২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ভারতীয় ঋণেই মংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি কমিশনের আপত্তিতে পরামর্শক ব্যয় কমিয়ে ৮৩ কোটি টাকা

-

মংলা বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে ভারত সরকার থেকে ঋণ নেয়া হচ্ছে। ভারতীয় তৃতীয় এলওসির আওতায় এই ঋণ পেতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়ন কমিটির আপত্তির মুখে প্রকল্পে পরামর্শক খাতে ব্যয় ১৩৫ কোটি টাকা কমিয়ে প্রায় ৮৩ কোটি টাকা করা হয়েছে। বিদেশী ঋণের অর্থের একটা বড় অংশই দাতারা নিয়ে যাচ্ছে পরামর্শক খাতে ব্যয়ের শর্ত দিয়ে। এই পরামর্শকদের বেশির ভাগই থাকে ওই দাতাগোষ্ঠীর মনোনীত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে বন্দরের চেয়ারম্যানের জন্য বাংলো নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে সাত কোটি ২০ লাখ টাকা। পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট উইং সূত্র বলছে, বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির চেয়ে একটি বড় অর্থ ব্যয় হচ্ছে বিভিন্ন বিনোদন ও আবাসন স্থাপনা নির্মাণে। তবে পরিকল্পনা কমিশন বলছে, প্রকল্পের যেসব কার্যক্রম ভারতীয় ঠিকাদার দ্বারা সম্পাদিত হবে সেসব কাজে লিমিটেড টেন্ডারিং পদ্ধতি বা এলটিএম অনুসরণ করতে হবে। পণ্যের গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের প্রস্তাবনার তথ্যানুযায়ী, তিন দশকের পুরনো, জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনাল যন্ত্রপাতি দিয়ে চালানো হচ্ছে বন্দরের কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডেলিং কার্যক্রম। সাম্প্রতিককালে মংলা বন্দরের ব্যবহার বৃদ্ধি পেলেও অপারেশনাল যন্ত্রপাতির কোনো উন্নতি হয়নি। পদ্মা সেতু নির্মাণের পর এই বন্দরের কার্গোা হ্যান্ডেলিং প্রতি বছর ৫ থেকে ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। তাই সেতু নির্মাণের আগে মংলা বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। আন্তর্র্জাতিক বাণিজ্য বিবেচনায় মংলা বন্দর কৌশলগত স্থানে অবস্থিত। বাংলাদেশের সমগ্র পশ্চিমাঞ্চল, নেপাল, ভুটান ও ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোয় এ বন্দরের মাধ্যমে মালামাল পরিবাহিত হতে পারে। আঞ্চলিক বাণিজ্যে এ বন্দর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। বর্তমানে ৩৫টি জাহাজ মংলা বন্দরে একই সময়ে বার্থ নিতে পারে। বন্দরে ছয়টি জেটি থাকলেও কোনো ডেডিকেটেড কনটেইনার জেটি নেই।
সম্প্রতি মংলা বন্দরের ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-১১ অর্থবছরে জাহাজ হ্যান্ডেলিংয়ের সংখ্যা ছিল ৯৫, যা ২০১২-১৩ সালে এসে বেড়ে ২৭৫-এ দাঁড়িয়েছে। ২০০৭-৮ সালে ৭.২৩ লাখ মেট্রিক টন এবং ২০ হাজার ৮৮৫ টিইইউএস কার্গো ও কনটেইনার হ্যান্ডেলিং করা হয়। আর ২০১২-১৩ অর্থবছরে এসে তা বৃদ্ধি পেয়ে ৩১.৪৯ লাখ মেট্রিক টন এবং ৪৩ হাজার ৮৭৩ টিইইউএসেএ দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া বন্দরের খাদ্যশস্য ও সার হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণও বেড়েছে। আর খুলনা-মংলা রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্প সম্প্রতি অনুমোদিত হয়েছে। এটা চালু হলে মংলা বন্দরের কার্গো হ্যান্ডেলিংয়ের পরিমাণ বছরে ১৭ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাবে। মংলায় বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপিত হলে নতুন নতুন পণ্য আমদানি-রফতানির দ্বার উন্মোচিত হবে। এ ছাড়া ভারত, নেপাল, ভুটানে ট্রানজিট সুবিধা চালু হলে এ বন্দরে কনটেইনার টার্মিনাল, কনটেইনার হ্যান্ডেলিং ইয়ার্ড, ডেলিভারি ইয়ার্ড, সার্ভিস ভেসেল জেটি প্রভৃতি অবকাঠামো নির্মাণ এবং বিদ্যমান অবকাঠামো সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন। আর এটির অর্থায়ন করা হচ্ছে ভারতীয় তৃতীয় এলওসি থেকে। এ ছাড়া ৫৩ কোটি ডলার ভারতীয় ঋণ নিশ্চিত করা হয়েছে ইআরডি থেকে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় থেকে জানা গেছে, এই বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য ভারত সরকারের তৃতীয় এলওসি থেকে চার হাজার ৪৫৯ কোটি ৪০ লাখ ৯৯ হাজার টাকা ঋণ নেয়া হচ্ছে বা ৫৩ কোটি ডলার ঋণের নিশ্চয়তা পাওয়া গেছে। তবে সক্ষমতা বৃদ্ধির এই প্রকল্পের সর্বশেষ ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ১৪ কোটি ৬১ লাখ ৯০ হাজার টাকা। বাংলাদেশ সরকারকে দিতে হবে ১৫ শ’ ৫৫ কোটি ২০ লাখ ৯১ হাজার টাকা। একনেক থেকে অনুমোদন পেলে আগামী সাড়ে চার অর্থবছরে প্রকল্পটি সমাপ্ত হবে বলে প্রত্যাশা করা হয়েছে। আগামী ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পটি সমাপ্ত হবে। ভারত, নেপাল ভুটানের সাথে ট্রানজিট সুবিধা চালু হলে এই বন্দর ব্যবহারে ব্যাপক চাহিদা ও চাপ তৈরি হবে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে মংলা বন্দর অতিরিক্ত এক কোটি ৫০ লাখ টন কার্গো এবং চার লাখ টিইইউ কনটেইনার হ্যান্ডেল করতে সক্ষম হবে।
প্রস্তাবনার ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, প্রকল্পের আওতায় ১১টি কম্পোনেন্টে অবকাঠামো নির্মাণ, সম্প্রসারণসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি কেনা হবে। বন্দরের ইয়ার্ড নির্মাণ ও কনটেইনার টার্মিনাল নির্মাণে ব্যয় হবে তিন হাজার ২০০ কোটি টাকা। আর আড়াই হাজার কোটি টাকার বেশি যাবে এমটিএ টাওয়ার, পোর্ট রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স ও কমিউনিটি সুবিধাদি নির্মাণে। বন্দর ভবন সম্প্রসারণে যাবে মাত্র প্রায় ৯৬ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন পর্যায়ের জনবলের জন্য বাংলো ও আবাসিক ভবন নির্মাণ, খেলার মাঠ ও স্টেডিয়াম, ক্লাব, ট্রেনিং সেন্টার, শিশুপার্ক, কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণের জন্য ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বিদেশী ঋণের টাকায় এত বিপুল অর্থ ব্যয় করে এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করার যৌক্তিকতা নেই। ওভারপাস নির্মাণের জন্য টেম্পরারি ওয়ার্কসের জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭১ কোটি ২৭ লাখ টাকা।
এ দিকে পরিকল্পনা কমিশন এই প্রকল্পের বেশি কিছু খাতের ব্যয় ও ব্যয়ের অঙ্ক নিয়ে আপত্তি তুলেছে। তাদের মতে, সুচিন্তিত পরিকল্পনা ও মংলা বন্দরের মাস্টার প্ল্যান প্রণয়ন করে তার আলোকে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। শুধু আনুমানিকভাবে লামসাম ব্যয় উল্লেখ করা হয়েছে। সমীক্ষার সাথে প্রকল্পের কার্যক্রমের কিছু গরমিল আছে সেগুলোকে তারা চিহ্নিত করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement
গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরে ইসরাইলি হামলায় নিহত ১৫ মুজিবনগরে ২ চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের সংঘর্ষ, আহত ১৩ বাগেরহাটের রামপালে ট্রাকের চাপায় নিহত ৩ ফিলিস্তিনের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব বিশ্ববিদ্যালয় বিক্ষোভে উত্তাল পূর্ব আফ্রিকায় প্রবল বৃষ্টি ও বন্যা, কমপক্ষে ১৫৫ জনের প্রাণহানি সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে প্রশ্নবিদ্ধ তথ্য প্রচারের নিন্দা ডিআরইউর ভয়াবহ দুর্ঘটনা, অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন উগ্র ইসরাইলি মন্ত্রী শেরে বাংলার সমাধিতে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন হাত কাটা বন্দীর নেতানিয়াহুর সমালোচনা ইসরাইলের আলটিমেটাম, যা বলল হামাস রাশিয়ার প্রতি চীনের সমর্থনের বিরুদ্ধে ব্লিংকেনের হুঁশিয়ারি

সকল