০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১, ২২ শাওয়াল ১৪৪৫
`


মোনাজ্জেম ভিসা জটিলতা

হাজীদের জন্য বাড়ি ভাড়া করতে পারছে না বেসরকারি এজেন্সিরা

-

চলতি বছরের হজের আর বেশিদিন বাকি না থাকলেও এখনো সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করতে পারেননি বেসরকারি এজেন্সি মালিকরা। মূলত ভিসা জটিলতার কারণে সৌদি যেতে না পারায় বাড়ি ভাড়া করা যায়নি বলে জানিয়েছেন তারা। এ জন্য মালিক বা তাদের প্রতিনিধিদের (মোনাজ্জেম) জন্য তিন মাস থেকে ছয় মাসের মাল্টিপল ভিসা দেয়ার দাবি জানিয়েছে হাব। তবে ধর্মমন্ত্রণালয় এজেন্সি মালিক বা প্রতিনিধিদের 'মোনাজ্জেম ভিসা'র পরিবর্তে 'বিজনেস ভিসা' নেয়ার আহ্বান জানিয়েছে। এ ভিসা নিতে রাজি হলেও তা কাঙ্ক্ষিত সংখ্যায় পাওয়া যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে হাব। ফলে এ নিয়ে জটিলতা এখনো কাটেনি। এ দিকে ৩৫টি হজ এজেন্সি এখন পর্যন্ত সৌদি পর্বের খরচের টাকা না দেয়ায় তাদেরকে শোকজ করেছে ধর্মমন্ত্রণালয়। এ ছাড়া আগামী ২৯ এপ্রিলের মধ্যে সব এজেন্সিকে হজযাত্রীদের ভিসা সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। চাঁদ দেখাসাপেক্ষে আগামী ১৬ জুন পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে। এ জন্য দুই মাসেরও কম সময় বাকি আছে। তবে এখনো সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করতে পারেনি বেসরকারি এজেন্সিগুলো।

এ কারণে হজযাত্রীদের আবাসন নিয়ে এখনো সঙ্কট কাটেনি। এমন প্রেক্ষাপটে গত ১৬ এপ্রিল হাব আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় সংগঠনটির সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম অভিযোগ করেন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কারণে এখনো সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়া করা সম্ভব হয়নি। হজযাত্রীদের বাড়ি ভাড়ার জন্য এজেন্সির প্রতিনিধিদের সৌদিতে যেতে হয়। প্রতি বছর তাদের মাল্টিপল ভিজিট ভিসা দেয়া হয়ে থাকে। পরিচালক হজ অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী এজেন্সিগুলো পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিয়ে ভিজিট ভিসার জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু ধর্ম মন্ত্রণালয় এখনো হজ এজেন্সির প্রতিনিধিদের ভিজিট ভিসার ব্যবস্থা করতে ব্যর্থ হয়েছে। তারা সৌদি আরবে না গেলে বাড়ি ভাড়া সম্পন্ন করা সম্ভব হবে না।

এজেন্সির প্রতিনিধি ছাড়া বাড়ি ভাড়া করা যাবে না এবং বাড়ি ভাড়া করা না গেলে হজ ভিসা করা যাবে না। এ সময় তিনি আরো অভিযোগ করেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় মোনাজ্জেমদের ওমরাহ ভিসায় যেতে বলছে, কিন্তু এখন ওমরাহ ভিসাও বন্ধ হয়ে গেছে। হজ সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নের জন্য মোনাজ্জেমদের তিন মাস থেকে ছয় মাসের মাল্টিপল ভিসা দেয়ার দাবি জানান তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার ধর্মমন্ত্রণালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ঢাকাস্থ রাজকীয় সৌদি দূতাবাস তাদের জানিয়েছে সৌদি আরবে বাড়ি ভাড়াসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য হজ এজেন্সি মালিকদের 'মোনাজ্জেম ভিসা'র পরিবর্তে 'বিজনেস ভিসা' দিচ্ছে। এ ভিসা সংগ্রহ করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রণালয় বলছে- যদি কোনো সমস্যা হয় তা হলে বিষয়টি তাদেরকে জানাতে হবে।

তবে হাব বলছে ভিন্ন কথা। সংগঠনটির সভাপতি এম শাহাদাত হোসাইন তসলিম গতকাল নয়া দিগন্তকে বলেন, যেটি 'মোনাজ্জেম ভিসা' সেটিই 'বিজনেস ভিসা'।

ধর্মমন্ত্রণালয় বুঝতে ভুল করছে। আমাদেরকে বিজনেস ভিসা দিলেও হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয় যে বলছে সৌদি দূতাবাস বিজনেস ভিসা দিচ্ছে সেটিও সঠিকভাবে পাওয়া যাচ্ছে না। ৪০ জন আবেদন করলে হয়তো একজনকে দিচ্ছে। তাহলে সবাই কিভাবে যাবে? ধর্মমন্ত্রণালয় এজেন্সি মালিকদের কাছ থেকে পাসপোর্ট, কাগজপত্র ও টাকা নিয়ে 'বিজনেস ভিসা' করে দিক। তাহলে আর কোনো সমস্যা থাকেনা। এ বিষয়ে হাবের পক্ষ থেকে ধর্মমন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হচ্ছে।

৩৫ এজেন্সিকে শোকজ: এ বছর মোট ২৫৯টি লিড এজেন্সির মাধ্যমে হজযাত্রীরা সৌদি আরবে যাবেন। এসব এজেন্সির কাছ থেকে প্রথমে হজের নিবন্ধনের জন্য হাজী প্রতি দেড় লাখ টাকা করে নেয়া হয়। কিন্তু বারবার তাগাদা দেয়ার পরও ৩৫টি এজেন্সি বাকি টাকা পরিশোধ করেনি। ফলে সৌদি সরকারের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হজের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি করা যায়নি। এতে অনেকের হজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ জন্য ওই সব এজেন্সিকে শোকজ করেছে ধর্মমন্ত্রণালয়। তাদেরকে আগামীকাল রোববারের মধ্যে টাকা পরিশোধ ও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে টাকা জমা না দেয়ার বিষয়ে লিখিত ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ারও হুঁশিয়ারি দিয়েছে ধর্মমন্ত্রণালয়।

২৯ এপ্রিলের মধ্যে ভিসা সম্পন্নের নির্দেশ: বাংলাদেশ থেকে এ বছর মোট ৮৩ হাজার ১৭৮ জন পবিত্র হজ পালন করতে সৌদি আরব যাবেন। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন ৭৮ হাজার ৮৯৫ জন এবং সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাবেন চার হাজার ২৮৩ জন। মোট ২৫৯টি লিড এজেন্সিকে এসব হজযাত্রীর সেবায় নিয়োজিত করা হয়েছে। ধর্মমন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সৌদির রোডম্যাপ অনুযায়ী আগামী ২৯ এপ্রিল হজযাত্রীদের ভিসা দেয়া বন্ধ হয়ে যাবে। এ জন্য এ সময়ের মধ্যেই বাড়ি বা হোটেল ভাড়া ও যাতায়াতের জন্য বাস কোম্পানির সাথে চুক্তি সম্পন্ন করে ভিসা কার্যক্রম শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়।


আরো সংবাদ



premium cement