৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


সৌদিতে হজ তদারকিতে যাওয়া ভিআইপিরাই সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় বাধা

-

হজের মৌসুমে সৌদি আরবে তদারকি করার জন্য হজ প্রশাসনকি দল ও সহায়ক দলের সদস্য হয়ে যাওয়া সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাই অনেক ক্ষেত্রে সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। হজযাত্রীদের সেবা দিতে যাওয়া এই কর্মকর্তাদের খুশি রাখতেই ব্যস্ত রাখতে হয় হজ অফিসের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে। এই দলে অন্তর্ভুক্ত থাকেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে শুরু করে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। পাশাপাশি জাতীয় হজ প্রতিনিধিদলে যাওয়া মন্ত্রী-সচিবদের দেখাশোনার বিষয়ও থাকে।
মূলত সেখানে গিয়ে হজ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিতদের হজ কাউন্সিলর অধীনে কাজ করার কথা। কিন্তু উল্টো জেদ্দা হজ কাউন্সিল এবং মক্কা ও মদিনার হজ অফিসকে ভিআইপিদের দিকেই নজর রাখতে হয়। এই ভিআইপিদের মাঠে গিয়ে হজের কার্যক্রম তদারকি করার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মপরিকল্পনা দিতেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয় সৌদিস্থ হজ ব্যবস্থাপনার নেতৃত্বে থাকা কর্মকর্তাদের। অনেকে প্রথমবারের মতো যান বলে পথ-ঘাট ও ভাষার ব্যাপারে ধারণা না থাকায় নিজেরাই কাজের ক্ষেত্রে আগ্রহী হন না। আবার অনেকে হজ অফিসের নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করার চেয়ে নিজের হজ পালন, ইবাদত বন্দেগি এবং কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় কাটান। অনেকে প্রভাবশালী মন্ত্রণালয়ের হওয়ায় অন্যরা স্বপ্রণোদিত হয়েই তাদের যতœ-আত্তিতে এগিয়ে যান। তবে কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা আন্তরিকভাবে কাজ করে থাকেন।
সম্প্রতি সরেজমিন জেদ্দাস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেট, হজ মিশন ও মক্কা-মদিনাস্থ হজ অফিস এবং সেখানে অবস্থানরত বাঙালি কমিউনিটির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে হজ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কিত এসব বিষয় জানা যায়।
জানতে চাইলে কাউন্সিলর (হজ) মাকসুদুর রহমান এ বিষয়ে বলেন, যারা হজ ব্যবস্থাপায় প্রশাসনিক দল বা অন্য দলের সদস্য হয়ে আসেন বেশির ভাগই আন্তরিকভাবে কাজ করার চেষ্টা করেন। কারো কারো ক্ষেত্রে প্রথমবারের মতো সৌদি আরব আসার কারণে লোকেশন ও ভাষাগত সমস্যার কারণে ইচ্ছা সত্ত্বেও হয়তো কিছুটা সমস্যা হয়।
এই হজ কর্মকর্তা বলেন, হজ ব্যবস্থাপনার জন্য মৌসুমি হজ কর্মী এবং সৌদি আরবে বসবাসরতরাই ভালো ভূমিকা পালন করতে পারেন। হজের সময় প্রচণ্ড ভিড়ে পথ জানা এবং ভাষার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, আমরা হজ গাইডসহ অন্যান্য প্রতিনিধিদলের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবক এবং মৌসুমি হজ কর্মীদের মাধ্যমে হজযাত্রীদের সেবা প্রদানকে গুরুত্ব দেয়ার চেষ্টা করে আসছি। তিনি বলেন, হজ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অন্তত আগে একবার হলেও হজ করেছেন এমন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রাধান্য দেয়ার বিষয়টি আমরা নিজেদের মধ্যেও আলোচনা করি কাজের সুবিধার দিক বিবেচনায় রেখেই।
নাম প্রকাশে সংশ্লিষ্ট অনেকে জানিয়েছেন, হজ প্রশাসনিক ও সহকারী প্রশাসনিক দলে যারা যান তাদের মধ্যে এমনও থাকেন যারা নিজেদের ভিআইপি ভাবেন এবং দেশের মতো অনেকে হজ অফিসেও ভিআইপি প্রটোকলের আশা করেন। কিন্তু হজের সময় হজ কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্টদের বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়। সে ক্ষেত্রে ভিআইপিদের খোঁজ খবর রাখতে হজকর্মীদের মধ্য থেকেই দায়িত্ব ভাগ করে দিতে হয়। এতে মূল কাজে ব্যাঘাত ঘটে।
প্রশাসনিক দলের কাজের বর্ণনা দিতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, এমনও অনেক কর্মকর্তা আছেন তারা হয়তো একটি বাড়ি পরিদর্শন করে এসেই সহকর্মীদের কাছে এমনভাবে গল্প করতে থাকেন যেন, অনেক বড় দায়িত্ব তিনি পালন করছেন। এই কর্মকর্তা বলেন, সরকারি-বেসরকারি সব হজযাত্রীর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব সরকারের। ফলে এক সাথে যখন সোয়া লাখের বেশি বাংলাদেশী হজযাত্রী মক্কা-মদিনায় অবস্থান করেন, তারা আসা-যাওয়া করেন এবং এক মাসেরও বেশি সময় থাকেন তখন নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয়। হজ এজেন্সিগুলোর মধ্যে অনেকের অতি ব্যবসায়িক মানসিকতার কারণে হাজীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। এ ধরনের অনেক সমস্যা তাৎক্ষণিকভাবে সমাধান করতে হয়। কিন্তু যারা প্রশাসনিক দলে যান তাদের মধ্যে অনেককে পদপ্রদর্শনের জন্যই আবার লোক সাথে দিতে হয়। এতে প্রকৃতপক্ষে হজযাত্রীরা কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হন।
গত বছর হজ প্রশাসনিক দলের সদস্য হয়ে সৌদি আরব যান ৫৭ জন। তারা তিন গ্রুপে হজ ফ্লাইট শুরুর আগ থেকে ফ্লাইটের শেষদিন পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৮ সালে যান ৫৩ জন। হজ প্রশাসনিক দলের অফিস আদেশে দায়িত্ব হিসেবে লেখা থাকেÑ হজের সার্বিক কার্যক্রম তদারকি, সমন্বয়, হজযাত্রীদের সেবা ও প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা।
একইভাবে হজ সহায়ক দল হিসেবে গত বছর যান ১১৮ জন। ২০১৮ সালে এই দলে পাঠানো হয়, ১২১ জন। মূলত হজযাত্রীদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এই দলে পাঠানো হয়। এর বাইরে চিকিৎসক ও নার্সদের সমন্বয়ে মেডিক্যাল দল এবং কারিগরি দলের প্রতিনিধিদলও পাঠানো হয়।
গত বছর প্রথমবারের মতো হাজীদের সহায়তা দেয়ার জন্য ৫৮ সদস্যের ওলামা দল পাঠনো হয়। হজ কার্যক্রম তত্ত্বাবধানের জন্য ধর্মপ্রতিমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন ১০ সদস্যের জাতীয় হজ প্রতিনিধিদলে অন্যান্যের মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদাও ছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement