০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


জামায়াত আমিরের বক্তব্য নিয়ে দেশব্যাপী আলোচনার ঝড়

ডা: শফিকুর রহমান - নয়া দিগন্ত

বিএনপির সাথে জোটগত সম্পর্ক নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানের একটি কর্মসূচিতে দেয়া বক্তব্য নিয়ে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। জামায়াত কি বিএনপির সাথে জোট ভেঙে দিয়েছে? এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে। তবে জামায়াত নেতারা জানিয়েছেন, তাদের আমিরের এ বক্তব্যটি একটি ঘরোয়া বৈঠকে দেয়া। এটি আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা নয়। এ বিষয়ে কোনো ঘোষণা থাকলে তা জামায়াত সংবাদ সম্মেলন অথবা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জাতিকে জানিয়ে দেবে। এ ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচিত করা নিয়েও দেশব্যাপী আলোচনায় উঠে এসেছে। তবে জামায়াত নেতারা দাবি করেছেন এটি তাদের নিয়মিত কাজের অংশ।

জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমানের বক্তব্যের একটি ভিডিও গতকাল সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ওই ভিডিওতে তিনি বলেন, আমরা এতদিন একটা জোটে ছিলাম। ছিলাম বলে আপনারা হয়তো ভাবছেন, কিছু হয়ে গেছে নাকি? আমি বলি হয়ে গেছে। ২০০৬ সাল পর্যন্ত এটি একটি উপকারী জোট ছিল। ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর জোট তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। সেদিন বাংলাদেশ পথ হারিয়েছিল। সেটি আর ফিরে আসেনি। তিনি আরো বলেন, বছরের পর বছর এ ধরনের অকার্যকর জোট চলতে পারে না। এ জোটের সাথে বিভিন্ন দল যারা আছে, বিশেষ করে প্রধান দলের (বিএনপি) এ জোটকে কার্যকর করার কোনো চিন্তা নেই। বিষয়টা আমাদের কাছে স্পষ্ট দিবালোকের মতো এবং তারা আমাদের সাথে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন বাস্তবতা হচ্ছে নিজস্ব অবস্থান থেকে আল্লাহর ওপর ভরসা করে পথচলা। তবে হ্যাঁ, জাতীয় স্বার্থে একই দাবিতে যুগপৎ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবো ইনশা আল্লাহ।

বিএনপির সাথে জোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে জামায়াতের আমির ওই বক্তব্যে বলেন, আমরা তাদের সাথে খোলামেলা আলোচনা করেছি। তারা ঐকমত্য পোষণ করেছে। তারা আর কোনো জোট করবে না। এখন যার যার অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটা দিয়ে সবাই চেষ্টা করতে হবে। যদি আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করেন তাহলে আগামী দিনগুলোতে কঠিন প্রস্তুতি নিতে হবে। অনেক বেশি ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। দোয়া করেন, এসব ত্যাগ যেন আল্লাহর দরবারে মঙ্গলজনক হয়। এ ত্যাগের বিনিময়ে আল্লাহ পাক যেন আমাদের পবিত্র একটি দেশ দান করেন। যে দেশটা কুরআনের আইনে পরিচালিত হবে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবদুল হালিম গতকাল টেলিফোনে নয়া দিগন্তকে বলেন, জামায়াত আমির ঘরোয়া একটি বৈঠকে এ কথা বলেছেন। ঘরোয়া বৈঠকে তো অনেক কথায়ই হয়। এতে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে জোট ছাড়ার কি কোনো ঘোষণা দিয়েছেন? আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণা দিতে হলে আমরা সংবাদ সম্মেলন অথবা প্রেস রিলিজের মাধ্যমে জানাবো।

এ দিকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে ইতোমধ্যে বেশকিছু জেলায় প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে জামায়াত। যদিও দলটির নিবন্ধন বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। এ প্রসঙ্গে মাওলানা আবদুল হালিম বলেন, প্রার্থী চূড়ান্ত করা জামায়াতের নিয়মিত সাংগঠনিক কাজের অংশ। প্রার্থীদের নার্সিং করতে এটা করা হয়। এটি স্বাভাবিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড। এটি বিগত সময়েও করা হয়েছে। এটি বিশেষ কোনো কিছু না।

স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনে ঐক্য করেছিল জামায়াত ও বিএনপি। আলাদা হলেও আওয়ামী লীগ আর বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন দুই জোটের যুগপৎ আন্দোলনেই পতন ঘটে এরশাদের। সংখ্যায় কম অথচ জামায়াতের সমর্থনে ১৯৯১ সালে সরকার গঠন করে বিএনপি। ফিরে আসে সংসদীয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা। ২০০১ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে চারদলীয় জোট করে ফের ক্ষমতায় আসে বিএনপি ও জামায়াত। ২০০৬ সালের পর দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকলেও বিএনপি ও জামায়াতের জোট অটুট থাকে। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে তাদের যুগপৎ কর্মসূচি তেমন দেখা যায়নি।

 


আরো সংবাদ



premium cement