তিন বা বেশি স্তরের না হলে ঘরে তৈরি কটন মাস্ক করোনাভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে না। সিনথেটিক কফের ক্ষুদ্র কণাকে মডেল করে বিভিন্ন মাস্ক পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা দেখিয়েছেন যে, বিভিন্ন ধরনের মাস্ক করোনাভাইরাসকে কতটুকু প্রতিরোধ করতে পারছে। গবেষণায় বলা হয়েছে, এন-৯৫ মাস্ক এবং সার্জিক্যাল মাস্ক সবচেয়ে বেশি করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে এবং এই দু’টি মাস্ক ভাইরাস ছড়ানো বন্ধেও সবচেয়ে বেশি সহায়তা করে। তবে ঘরে তৈরি কটন মাস্ক কিছু শর্ত পূরণ করলে বিকল্প হতে পারে বলে তারা বলছেন। গবেষণার এই ফলাফল বিশ্বের স্বল্প আয়ের মানুষের জন্য উপকারী হতে পারে বলে গবেষকরা সুপারিশে বলেছেন। গবেষণাটি করা হয়েছে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে। গত ১৫ সেপ্টেম্বর ‘জার্নাল ফিজিক্স অব ফ্লুইড’ নামক সাময়িকীতে ‘কিছু নির্দিষ্ট শর্ত মেনে কটন মাস্ক তৈরি করে ব্যবহার করলে তা করোনাভাইরাস প্রতিরোধ করে’ বলে গবেষণা প্রতিবেদনটি ছেপেছে।
ভারতীয় বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের গবেষণায় ঘরে তৈরি মাস্ককে কার্যকর হতে হলে কমপক্ষে তিন স্তরের বললেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফল ডিজিজ কনট্রোল (সিডিসি) মাস্কের ব্যাপারে ঘরে কাপড়ের (কটন) মাস্ককে কমপক্ষে দুই স্তর বা তার বেশি হলে ভালো বলে সুপারিশ করেছে। তবে সিডিসি বলেছে, ঘরে তৈরি মাস্ক ব্যবহার করলে তা শ্বাস-প্রশ্বাসের যোগ্য হতে হবে। বহুস্তরবিশিষ্ট করে স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা হলে সে মাস্ক ব্যবহারযোগ্য নয় বলে সিডিসি তার সুপারিশে বলেছে।
উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রাথমিকভাবে বাতাসের ওপর ভর করে দুইভাবে ছড়ায়। এর একটি মাধ্যম হলো- যখন কোনো করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি-কাশি, প্রশ্বাস এবং কথা বলেন তখন সেখান থেকে ভাইরাস ছড়ায়। খোলা স্থানে থুতুর ক্ষুদ্র কণার (ড্রপলেট) মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ থেকে অথবা নাক থেকে বের হলেও এগুলো বেশি দূর যেতে পারে না এবং খুব শিগগিরই মাটিতে পড়ে যায়। আবার আক্রান্ত ব্যক্তির মুখ অথবা নাক থেকে করোনাভাইরাস বেরিয়ে বন্ধ দরজা-জানালা বিশিষ্ট ঘরে অনেকক্ষণ বাতাসে ভেসে বেড়ায়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ফেসমাস্ক এই দুই ধরনের ভাইরাসকে প্রতিরোধ করতে পারে।
এই গবেষণায় দেখা গেছে, সার্জিক্যাল মাস্ক এবং এন-৯৫ মাস্ক করোনাভাইরাস সবচেয়ে বেশি প্রতিরোধ করতে পারে। এ কারণে ইউরোপিয়ান এয়ারলাইনস এবং জার্মান সরকার কাপড়ের তৈরি মাস্ক ব্যবহারকে নিষিদ্ধ করেছে যেন মানুষ সার্জিক্যাল মাস্ক ব্যবহার করে। কিছু মার্কিন বিজ্ঞানীও অবশ্য কটন মাস্ক বাদ দিয়ে সার্জিক্যাল মাস্ক পরার সুপারিশ করেছেন।
ভারতীয় গবেষকেরা রুমাল, কটন টাওয়েল, সার্জিক্যাল মাস্ক এবং এক ধরনের শাল কাপড় নিয়ে করোনা প্রতিরোধ করে কি না তা পরীক্ষা করেন। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সের মেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার সপ্তর্শি বসু বললেন, ‘কটন, টাওয়েলভিত্তিক কাপড়কে সবচেয়ে বেশি কার্যকর পাওয়া গেছে যখন এগুলো বহুস্তরবিশিষ্ট করা হয়েছে।’ তারা তিন বা তার চেয়ে বহুস্তর করে মাস্ক তৈরি করে পরতে বলেছেন। কটনে কফের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাস আটকানোর প্রমাণ পেয়েছেন তারা।
কটনে অপেক্ষাকৃত কম ছিদ্র থাকে বলে ড্রপলেট এই ছিদ্র দিয়ে যেতে জায়গা কম পায়। কটনের বহুস্তর কফের ক্ষুদ্র কণায় (ড্রপলেট) থাকা করোনাভাইরাসকে আটকে দেয়। বহুস্তর বিশিষ্ট কটনমাস্ক ধুয়েও ব্যবহার করা যাবে বলে বলছেন বিজ্ঞানীরা। কিন্তু গবেষকরা বলেছেন, অধিক পরিমাণে ধুয়ে ব্যবহার করলে কটনমাস্কের কার্যকারিতা কমে যায়। তবে তারা এটাও বলছেন যে, পানি ও ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুইলে যে পরিমাণ কার্যকারিতা কমিয়ে দেয় ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না। গবেষণায় ৭০ বার কটনমাস্ক ধুয়ে ব্যবহার করে দেখা গেছে, এতে কার্যকারিতা এতই কম হ্রাস পায় যে তা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা