৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পাঠনির্দেশনা পাননি শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে পাঠদানে মন্থর গতি

-


শিক্ষাবর্ষের তিন মাস শেষ হতে চললেও এখনো নতুন সিলেবাস ও পাঠ পরিকল্পনা পাননি শিক্ষকরা। ফলে শ্রেণী শিক্ষাকার্যক্রমে চলছে মন্থর গতি। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষের পাঠ ও শিক্ষা অর্জন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন অভিভাবকরা। একই সাথে নতুন পাঠ্যসূচির বিষয়ে শিক্ষকরা শতভাগ ওয়াকিবহাল না থাকায় তারাও রয়েছেন অন্ধকারে। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এমন অবস্থায় সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উৎকণ্ঠায় রয়েছেন দেশের অধিকাংশ অভিভাবক। আবার নতুন দু’টি শ্রেণীর তিন বইয়ের পাঠ্যসূচি সংশোধনের কার্যক্রমও এখনো শেষ হয়নি। ফলে শ্রেণিকক্ষে একজন শিক্ষক তার শিক্ষার্থীদের কী পড়াবেন বা কতটুকুই পড়াবেন তারও কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা পাননি। ফলে সঙ্গত কারণেই এ বছর শ্রেণী শিক্ষাকার্যক্রমে সহজেই গতি ফিরছে না।
এ দিকে রাজধানীর বেশ কিছু স্কুলের অভিভাবকের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা নিজেরাই এ বছর এক ধরনের গোলকধাঁধার মধ্যে রয়েছেন। নতুন দু’টি শ্রেণীতে (ষষ্ঠ ও সপ্তম) পরীক্ষা না দেয়ার ঘোষণায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেকটা শিথিলতা চলে এসেছে। আবার অন্যান্য শ্রেণীতেও বছরের শুরুতে যেভাবে সিলেবাস বা পাঠ্যসূচি দেয়া হয় সেটাও এ বছর সেভাবে সব স্কুলে পৌঁছেনি। ফলে অভিভাবক এমনকি শ্রেণিশিক্ষকরাও দোটানায় পড়েছেন। তারা সবাই বলছেন এ বছর নতুন শিক্ষাক্রমের কারণে সবাই তালগোলে পড়ে গেছেন। এ বছর প্রাথমিকের প্রথম শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীতে নতুন শিক্ষাক্রম চালু হয়েছে। আগামী বছর প্রাথমিকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণী এবং মাধ্যমিকের অষ্টম ও নবম শ্রেণী এ শিক্ষাক্রমের আওতায় আসবে।


সম্প্রতি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদফতর এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে প্রচলিত কোনো পরীক্ষা বা মডেল টেস্ট নেয়া যাবে না। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) ম্যানুয়াল অনুযায়ী, আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা গ্রহণ ছাড়াই সারা বছর শিক্ষার্থীদের শিখনকালীন মূল্যায়ন চলবে। বছর শেষে মাত্র একটি পরীক্ষার মাধ্যমে সামষ্টিক মূল্যায়ন করতে হবে।
অন্য দিকে কোনো রকম মাঠজরিপ না করেই নতুন শিক্ষাক্রম চালু করে অনেকটাই বেকায়দায় পড়েছেন খোদ শিক্ষা প্রশাসনও। এ বছর নতুন শিক্ষাক্রম চালু করে দেশজুুড়ে সমালোচনাও কুড়িয়েছে এনসিটিবি। এর প্রথম ধাক্কাটি লেগেছে গত মাসে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞানের অনুসন্ধানী পাঠ্যবই দু’টি প্রত্যাহার করে নেয়ার মাধ্যমে। এরপর ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান অনুশীলনী পাঠ ও ষষ্ঠ শ্রেণীর বিজ্ঞান এই তিনটি বই সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখনো সংশোধনের কাজ শেষ হয়নি। তিন মাস হতে চলছে বই তিনটি ঠিকমতো পড়াতে পারছেন না শিক্ষকরা। নতুন শিক্ষাক্রমের অন্যান্য বইতেও অসংখ্য ভুল আর অসঙ্গতি ধরা পড়েছে। অথচ দু’টি বই প্রত্যাহার করেই যেন দায় সেরেছে কর্তৃপক্ষ।


এ বিষয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) অধ্যাপক মো: মশিউজ্জামান জানান, ‘তিনটি বইয়ের সংশোধন বিষয়ে একটি কমিটি কাজ করছে। কাজ এখনো শেষ হয়নি। আমরা চেষ্টা করছি, যত দ্রুত তা করা যায়। যে দু’টি বই প্রত্যাহার করা হয়েছে ওই দু’টির আরেকটি করে অংশ রয়েছে, যা পড়লে শিক্ষার্থীরা পুরো পাঠই পাবে। আগামী বছরের বইগুলোর ব্যাপারে আমরা আরো সচেতন থাকব। এ বছরের বইগুলোর যথাযথ পরিমার্জন করা হবে আগামী বছর।
সংশ্লিষ্টরা জানান, আগে পাঠ্যবইয়ের কোনো কিছু না বুঝলে সহায়ক বইয়ের সাহায্য নিতেন শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা। কিন্তু নতুন শিক্ষাক্রমের ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর জন্য প্রকাশনী প্রতিষ্ঠানগুলো এখনো সহায়ক বই প্রকাশ করেনি। ফলে শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা অনেক কিছু বুঝে উঠতে পারছেন না। একইসাথে অনেক শিক্ষক জানান, নতুন শিক্ষাক্রমবিষয়ক মাত্র পাঁচ দিনের প্রশিক্ষণে শিক্ষকরা কতটা আত্মস্থ হতে পেরেছেন তা নিয়ে অনেকে সন্দিহান। বাস্তবভিত্তিক ও শিখনকালীন মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত নিয়েও জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। ৪০ থেকে ৪৫ মিনিটের ক্লাসে শিক্ষার্থীদের বোঝানো একজন শিক্ষকের পক্ষে কষ্টকর। নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, বিজ্ঞানাগার ও অন্যান্য শিক্ষা উপকরণ নেই বেশির ভাগ স্কুলে। এটা বড় সমস্যা। এই শিক্ষকরাই যেহেতু সরাসরি শিখনকালীন মূল্যায়ন করবেন, তারা কতটুকু নির্মোহভাবে তা করতে পারবেন সে ব্যাপারে অভিভাবকরা সন্দিহান।

 

 


আরো সংবাদ



premium cement