুনের পরই আমাদের নার্সরা ফায়ার এক্সটিংগুইশার দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলেছে। আজকের আগুনে ধোঁয়া বেশি হওয়ার কারণে সেখানে কেউ যেতে পারেনি। যার কারণে আমাদের ফায়ার এক্সটিংগুইশার ব্যবহার করতে পারিনি। ফায়ার সার্ভিসকে জানাতে হয়েছে। দ্রুত ফায়ার সার্ভিস চলে আসায় কোনো হতাহত হয়নি। সবাই নিরাপদে আছে।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement