২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
ঢাকায় জুমার নামাজের পর ব্যাপক বিক্ষোভ

বাংলার মাটিতে মোদি পা রাখতে পারবেন না

দিল্লিতে মুসলিম হত্যা এবং নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে রাজধানীতে সমমনা ইসলামী দলগুলোর বিক্ষোভ : নয়া দিগন্ত -

মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের পর ঢাকায় ব্যাপক বিক্ষোভ হয়েছে। সমমনা ইসলামী দলগুলো ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ আলাদাভাবে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বায়তুল মোকাররম ও পল্টন এলাকায় এই বিক্ষোভ প্রদর্শন করে।
এ সময় ভারতের দিল্লিসহ বিভিন্ন স্থানে মুসলমাদের হত্যা ও নির্যাতনের জন্য নরেন্দ্র মোদিকে দায়ী করে তাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়। মোদির আমন্ত্রণ বাতিলের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।
বিক্ষোভ চলাকালীন বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে পুরানা পল্টন মোড় হয়ে কাকরাইল মোড় পর্যন্ত সড়কে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী অংশ নেন এবং মোদিবিরোধী সেøাগান দেন। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত এসব সড়কে যান চলাচল বন্ধ থাকে। এ সময় পুরো এলাকায় পোশাক ও সাদা পোশাকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য মোতায়েন ছিল।
জুমার জামাতের পরপরই বায়তুল মোকারর উত্তর গোটের সিঁড়িতে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমীর সভাপতিত্বে সমমনা ইসলামী দলগুলোর সমাবেশ থেকে আগামী ১২ মার্চ আসরের নামাজের পর রাজধানীতে নরেন্দ মোদির আগমনের প্রতিবাদে মানববন্ধন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এই সময় আল্লামা কাসেমী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, নরেদ্র মোদিকে বাংলার মাটিতে পা রাখতে পারবেন না।
জুমার নামাজের প্রায় এক ঘণ্টা আগ থেকেই বায়তুল মোকাররম লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। মসজিদের জামাত মসজিদের আশপাশ ছাড়িয়ে উত্তর গেটের রাস্তা পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। জুমার জামাত শেষ হওয়ার পর মুনাজাত শেষ হতে না হতেই মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। ভারতে মুসলমানদের হত্যা বন্ধ, মোদিকে ঢাকা না আসার আহ্বানসহ নানা ব্যানার ও প্ল্যাকার্ড বহন করছিল মুসল্লিরা। উত্তর গেটের রাস্তায় নরেন্দ্র মোদির ছবি সংবলিত পোস্টারকে জুতা পেটা করতে দেখা যায়। সমাবেশ ও মিছিলের কারণে মসজিদের ভেতরে হাজার হাজার মুসল্লি আটকা পড়েন। অনেকে দক্ষিণ ও পূর্ব গেট দিয়ে বের হন।
মুহর্মুহু সেøাগানের মধ্যেই সংক্ষিপ্ত সমাবেশে আল্লামা কাসেমী বলেন, নরেন্দ্র মোদির প্রত্যক্ষ মদদে ভারতের পুলিশ এবং উগ্র হিন্দুরা দিল্লিতে মুসলিম গণহত্যা চালিয়েছে, মুসলমানদের ঘর বাড়ি, মসজিদ মাদরাসায় অগ্নিসংযোগ করেছে, সেই নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের মাটিতে পা রাখবে আমাদের দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ তা বরদাশত করবে না।
তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট থাকুক। সরকার সঙ্ঘাতের পথ পরিহার করে মোদির আমন্ত্রণ বাতিল করবে। যদি বাতিল না করে তাহলে আমাদের ঈমানি দায়িত্ব হবে মোদিকে যেকোনোভাবে প্রতিহত করা।
জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা ফজলুল করীম কাসেমীর পরিচালনায় বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন খেলাফত আন্দোলনের আমিরে শরিয়ত মাওলানা শাহ আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সহসভাপতি শায়খুল হাদিস আল্লামা আব্দুর রব ইউসূফী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের, মুসলিম লীগের মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, খেলাফত আন্দোলনের নায়বে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব শায়খুল হাদিস মাওলানা মামুনুল হক, ইসলামী ঐক্য আন্দোলনের মহাসচিব অধ্যাপক মাওলানা মোস্তফা তারেকুল হাসান, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি মুনির হোছাইন কাসেমী খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মুহাম্মদ শফিক উদ্দিন, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালাল উদ্দিন, মাওলানা আতাউল্লাহ আমিন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মতিউর রহমান গাজীপুরী, প্রচার সম্পাদক মাওলানা জয়নুল আবেদীন, খেলাফত মজলিসের সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা তাফাজ্জুল হক মিয়াজী প্রমুখ। ঘোষিত কর্মসূচি অনুয়ায়ী আগামী বৃহস্পতিবার বাদ আসর যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী এবং সদরঘাট থেকে টঙ্গী পর্যন্ত মানববন্ধন করা হবে বলে জানানো হয়।
সমাবেশের পর সমমনা ইসলামী দলের নেতারা পিকআপ ভ্যানে করে মিছিলে অংশ নেন। মিছিলটি বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট, পুরানা পল্টন ও কাকরাইল এলাকা পদক্ষিণ করে।
ইসলামী আন্দোলনের বিক্ষোভ সমাবেশ : এ দিকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম বলেছেন, মুসলিম নির্যাতন, মসজিদে অগ্নিসংযোগ ও মুসলিমগণ হত্যাকারী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের পবিত্র ভূমিতে আসতে দেয়া যাবে না। তিনি আগামী ১৩ মার্চ শুক্রবার সারা দেশে প্রতিটি মসজিদে ভারতে নিহত ও নির্যাতিত মুসলমানদের জন্য বিশেষ দোয়া এবং মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে দেশব্যাপী থানায় থানায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টায় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঢাকা জেলা শাখার উদ্যোগে আয়োজিত বিক্ষোভ-পূর্ব সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। ঢাকা জেলা শাখা সভাপতি সৈয়দ আলী মোস্তফার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুছ আহমাদ, রাজনৈতিক উপদেষ্টা অধ্যাপক আশরাফ আলী আকন, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ সভাপতি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক মাওলানা আহমদ আবদুল কাইয়ুম, ঢাকা মহানগর উত্তর সভাপতি মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সহকারী সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম আতিকুর রহমান, যুবনেতা মাওলানা নেছার উদ্দিন, ঢাকা জেলা সেক্রেটারি শাহাদাত হোসাইন, ডা: কামরুজ্জামান, মুহাম্মদ হাসমত আলী, মাওলানা ইলিয়াস হোসাইন প্রমুখ।
বিক্ষোভ সমাবেশ শেষে একটি বিশাল মিছিল বায়তুল মোকাররম উত্তর গেট থেকে বের হয়ে পল্টন মোড় হয়ে বিজয়নগর নাইটিংগেল পৌঁছলে পুলিশ বাধা দিলে সেখানেই মিছিলের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়।
মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, জনতার তীব্র স্রোত দেখেন। সবেমাত্র এক নম্বর সঙ্কেত দেয়া হলো। দেশের জনতা প্রয়োজনে ১৩ নম্বর সঙ্কেত দেখাবে। তবুও খুনি মোদিকে এ দেশে বরদাশত করবে না। তিনি বলেন, মোদির যে হাতের রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি, সে হাতকে ফুল দিয়ে বরণ করা যাবে না। মোদির যে অপবিত্র পায়ে মুসলমানদের রক্তের ছাপ এখনো বিদ্যমান, তাকে মুসলমানদের এই পবিত্র ভূমিতে লালগালিচা দিয়ে অভ্যর্থনা করতে দেয়া হবে না। মোদিকে আন্তর্জাতিক আদালতের কাঠগড়ায় বিচার করতে হবে এবং নির্যাতিত ও ক্ষতিগ্রস্ত মুসলমানদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এনআরসির নামে ভারতে মুসলিম হত্যা, মুসলিম নিধন এবং মুসলমানদের বিতাড়নের ষড়যন্ত্র বরদাশত করা হবে না। তিনি বলেন, অবিলম্বে মোদির আমন্ত্রণ বাতিল করুন। ইসলামী আন্দোলন শুক্রবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে মর্মে দলের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। দেশব্যাপী বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল সফল করায় দলের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিক মোবারকবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
জাতীয় ইমাম সমাজ : জাতীয় ইমাম সমাজ বাংলাদেশের উদ্যোগে গতকাল শুক্রবার ভারতীয় দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পূর্ব সমাবেশ সংগঠনের সভাপতি ক্বারী আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় নেতৃবৃন্দ কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী ইসলাম ও মানবতার দুশমন মোদি-অমিত শাহ গোষ্ঠীকর্তৃক ইতিহাসের বর্বরোচিত এ হত্যাযজ্ঞের তীব্র ঘৃণা, নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সভাপতি কারি আবুল হুসাইন, সংগঠনের সিনিয়র সহ-সভাপতি মাওলানা বেলায়েত হোসেন আল ফিরুজী, মহাসচিব মুফতি মিনহাজ উদ্দিন, মাওলানা নুরুদ্দীন লাহোরী, মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা জাফর আহমদ প্রমুখ উলামায়ে কেরাম।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন ঢাকা সফরের প্রতিবাদে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ ও সমাবেশ করেছে কয়েকটি ইসলামী দল এবং মুসল্লিরা। গতকাল জুমার নামাজের পর বিক্ষোভ শুরু করে তারা। আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ গেট ও ওয়াসা চত্বরে পৃথক বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ভারতে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন ও মসজিদে আগুন দেয়ার প্রতিবাদ জানান। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণের প্রতিবাদও জানান দলগুলো।
হেফাজতে ইসলাম চট্টগ্রামের আন্দরকিল্লা শাহী জামে মসজিদ চত্বরে জনসমাবেশ হেফাজত ইসলামের চট্টগ্রাম মহানগর সহসভাপতি মাওলানা আলী ওসমান সভাপতিত্ব করেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দিন রুহী। বক্তব্য দেনÑ মাওলানা মুজাম্মেল হক, মাওলানা আতাউল্লাহ, দক্ষিণ জেলা সেক্রেটারি মাওলানা জিয়াউল হাসান, অধ্যাপক খুরশিদ, মাওলানা সরওয়ার, মাওলানা মনসুর, মাওলানা শামসুল হক, মাওলানা তকি ওসমানী, মাওলানা ওসমান কাছেমী, মাওলানা আবু তাহের, কারি ফজলুল করীম জিহাদী, মাওলানা এম এ আবুল কাসেম, মাওলানা মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে গতকাল বাদ জুমা চট্টগ্রাম ওয়াসা চত্বরে সংগঠনের সভাপতি মুহাম্মদ জান্নাতুল ইসলামের সভাপতিত্বে বিশাল সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে আরো বক্তব্য রাখেনÑ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম মহানগরের সহসভাপতি আবুল কাশেম মাতাব্বর, নগর সেক্রেটারি মুহাম্মদ আল ইকবাল, জাতীয় ওলামা মাশায়েখ আইম্মা পরিষদ চট্টগ্রাম মহানগরের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আমজাদ হোসাইন, অধ্যাপক দিদারুল মাওলা, ডা. রেজাউল করীম, মাওলানা মোসলেহ উদ্দিন, তামবীর হোসাইন প্রমুখ।
ফেনী সংবাদদাতা জানান, গতকাল বাদ জুমা ফেনী শহরে বিক্ষোভ মিছিল শেষে ট্রাংক রোডের দোয়েল চত্বরে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত জেলা সভাপতি অধ্যক্ষ নূরুল করিমের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক একরামুল হক ভূঞা, সহ-সভাপতি শাহাদাত হোসাইন কামরুল প্রমুখ।
ঝালকাঠি সংবাদদাতা জানান, গতকাল সন্ধ্যায় ঝালকাঠি প্রেস ক্লাবের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে ফায়ার সার্ভির মোড়ে এসে শেষ হয়। ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি হাফেজ আলমগীর হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন সৈয়দ খলিলুর রহমান, নাছির উদ্দিন মৃধা, মাওলানা হেদায়েতুল্লাহ ফয়োজী প্রমুখ।
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীর মাইজদী, চৌমুহনী, হাতিয়া, কোম্পানিগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে গতকাল জুমার নামাজ শেষে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছে। জেলার প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র চৌমুহনীতে হেফাজত ইসলামের জেলা সিনিয়র সহসভাপতি মাওলানা নিজাম উদ্দিনের সভাপতিত্বে মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেনÑ মাওলানা শিব্বির আহমেদ, মাওলানা আবদুর রহিম শাকের, মাওলানা মোরশেদ আলম মাসুম, মাওলানা খয়েজ, মাওলানা কবির হোসেন প্রমুখ। সমাবেশ শেষে তারা নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিকা দাহ করে।
গোপালগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, গোপালগঞ্জে গতকাল জুমা নামাজের পর স্থানীয় লঞ্চঘাট এলাকা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে ইসলামী আন্দোলন। মিছিলটি জেলা শহরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। পরে সমাবেশে বক্তব্য রাখেনÑ ইসলামী আন্দোলনের গোপালগঞ্জ জেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম মোল্যা, জেনারেল সেক্রেটারি মাওলানা তসলিম হুসাইন প্রমুখ। বক্তারা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে নরেন্দ্র মোদিকে দেয়া দাওয়াত বাতিলের দাবি জানান। অন্যথায় তার আগমন প্রতিহতের ঘোষণা দেন।
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরে গতকাল বাদ জুমা শহরের বিভিন্ন স্থান হতে হেঁটে ও ট্রাকে মিছিলকারীরা জনতা ব্যাংকের মোড়ে সমবেত হন। পরে সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে মুজিব সড়ক হয়ে ফরিদপুর প্রেস ক্লাবের সামনের গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন তারা। ইসলামী আন্দোলন ফরিদপুর জেলা সভাপতি মুফতি মোস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেনÑ মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাকী, মাওলানা সৈয়দ শামসুল হক, মাওলানা মাহমুদুল হাসান, আমিরুল ইসলাম প্রমুখ। বক্তারা ১৭ মার্চ বিমানবন্দরে কাফনের কাপড় পরে অবস্থান নিয়ে মোদির আগমন প্রতিহত করার ঘোষণা দেন।
ভোলা সংবাদদাতা জানান, গতকাল বেলা ৩টার দিকে ইসলামী আন্দোলন ভোলা জেলা শাখার আয়োজনে শহরের হাটখোলা জামে মসজিদের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মী ছাড়াও ১০ সহস্রাধিক মুসল্লি অংশ নেন। মিছিলের আগে শহরের হাটখোলা জামে মসজিদের সামনে প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দেনÑ ইসলামী আন্দোলন ভোলা জেলার সহসভাপতি মাওলানা মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আতাউর রহমান, ভোলা জেলা মুসলিম ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোবাশ্বিরুল হক নাঈম, মাওলানা মজিব উদ্দিন, মুফতি আহমদ উল্লাহ, মাওলানা তরিকুল ইসলাম, মুফতি আব্দুল মমিন, মুহা: হাসেম প্রমুখ।
পঞ্চগড় সংবাদদাতা জানান, গতকাল জুমা নামাজ শেষে পঞ্চগড় জেলা শহরের বিভিন্ন মসজিদ থেকে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে পঞ্চগড় শেরেবাংলা পার্কে জড়ো হন মুসল্লিরা। পরে ইসলামী আন্দোলনের নেতৃত্বে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিল শেষে শেরেবাংলা পার্কে পথসভায় বক্তব্য রাখেনÑ ইসলামী আন্দোলনের পঞ্চগড় সভাপতি মোবাশ্বের হোসেন, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, সৈয়দ সুলতান মাহমুদ, সোহেল রানা, কামরুল হাসান প্রধান প্রমুখ।
জয়পুরহাট সংবাদদাতা জানান, জুমা নামাজের পর ইসলামী আন্দোলন শহরের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। ঘণ্টাব্যাপী এ সমাবেশে বক্তব্য রাখেনÑ জেলা সভাপতি দেওয়ান জহুরুল ইসলাম, নাজমুল হোসেন, বিপ্লব হোসেন প্রমুখ।
সুনামগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, সুনামগঞ্জে বাদ জুমা বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল শহরের ট্রাফিক পয়েন্টে এসে সমবেত হয়। সেখানে সুনামগঞ্জ মদনীয়া মাদরাসার মুহতামিম আব্দুল বছিরের সভাপতিত্বে এক সমাবেশে বক্তব্য দেনÑ আল্লামা নুরুল ইসলাম খান (দরগাপুরী), মাওলানা আনোয়ারুল হোসাইন, আনোয়ার হোসেন লস্কর, জেলা ইমাম মোয়াজ্জিন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা দিলোয়ার হোসেন প্রমুখ। বক্তারা মুজিববর্ষ উদযাপনকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশে এলে মুজিববর্ষের অমর্যাদা হবে।
পটুয়াখালী সংবাদদাতা জানান, ইসলামী আন্দোলন পটুয়াখালী জেলার কমিটির উদ্যোগে গতকাল সকাল ১০টায় লঞ্চঘাট চত্বরে জেলা সভাপতি মুফতি হাবিবুর রহমানের সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রমিক আন্দোলনের সেক্রেটারি আবুল কালাম আজাদ। আরো বক্তব্য দেনÑ জেলা সেক্রেটারি আর আই এম ওয়াহিদুজ্জামান, আবুল হাসান বুখারি, মাস্টার সিদ্দিকুর রহমান, জেলা জাতীয় শিক্ষক ফোরামের সভাপতি মহিউদ্দিন সিকদার, আবুল বশার জিহাদী, অধ্যক্ষ নাজমুল হুদা, ইলিয়াস মোহাম্মদ প্রমুখ। সমাবেশ শেষে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। পরে মিছিলকারীরা নরেন্দ্র মোদির কুশপুত্তলিকা দাহ করে।
নেত্রকোনা সংবাদদাতা জানান, নেত্রকোনায় গতকাল বাদ জুমা বিভিন্ন স্থান থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে মুসল্লিরা মিফতাহুল উলুম মাদরাসা প্রাঙ্গণে জড়ো হয় সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হলে পুলিশ বাধা দেয়। মুসল্লিরা বাধা উপেক্ষা করে মিছিল করে। মাওলানা আবুল কাসেমের সভাপতিত্বে মিছিলপূর্ব সমাবেশে বক্তব্য দেনÑ দিলওয়ার হোসাইন, মাওলানা আসাদুর রহমান আকন্দ, মাওলানা মাজহারুল ইসলাম, মাওলানা আবু সায়েম খান, আব্দুর রহিম প্রমুখ।
গাজীপুর সংবাদদাতা বলেন, গতকাল বাদ জুমা গাজীপুরে সমমনা ইসলামী দলগুলো বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে। মিছিলটি গাজীপুর কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে থেকে শুরু হয়ে গাজীপুর শহর এলাকা প্রদক্ষিণ করে পুনরায় মাসজিদের সামনে এসে শেষ হয়। পরে মাওলানা আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেনÑ ড. মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন, মুফতি নাসির উদ্দিন খান, মাওলানা হারুনর রশিদ, মাওলানা সাখাওয়াত হোসেন, আশরাফ আলী কাজল প্রমুখ।
জামালপুর সংবাদদাতা জানান, ভারতে মুসলিম নির্যাতন, গণহত্যা, পবিত্র মসজিদে অগ্নিসংযোগ এবং নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশে আগমনের প্রতিবাদে জামালপুরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে জেলা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। গতকাল বেলা ৩টার দিকে শহরের পিটিআই গেটের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বকুলতলা মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। ডাক্তার সৈয়দ ইউনুস আহাম্মেদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন মুফতি মোস্তফা কামাল, মাওলানা শফিকুল ইসলাম, মুফতি সালেহ আহমেদ, আশেক মাহমুদ, লিয়াকত হোসাইন প্রমুখ।
মাগুরা সংবাদদাতা জানান, গতকাল বাদ জুমা ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ নোমানী ময়দান থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি ভায়না মোড় ঘুরে আবার নোমানী ময়দানে গিয়ে শেষ হয়। মিছিল শেষে সংক্ষিপ্ত সমাবেশে জেলা নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেন। বক্তারা সরকারের কাছে নরেন্দ্র মোদির সফর বাতিলের দাবিতে অনুরোধ ১৩ মার্চ সব উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের আহ্বান জানান।
শরীয়তপুর সংবাদদতা জানান, ইসলামী আন্দোলন শরীয়তপুর জেলা শাখার উদ্যোগে গতকাল বিকেল ৫টায় পালং উত্তর বাজার জামে মসজিদের সামন থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে জেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে শহরের চৌরঙ্গী মোড়ে এসে শেষ হয়। পরে সেখানে এক প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে বক্তব্য দেনÑ মাওলানা শওকত আলী, মুফতি ফেরদৌস আহম্মেদ, আব্দুস সালাস শিকারী প্রমুখ।
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহীতে গতকাল জুমা নামাজের পর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও তৌহিদি জনতার ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সমাবেশ থেকে ভারতে অন্যায়ভাবে ক্ষমতাসীন সরকারের ছত্রছায়ায় মুসলিম নির্যাতন ও সাম্প্রদায়িক সহিংসতা বন্ধের দাবি জানানো হয়। একইসাথে বক্তারা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর বাতিলের দাবি জানান। সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজশাহী জেলা সভাপতি তাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক হাসিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক তারিক উদ্দিন, যুব আন্দোলনের জেলা সভাপতি মুরশিদ আলম, তৌহিদী জনতার নেতা হাবিবুর রহমান, মিনহাজুর রহমান, মুফতি আবদুস সবুর প্রমুখ বক্তব্য দেন।
নারায়ণগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জে গতকাল জুমার নামাজ শেষে ওলামা পরিষদের ব্যানারে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল হয়। সমাবেশে বক্তব্য দেনÑ নারায়ণগঞ্জ জেলা ওলামা পরিষদের সভাপতি ও হেফাজতে ইসলামের আমির মাওলানা আব্দুল আউয়াল, মাওলানা জাকির হোসেন কাসেমী, মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান, মহানগর খেলাফত মজলিসের সভাপতি ডা: শরীফ মো: মোসাদ্দেক, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সভাপতি মাসুম বিল্লাহ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, আমাদের এই আন্দোলন কোনো সাম্প্রদায়িক আন্দোলন নয়। এখানের সবাই শুধু তাদের ভাইদের রক্তকে মেনে নিতে পারছে না তাই তারা রাজপথে। সরকার তাদের সিদ্ধান্তে অনড় থাকলে হেফাজতের মতো দেশের পাঁচটি পয়েন্টে জমায়েত হয়ে ঢাকাকে অচল করে দেবো।
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানানোর প্রতিবাদে টাঙ্গাইলে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল বিকেলে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ টাঙ্গাইল জেলা শাখা এই প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে। বাদ আসর টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের সামনে থেকে মিছিল বের হয়ে শহরের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। সমাবেশে বক্তব্য রাখেনÑ ইসলামী আন্দোলনের জেলা সভাপতি ছানোয়ার হোসেন, মাওলানা রেজাউল করিম, আব্দুল কাদের, আকরাম হোসেন ও কামরুল ইসলাম।


আরো সংবাদ



premium cement