২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অমানবিকতা : দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সুড়ঙ্গে ঢুকে পড়েছি আমরা

-

সন্তান বাবা-মাকে চিনছে না। বাবা-মা সন্তানকে চিনছে না। স্বামী স্ত্রীকে চিনছে না। আবার স্ত্রী স্বামীকে চিনছে না। মৃত স্বজনের লাশ কেউ গ্রহণ করতে চাইছেন না। করোনা পরিস্থিতিতে কোথাও কোথাও এসব ঘটনা ঘটছে। মানবাধিকারকর্মীরা বলেছেন, এমন অমানবিকতা ছড়িয়ে পড়লে মানবসমাজ দীর্ঘ দিনের ক্ষতির মধ্যে পড়বে। মানুষ তার মানবকিতা হারাবে। মানুষ যাতে এভাবে অমানবিক না হয়ে ওঠে সে জন্য ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানোর কথা বলেছেন মানবাধিকারকর্মীরা। মানবাধিকারকর্মীরা বলেছেন, আমরা দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সুরঙ্গে প্রবেশ করেছি।
গত বৃহস্পতিবারের ঘটনা। ফেরদৌসি বেগম (২৭) নামের এক গৃহবধূ মাথাব্যথা ও শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা নিয়ে ভর্তি হন নরসিংদী হাসপাতালে। সন্ধ্যা ৭টায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ফেরদৌসি বেগমের স্বামী আল আমিন মালদ্বীপ প্রবাসী। তার শ্বশুরবাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর থানার খাল্লা গ্রামে এবং বাবার বাড়ি একই থানার সলিমগঞ্জ গ্রামে। তার স্বামী ১০ বছর ধরে মালদ্বীপ আছেন। নরসিংদী পৌরসভার সালিধা এলাকায় পঞ্চম শ্রেণীতে পড়া ছেলেকে নিয়ে ভাড়া থাকতেন তিনি। ফেরদৌসি বেগম মারা যাওয়ার বিষয়টি তার বাবার বাড়ি এবং শ্বশুরবাড়ির সবাইকে জানানো হয়; কিন্তু করোনা আক্রান্ত সন্দেহে তারা লাশ নিতে অস্বীকার করে। বাবার বাড়ির লোকজনও ফেরদৌসির লাশ নিতে অস্বীকার করে। স্বজনরা লাশ বুঝে নিতে অস্বীকার করায় নরসিংদী মডেল থানার পুলিশ এসে তার লাশ বুঝে নেয়। পুলিশের সদস্যরাই শুক্রবার বাদ জুমা নামাজে জানাজা শেষে ফেরদৌসির লাশটি স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করেন। কবর খোঁড়া থেকে সব কিছুই করেন পুলিশ সদস্যরা।
মানবাধিকারকর্মী মোস্তফা সোহেল নয়া দিগন্তকে বলেন, আসলে অবক্ষয়ের কারণে এমন ঘটনা ঘটছে। মানবিক মূল্যবোধ আমরা আস্তে আস্তে হারিয়ে ফেলছি। আগে কেউ একজন মারা গেলে গ্রামসুদ্ধ মানুষ ছুটে আসত। আর এখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্বজন মারা গেলেও লাশ নিতে অস্বীকার করি। সন্তান মা-বাবাকে চিনছে না, মা-বাবা সন্তানকে চিনছে না। আত্মীয়-স্বজন লাশের ধারেকাছেও যাচ্ছে না। দাফন করতেও কোথাও কোথাও বাধা দিচ্ছে। দাফন সম্পন্ন করার জন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের সহায়তা লাগছে। মোস্তফা সোহেল বলেন, অথচ এই সঙ্কটকালেও আমরা মার্কেটে যাচ্ছি, শপিং করছি, ত্রাণের চাল-অর্থ চুরি করছি। এর সব কিছুর জন্য মূল্যবোধের অবক্ষয়কে দায়ী করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের নৈতিক শিক্ষা থাকলে এগুলো ঘটত না।
মানবাধিকারকর্মী রোড সেইফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, আসলে আমরা একটি দীর্ঘমেয়াদি ক্ষতির সুরঙ্গে ঢুকে পড়েছি। এই সঙ্কটকালেও আমরা সঙ্কীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠতে পারিনি। তিনি বলেন, আমাদের উচিত সমাজের প্রতিটি সেক্টরের মানুষের সমন্বয়ে একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা। মানুষ মারা গেলে লাশ দিয়ে যে জীবাণু ছড়ায় না সেটি ডাক্তারকে বলতে হবে। মসজিদে জামাত হবে কি হবে না তা ইমাম এবং আলেমরা নির্ধারণ করবেন। যিনি যে সেক্টরে আছেন তিনি সেই সেক্টরের দায়িত্ব নেবেন। কিন্তু আমরা সেই জাতীয় সমন্বয় কমিটি করতে পারিনি। সমন্বয়হীনতার অভাবে আমাদের সঙ্কট বাড়ছে। তিনি বলেন, মানুষকে সজাগ করতে হবে। মানুষের মানবিকতা জাগিয়ে তুলতে হবে। মানুষ যাতে অমানবিক না হয় সে জন্য সঠিক বিষয়টি তাদেরকে জানতে দিতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ইউক্রেনকে দ্রত প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র দিতে যাচ্ছে পেন্টাগন ডিএমপির অভিযানে গ্রেফতার ৩৯ মিয়ানমারের জাতীয় গ্রন্থাগারে বাংলাদেশ দূতাবাসের বই অনুদান ক্ষমতায় যেতে বিএনপি বিদেশী প্রভুদের দাসত্ব করছে : কাদের ক্যান্সারে আক্রান্ত শিশু সুলতান মাহমুদকে বাঁচাতে সাহায্যের আবেদন গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩ বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের চাপায় নিহত ৩ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর

সকল