২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

২০২৫ সালের আগে নতুন বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু না করার সুপারিশ সিপিডির

-

২০২৫ সালের আগে নতুন কোনো বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু না করার সুপারিশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলেছে, দেশের পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হলেও সেই বিদ্যুৎই ব্যবহার করা যাচ্ছে না। ২০২০ সালে উৎপাদিত বিদ্যুতের মাত্র ৬৪ শতাংশ ব্যবহার করা সম্ভব হয়েছে। তাই নতুন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র অনুমতি দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। বেসরকারি এই গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র পরিহার করে নবায়নযোগ্য জ্বালানি দিকে বেশি বিনিয়োগ করার সুপারিশ করেছে। একই সাথে কুইক রেন্টালের মেয়াদ না বাড়ানোর কথাও বলেছে।
গতকাল আগামী অর্থবছরে বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় এসব সুপারিশ করে সিপিডি।
অনুষ্ঠানে সিপিডি চেয়ারম্যান প্রফেসর রেহমান সোবহান বলেন, অনেক বিদ্যুৎকেন্দ্র ইতোমধ্যে অবসরে যাওয়ার কথা থাকলেও তা এখনো চালু রাখা হয়েছে কেন? বলা হচ্ছে, অতিরিক্ত বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছে; কিন্তু এটি বিতরণ ব্যর্থতার জন্য হচ্ছে কি না তা নির্ণয় করা জরুরি হয়ে পড়েছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম। তিনি বলেন, আমাদের ডিস্ট্রিবিউশন ও ট্রান্সমিশন লাইন বাড়ছে। এর ফলে সাধারণ মানুষ সুফল পেতে শুরু করেছে। তিনি বলেন, কুইক রেন্টালগুলোর নতুন করে মেয়াদ বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই। আমরা দেখেছি ২০২০ সালে কুইক রেন্টালের মাত্র এক-তৃতীয়াংশ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু এ খাতে সরকারের খরচ অব্যাহত আছে। গ্রিন এনার্জি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, এক দিকে সরকার বলছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে সড়ে আসবে। অন্য দিকে এই খাতে সরকারি-বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। পুরনো বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো তুলে নেয়া হবে বলা হলেও তা এখনো চালু রয়েছে। ফলে গুনতে হচ্ছে ওভার ক্যাপাসিটি চার্জ। লোডশেডিং শূন্য বলা হলেও এখনো তা রয়ে গেছে। তিনি বিদ্যুৎ উৎপাদন না বাড়িয়ে বণ্টনের দিকে বেশি নজর দেয়ার কথা বলেন।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনে আলোচনার শুরুতে সিপিডির বিশেষ ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিদ্যুৎ খাতে যদি বিনিয়োগ দক্ষতা বাড়ানোর যায় তবে এতে এক দিকে যেমন ভোক্তারা সাশ্রয়ী মূল্য বিদ্যুৎ কিনতে পারবেন। অন্য দিকে ব্যবসায়ীরা উপকৃত হবেন।
বিজিএমইএ পরিচালক আসিফ আশরাফ বিদ্যুতের গুণগত মানের বিষয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করে বলেন, এখানে বিদ্যুৎ আছে; কিন্তু তা গুণগত মান কতখানি তা আমাদের দেখতে হবে। আগে বিদ্যুৎ অনেকক্ষণ ধরে থাকত না। কিন্তু এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। তার পরও এখন প্রতিদিন কিছু সময়ের জন্য বিদ্যুৎ থাকে না। এতে আমাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কারণ ৫ মিনিট বা ১০ মিনিট বিদ্যুৎ না থাকলেও উৎপাদন পুরোদমে শুরু করতে ৩০ মিনিট লেগে যায়। আর এতে পণ্যের গুণতম মানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে আবার উৎপাদন খরচও বেড়ে যায়। তিনি বেজায় যারা শিল্প স্থাপন করেছে তাদের ক্যাপটিভ পাওয়ারের জন্য গ্যাস সংযোগ দেয়ার সুপারিশ করেন।
ইডকলের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মাহমুদ মালিক বলেন, ইডকল পুরোপুরি সরকারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু তার পরও এটি তিন হাজার হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিনিয়োগ করেছে।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা ও বুয়েটের অধ্যাপক ড. এম তামিম কয়লাভিত্তিক জ্বালানি কেন্দ্র নির্মাণের বিষয়ে সরকারের দ্বৈতনীতি সমালোচনা করে বলেন, এক দিকে কাগজে-কলমে বলা হচ্ছে, সরকার কোল পাওয়ারে আর বিনিয়োগ করবে না। কিন্তু অন্য দিকে অষ্টম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা আবার কোল পাওয়ারেই ৮ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশের শতভাগ এলাকায় গ্রিড লাইন নেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। ৯৫ ভাগ এলাকায় এই লাইন গেলেও চলবে। কিন্তু রাজনৈতিক সুবিধা নেয়ার জন্য বলা হচ্ছে দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করা হবে। কিন্তু যে এলাকায় জনসংখ্যার ঘনত্ব কম সেখানে লাইন স্থাপন করে কি লাভ। ওইসব এলাকায় নবায়নযোগ্য জ্বালানি মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব।

 


আরো সংবাদ



premium cement