০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


স্বপ্নের সেতুর দুয়ার খুলল

জনগণের শক্তিতে বিশ্বাস করেছি বলেই সম্ভব হলো : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে ‘পদ্মা সেতু’ উদ্বোধন উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত জনতার উদ্দেশে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান; ইনসেটে পদ্মা সেতু উদ্বোধন শেষে দোয়া ও মুনাজাতে অংশগ্রহণ : পিআইডি -

অবশেষে দুয়ার খুলল ১৮ কোটি মানুষের স্বপ্নের পদ্মা সেতুর। প্রমত্তা পদ্মা নদীর ওপর বহুল প্রত্যাশিত এই বহুমুখী সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে দেশের নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে গতকাল সকালে পদ্মা সেতুর ফলক উন্মুক্ত করেন তিনি। আর্থিক, প্রকৌশল এবং রাজনৈতিক ত্রিমুখী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে দীর্ঘতম দ্বিতল সেতুটি উদ্বোধন হওয়ায় বাংলাদেশ তার স্বপ্ন পূরণ প্রত্যক্ষ করছে। স্বপ্নের এই সেতু কেবলমাত্র রাজধানী ঢাকা ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মধ্যে সরাসরি সড়ক ও রেল যোগাযোগই স্থাপন করবে না বরং এটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ব্যাপক সংযোগ ও বাণিজ্যের দ্বার খুলে দিলো। এ উপলক্ষে দেশে উৎসবের একটা আমেজ বিরাজ করে। আজ রোববার থেকে দক্ষিণাঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জনগণ সরাসরি সড়কপথে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবেন। এর মধ্য দিয়ে তারা ফেরিঘাটের যন্ত্রণাদায়ক দুঃস্বপ্ন থেকে মুক্তি পাচ্ছেন। এখন সেতুর ওপর দিয়ে মাত্র ছয় মিনিটে পদ্মা পার হবেন মানুষ। এই সেতু মোট জাতীয় উৎপাদনে ১.২ থেকে ২ শতাংশ যোগ করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অংশ নিতে গতকাল সকাল ১০টায় হেলিকপ্টারে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সমাবেশস্থলে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এতে বিদেশী কূটনীতিকসহ হাজার হাজার বিশিষ্ট অতিথি উপস্থিত ছিলেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ অন্যরা ছিলেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে থিম সঙ বাজানো হয় এবং পদ্মা বহুমুখী সেতুর ওপর একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।
সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে প্রায় ৩২ মিনিটের বক্তব্য শেষে বেলা ১১টা ২৩ মিনিটে তিনি স্মারক ডাকটিকিট, স্যুভেনির শিট, ১০০ টাকা মূল্যমানের স্মারক নোট অবমুক্তসহ উদ্বোধনী খাম ও বিশেষ সিলমোহর উন্মোচন করেন। এরপর সেখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে সেতু সংশ্লিষ্ট দেশী-বিদেশী কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সাথে ফটোসেশনে যোগ দেন। পরে বেলা ১১টা ৫৮ মিনিটে মাওয়া পয়েন্টে টোল পরিশোধের পর উদ্বোধনী ফলক ও বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনার ম্যুরাল-১ উন্মোচনের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। উদ্বোধনের আগে সেখানে মুনাজাতেও অংশ নেন তিনি। এ সময় মুনাজাত পরিচালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
এরপর তিনি বেলা ১২টা ১০ মিনিটে মাওয়া পয়েন্ট থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা পয়েন্টের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন। এ সময় তিনি সেতুর মাঝে দাঁড়িয়ে কিছু সময় পদ্মার আকাশে বিমান মহড়াসহ সেতু ও নদীর নান্দনিক সৌন্দর্য উপভোগ করেন। প্রধানমন্ত্রী বেলা ১২টা ৩৫ মিনিটে জাজিরা পয়েন্টে পৌঁছে সেতু ও অনুরূপ আরেকটি ম্যুরাল-২ এর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন। সেখানেও দোয়া ও মুনাজাত করা হয়।
নিজ হাতে টোল প্রদানের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা বহুমুখী সেতু অতিক্রমের টোল প্রদান প্রক্রিয়ার উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন টোল প্রধানের মাধ্যমে পদ্মা সেতু পার হওয়া প্রথম ব্যক্তি। পরে তিনি জনসমাবেশে যোগ দিতে সেতুর অপরপ্রান্তের জাজিরা পয়েন্টে যান। সেখানে শিবচরের কাঁঠালবাড়ীতে জনসভায় বক্তব্য রাখেন।
২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর প্রথম স্প্যান স্থাপনের মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু দৃশ্যমান হয়। পরে একের পর এক ৪১টি স্প্যানের সব ক’টি ৪২টি পিলারের ওপর স্থাপন করা হয়। ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর এর সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে ৬.১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই বহুমুখী পদ্মা সেতুর পুরো অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়। নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নে মোট ৩০ হাজার ৯৩৩ কোটি টাকা ব্যয় হয়। ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শুরু করা হয় এবং প্রধানমন্ত্রী ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর শরীয়তপুর জেলার জারিরা পয়েন্টে নদীশাসন ও পদ্মা বহুমুখী সেতুর মূল নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। প্রধানমন্ত্রী ২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুর আনুষ্ঠানিকভাবে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
মাওয়ায় সুধী সমাবেশ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুকে বাংলাদেশের ‘গর্ব, সম্মান ও মর্যাদার প্রতীক’ আখ্যায়িত করে বলেছেন, সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে সেতুটি এখন প্রমত্তা পদ্মার বুকে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে। আজ পদ্মার বুকে জ্বলে উঠেছে লাল, নীল, সবুজ, সোনালি আলোর ঝলকানি। ৪১টি স্প্যান যেন স্পর্ধিত বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি। গতকাল সকালে মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন। বাসস।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জানি আজকে বাংলাদেশের মানুষ গর্বিত। এই সেতু শুধু ইট-সিমেন্ট-স্টিল-লোহার কংক্রিটের একটি অবকাঠামো নয়, এ সেতু আমাদের অহঙ্কার, আমাদের গর্ব, আমাদের সক্ষমতা আর মর্যাদার প্রতীক। তিনি বলেন, এই সেতু বাংলাদেশের জনগণের। এর সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের আবেগ, আমাদের সৃজনশীলতা, আমাদের সাহসিকতা, সহনশীলতা আর আমাদের প্রত্যয় এবং এই জেদ যে, এই সেতু আমরা তৈরি করবই। যদিও ষড়যন্ত্রের কারণে এই সেতুর নির্মাণ দুই বছর বিলম্বিত হয়। কিন্তু আমরা কখনো হতোদ্যম হইনি, হতাশায় ভুগিনি, আত্মবিশ^াস নিয়ে এগিয়ে চলেছি এবং শেষ পর্যন্ত সব অন্ধকার ভেদ করে আমরা আলোর পথে যাত্রা করতে সক্ষম হয়েছি। বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণের সেই অমোঘ মন্ত্র ‘কেউ দাবায়ে রাখতে পারবা না’র পুনরুল্লেখ করে তিনি বলেন, কেউ দাবায়ে রাখতে পারেনি, আমরা বিজয়ী হয়েছি।
তারুণ্যের কবি সুকান্তের ভাষায় তিনি বলেন, ‘সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী অবাক তাকিয়ে রয়/ জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার/ তবু মাথা নোয়াবার নয়।’ আমরা মাথা নোয়াইনি, আমরা কোনো দিন মাথা নোয়াব না, বঙ্গবন্ধুও কখনো মাথা নোয়াননি।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম পদ্মা সেতুর নির্মাণবিষয়ক সূচনা বক্তৃতা করেন। তিনি প্রকল্প পরিচালক মো: শফিকুল ইসলাম, উপপরিচালক কামরুজ্জামান, প্রজেক্ট ম্যানেজার অ্যান্ড সুপারভিশন কনসাল্ট্যান্ট ররার্ট জন এভিসসহ প্রকল্প বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজনের সাথে অনুষ্ঠানে পরিচয় করিয়ে দেন। পদ্মা সেতুর নির্মাণকারক কোম্পানির পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে পদ্মা সেতুর একটি রেপ্লিকাও উপহার দেয়া হয়। সংশ্লিষ্টদের সাথে ফটো সেশনেও অংশ নেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী তার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ভাষণে বলেন, পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের গুণগত মান নিয়ে কোনো আপস করা হয়নি। এই সেতু নির্মিত হয়েছে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও উপকরণ দিয়ে, সম্পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রেখে। পুরো নির্মাণপ্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে। তিনি বলেন, এ বিশাল কর্মযজ্ঞ থেকে বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে পেরেছেন আমাদের দেশের প্রকৌশলীরা। ভবিষ্যতে নিজেরাই এ ধরনের জটিল সেতু বা অবকাঠামো নির্মাণ করতে সক্ষম হবো আমরা। তিনি বলেন, মাওয়া ও জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, যা মূল সেতুকে জাতীয় সড়ক যোগাযোগ নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত করেছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ সেতুকে ঘিরে গড়ে উঠবে নতুন অর্থনৈতিক অঞ্চল ও হাইটেক পার্ক। ফলে দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবে এবং দেশের শিল্পায়নের গতি ত্বরান্বিত হবে। পদ্মা সেতু এশিয়ান হাইওয়ের সাথে সংযোগের একটি বড় লিংক। পাশাপাশি এ বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল এবং ঢাকায় মেট্রোরেল। ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে উৎপাদন শুরু হবে। ঢাকায় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। সেটিও ২০২৩ নাগাদ চালু হবে, বলেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের একজন স্বনামধন্য ব্যক্তিবিশেষের ষড়যন্ত্রে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধে বিশ্বব্যাংকের পদক্ষেপ এবং তাকে, তার পরিবারের সদস্যরা এবং মন্ত্রিপরিষদ ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দেয়ার অপচেষ্টাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে তা মোকাবেলার ইতিবৃত্তও তুলে ধরেন।
কাঁঠালবাড়িতে বিশাল জনসভা : জনগণ পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং সমর্থন দিয়েছেন বলেই পদ্মা সেতু নির্মাণে সমর্থ হয়েছেন বলে জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের উন্নয়নে জীবন দিয়ে হলেও কাজ করে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ও ব্যক্ত করেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী গতকাল বিকেলে মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কাঁঠালবাড়িতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় সভাপতির ভাষণে এ সব কথা বলেন।
একসময় দেশের অনেক জ্ঞানী-গুণীদের উক্তি ‘নিজেদের টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব নয়’-এর উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজকে নিজেদের টাকায় কিভাবে পদ্মা সেতু করতে পারলাম কারণ, আজকে জনগণ আমাকে সমর্থন দিয়েছেন পাশে দাঁড়িয়েছেন। আর জনগণের শক্তিই সবচেয়ে বড় শক্তি-আমি সেটিতেই বিশ^াস করেছি।’ এ সময় খালেদা জিয়া ও বিএনপি নেতাদের বক্তব্যÑ ‘আওয়ামী লীগ কোনো দিনও পদ্মা সেতু করতে পারবে না’ প্রসঙ্গ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে খালেদা জিয়াকে বলছি আসুন, দেখে যান পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে কি না।’ শেখ হাসিনা বলেন, আজ বাংলাদেশে যেমন আমরা খাদ্য, বিদ্যুৎ ও গৃহহীনদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করেছি এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি। আরো উন্নত জীবন যেন আমাদের দেশের ছেলেমেয়েরা পায় তার ব্যবস্থাও আমি করব।
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ ও সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজমের সঞ্চালনায় দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক ও জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী স্বাগত বক্তব্য রাখেন। দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. এম আবদুর রাজ্জাক, সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য- আবদুর রহমান ও শাহজাহান খান, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, বাগেরহাট-১ আসনের সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর কন্যা এবং অটিজম ও নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিসঅর্ডার বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই পদ্মা সেতু নির্মাণের জন্য ২০০১ সালে তিনি ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করলেও খালেদা জিয়া সরকারের এসে সেই নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। আবার ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে এই পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু করে। পদ্মা সেতু নির্মাণের সময় দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন ড. ইউনূসকে গ্রামীণ ব্যাংকের এমডির পদ থেকে বয়সের কারণে চলে যেতে হলো, তখন তিনি আমেরিকায় গিয়ে তদবির করে ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন বন্ধ করে দিলেন। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর অর্থায়ন বন্ধের পর তার উদ্যোগে জনগণ ব্যাপকভাবে এগিয়ে আসে এবং তার মধ্যেও শক্তি সঞ্চারিত করেছে বলেই আজকে পদ্মা সেতু নির্মাণ সম্ভব হয়েছে। তিনি মহান সৃষ্টিকর্তার কাছেও এ জন্য শুকরিয়া জানান। তার সরকারের বন্যা মোকাবেলার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, সিলেটে বন্যা হচ্ছে সেখানে আমরা ত্রাণ পাঠিয়েছি। এখন বর্ষাকাল এখানেও বন্যা হতে পারে আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি আপনারাও প্রস্তুতি নেবেন। কেননা যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলার শক্তি বাংলাদেশ এবং এর জনগণ রাখে।
পদ্মা সেতুতে দর্শনার্থীদের উচ্ছ্বাস : পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পরপরই উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন দুই প্রান্তের বিপুলসংখ্যক দর্শনার্থী। এদের বেশির ভাগই সেতু দেখতে আসা সাধারণ জনতা। গতকাল দুপুর ১২টার পর মুন্সীগঞ্জের লৌহজং উপজেলার মাওয়া ও শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্ত থেকে সেতুতে হেঁটেই ছুটে যায় হাজারও মানুষ। এ সময় সেখানে নামে জনস্রোত। একনজর পদ্মা সেতু স্বচক্ষে দেখার জন্য উৎসুক জনতাকে সামলে রাখা যায়নি। হেঁটে অনেকেই ছুটে গেছেন এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে। সেতুর নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা কঠোর পাহারার বাঁধ ভেঙেই হেঁটেছেন দুই প্রান্তের জনসাধারণ। কিশোর, তরুণ, এমনকি বৃদ্ধদের আনন্দ যেন ধরে রাখার নয়। সবাই একনজর দেখার জন্য ছুটে গেছেন পদ্মা সেতুর ওপর। ছুটেছেন অদম্য মনোবল নিয়ে। স্বপ্ন পূরণের বাস্তবায়নে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর বুকে এমনই জনস্রোতের চিত্র দেখা গেছে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী। কেউ কেউ সেতুর পাশের সীমানা বেড়া বেয়ে ওঠে। ঘণ্টাখানেক পর সোয়া ২টার দিকে সেতু থেকে জনতাকে সরিয়ে নিতে দেখা যায়। ৩টার দিকে পুরো সেতু খালি হয়ে যায়।
বন্ধুকে সাথে করে জাজিরা প্রান্ত থেকে মোটরসাইকেল চালিয়ে মাওয়া প্রান্তে ছুটে আসেন মাদারীপুরের শিবচরের মো: কাউসার। তিনি বলেন, সামান্য সুযোগ পেয়েছি। তখনই সেতুর উপর ছুটে চলে এসেছি। আমিই প্রথম সেতুতে উঠেছি। এরপর মোটরসাইকেল চালিয়ে মাওয়ায় আসতে পেরেছি। নারায়ণগঞ্জের মো: টুটুল হেঁটে পদ্মা সেতু দেখতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সেতুর উদ্বোধন শেষে অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করার পর ছুটে যাই সেতুর ঢালে। সেখানে অসংখ্য মানুষকে সেতুর দিকে ছুটে যেতে দেখতে পেয়ে আমিও সুযোগ নেই।
জাজিরা প্রান্তে জনজোয়ার : মুন্সীগঞ্জের মাওয়া প্রান্ত থেকে সেতু পেরিয়ে প্রধানমন্ত্রী জাজিরার দিকে আসছেন এমন ঘোষণার পর জাজিরা প্রান্তে সংযোগ সড়ক এলাকায় থাকা লাখো জনতা উল্লাসে ফেটে পড়েন। গাড়ি বহর যখন সংযোগ সড়ক থেকে রিংরোড পার হয়ে যায় ঠিক তখনই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা সদস্যরা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। উচ্ছ্বসিত জনতা সব বাধা উপক্ষো করে ছুটতে থাকে পদ্মা সেতুর দিকে। কোনো বাধাই তাদের দমিয়ে রাখতে পারেনি। দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলা ছাড়াও অন্যান্য জেলা থেকে লাখো মানুষ এসেছে স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান উপভোগ করতে। অংশগ্রহণকারীদের ইচ্ছা ছিল সভাস্থলও ঘুরে দেখার। কোনোটাই পূর্ণ হয়নি শত শত কিলোমিটার দূর থেকে ছুটে আসা মানুষের। তবুও তাদের হতাশায় গ্রাস করতে পারেনি। তাদের মুখে ছিল স্বপ্ন পূরণের হাসি। এমনি একজন হাতেম আলী শেখ। বয়স আশির কোটায় থাকলেও স্বপ্নের পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাহেন্দ্রক্ষণ দেখার লোভ কাজ করছিল তার মনে। তিনি বাগেরহাটের কচুয়া উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা। ৭ ঘণ্টা গাড়িতে করে এসেও সভাস্থলে যেতে পারেননি এই বৃদ্ধ। তবুও তিনি হাসিমুখে সেতুর উদ্বোধনীস্থল ও সভাস্থল থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন স্বপ্নের সেতুর দিকে তাকিয়ে। এ যেন এক স্বপ্ন পূরণের হাসি।
অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি : সেতুমন্ত্রী
বাসস জানায়, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, পদ্মা সেতু নির্মাণের মাধ্যমে আমরা আমাদের অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি। তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সক্ষমতার প্রতীক, এটি সত্য। তার চেয়েও বড় সত্য আমরা আমাদের অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছি।’ মাওয়া প্রান্তে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত সুধী সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
অন্য দিকে মাদারীপুরের শিবচর কাঁঠালবাড়িতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় ওবায়দুল কাদের বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম জনগণের হৃদয়ে চিরদিন গেঁথে থাকবে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী আজকে নিজের নাম পদ্মা সেতুর সাথে যুক্ত করেননি। কিন্তু বাংলার জনগণ জানে, বাংলার জনগণের হৃদয়ে আজকে তিনি যে আবেগ-ভালোবাসা এঁটে দিলেন- যত দিন পদ্মা সেতু থাকবে, তত দিন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আপনাকেও মানুষ স্মরণ করবে। পদ্মা সেতু উদ্বোধন হওয়ায় বিএনপির মুখে শ্রাবণের আকাশের মেঘ এ কথা উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, আজ সবার মুখে আনন্দের হাসি। আর বিএনপির মুখে শ্রাবণের আকাশের মেঘ। মির্জা ফখরুলের মন খারাপ, বুকে বড় ব্যথা, বড় বিষের জ্বালা। জ্বালায়-জ্বালায় মরছে তারা।


আরো সংবাদ



premium cement
মুসলিমদের ঐক্য ও সংহতি বাড়ানোর লক্ষ্যে গাম্বিয়ায় ওআইসির সম্মেলন শুরু ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ও সেনা প্রাঙ্গণ ভবন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে ৩ বাংলাদেশী আহত মধুখালীতে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ট্রাকচালক নিহত, আহত হেলপার বরিশালে নথুল্লাবাদ টার্মিনাল থেকে বাস চলাচল বন্ধ নয়া দিগন্তের শৈলকুপা সংবাদাতার ওপর দুর্বৃত্তদের হামলা ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৯ সুন্দরবনে জ্বলছে আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৫ ইউনিট শায়েস্তাগঞ্জে সাবেক সেনা সদস্য ট্রাকচাপায় নিহত ইসরাইল-গাজা যুদ্ধবিরতি আলোচনা নিয়ে কায়রোতে জোরদার প্রচেষ্টা ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ২৫ ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারী আটক

সকল