১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাসে ধর্মঘট প্রত্যাহার

পরিবহন ধর্মঘটে অচল দেশ

সড়কে বিচ্ছিন্ন রাজধানী; মানুষের ভোগান্তি চরমে
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইবোর্ড এলাকায় পরিবহন শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ : নয়া দিগন্ত -

পরিবহন ধর্মঘটে অচল হয়ে পড়েছে দেশ। রাজধানী ঢাকার সাথে পুরো দেশের সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আন্তঃজেলা বাস চলাচলও বন্ধ। রাজধানীতে দু-একটি বাস চলতে দেখা গেলেও তা ছিল প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। কোনো কোনো এলাকায় বাস নিয়ে রাস্তায় নামলেও বাধা দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। এমনকি তারা প্রাইভেট যানবাহন চলাচলেও বাধার সৃষ্টি করে। বাসসঙ্কটের কারণে অন্যান্য পরিবহনে গতকাল বুধবার মাত্রাতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়।
পণ্যপরিবহনে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ডাকা হলেও সাথে সাথে গতকাল দেশজুড়ে বাসসহ অন্যান্য পরিবহন ধর্মঘটও শুরু হয়। নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাতিলের দাবিতে এভাবেই বন্ধ থাকে বাস, মিনিবাস, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল।
এদিকে গত রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সাথে বৈঠকে দাবি পূরণের আশ্বাস পেয়ে ট্রাক, বাস কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা।
গত রাত ৯টার পর মন্ত্রীর ধানমণ্ডির বাড়িতে এই বৈঠক শুরু হয়, যাতে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব নজরুল ইসলাম, বিআরটিএ কর্মকর্তারাও ছিলেন।
আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মঘট আহ্বানকারী ট্রাক-কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতাদের মধ্যে বৈঠকে ছিলেন রুস্তম আলী খান, তাজুল ইসলাম, মকবুল আহমেদসহ অন্তত ১০ জন। গভীর রাতে একুশে টেলিভিশন, জাগো নিউজ ও বিডিনিউজও বাস, ট্রাক কাভার্ডভ্যান ধর্মঘট প্রত্যাহারের খবর সম্প্রচার করে।
গত রাত পৌনে ১টায় ধানমন্ডিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাসভবনে পরিবহন মালিক-শ্রমিকদের সাথে বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়।
রাত ১২টা ৫০ মিনিটে সংবাদ সম্মেলনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তারা ধর্মঘট প্রত্যাহারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। আমরা তাদের ৯ দফা দাবি নিয়ে আলোচনা করেছি। লাইসেন্স, ফিটনেস সনদ আপডেটের জন্য তাদের ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে। তারা আইন সংশোধনের যে দাবি জানিয়েছেন সেটা বিবেচনার জন্য সুপারিশ আকারে আমরা যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে পাঠাব। তারা এগুলো বিবেচনা করে আইন মন্ত্রণালয়ের সাথে কাজ করবে।
রাজধানীর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন : গতকাল সকাল থেকেই রাজধানীর সাথে বিচ্ছিন্ন ছিল সারা দেশের সড়ক যোগাযোগ। সকালে রাজধানীর টার্মিনালগুলোতে খবর নিয়ে জানা যায় দেশের দু-একটি অঞ্চল থেকে হাতেগোনা কিছু বাস সকালে রাজধানীতে প্রবেশ করেছে। এ সময় সায়েদাবাদ গিয়ে দেখা যায় কুমিল্লাসহ আশপাশের এলাকা থেকে কিছু বাস আসছে। কিন্তু দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কোনো বাস ঢাকায় আসেনি। সুগন্ধা কাউন্টারের এক কর্মচারী জানান, বরিশালসহ বিভিন্ন এলাকায় রাস্তায় দূরপাল্লার গাড়ি চলাচলে বাধা দেয়া হচ্ছে। যে কারণে কোনো গাড়ি ওই এলাকা থেকে ছেড়ে আসেনি। ইউসুফ নামে এক গাড়িচালক বলেন, সোমবার থেকেই তারা গাড়ি চালানো বন্ধ করে দিয়েছেন। তিনি বলেন, যে আইন হয়েছে তাতে আর গাড়ি চালানো সম্ভব নয়। সিদ্দিকুর রহমান নামে অপর এক চালক বলেন, মঙ্গলবার থেকে তিনি আর গাড়ি চালাচ্ছেন না।
মহাখালী গিয়ে দেখা যায় দিনের বেলায় কোনো গাড়ী টার্মিনালে প্রবেশ করেনি এবং টার্মিনাল থেকে ছেড়েও যায়নি। সেখানে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহন মালিক জানান, তাদের কোনো সমস্যা নেই। আসলে চালকরা গাড়িতে উঠতে চাচ্ছে না। যে কারণে কোনো গাড়ি ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না। ওই মালিক বলেন, চালকদেরকে তো আর গাড়ি চালাতে বাধ্য করা যাবে না। মহাখালী টার্মিনালে মঙ্গলবার রাতে কিছু গাড়ি ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল দিয়ে এসেছে এবং মহাখালী থেকেও মঙ্গলবার রাতে কিছু গাড়ি ছেড়ে গেছে। একই দৃশ্য দেখা গেছে গাবতলী টার্মিনালেও।
পরিবহন শ্রমিকদের মহড়া ও যান চলাচলে বাধা : অঘোষিত বাস ধর্মঘট উপেক্ষা করে যেসব গাড়ি রাস্তায় নামানো হয় তারা কোথাও না কোথাও বাধার সম্মুখীন হয়। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পরিবহন শ্রমিকরা গতকাল সকাল থেকে যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে পরিবহন শ্রমিকরা। নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় রাস্তা বন্ধ করে দেয় তারা। এতে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-কুমিল্লা এবং ঢাকা-নারায়ণগঞ্জসহ ওই রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী সব পরিবহন। এমনকি প্রাইভেট গাড়িও তারা আটকে দেয়। এ সময় অনেক চালক শ্রমিকদের নির্দেশ উপেক্ষা করে গাড়ি চালানোর চেষ্টা করলে তাদেরকে মারধর করাসহ নানাভাবে নাজেহাল করা হয়। প্রাইভেট চালকদের মুখলমণ্ডলে পোড়া মবিল লেপ্টে দেয়ার ঘটনাও ঘটে। দুপুর পর্যন্ত ওই রাস্তা দিয়ে অটোরিকশা পর্যন্ত যাতায়াত করতে পারেনি। বেলা ৩টার দিকে শ্রমিকরা রাস্তার কিছু অংশ ছেড়ে দেয়।
আমিনবাজারেও রাস্তায় যানবাহন চলাচলে বাধা দেয় পরিবহন শ্রমিকরা। গাজীপুরের বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকরা রাস্তা অবরোধ করে যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। টঙ্গীতে বাধা দেয় শ্রমিকরা। রাজধানীর তেজগাঁও, মহাখালী, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, গাবতলী, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকরা যানবাহন চলাচলে বাধা দেয়। যাত্রাবাড়ীতে কয়েক দফায় তারা চালকদের মারধর করে।
ট্রেন ও লঞ্চে উপচে পড়া ভিড় : দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় চাপ পড়েছে লঞ্চ ও ট্রেনের ওপর। গতকাল লঞ্চ ও ট্রেনে উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে গিয়ে দেখা যায় যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। একাধিক যাত্রী বলেছেন, তারা ভিড়ের মধ্যেও ট্রেনে চড়েছেন। ট্রেনে অনেক যাত্রীকে দাঁড়িয়ে যেতে দেখা যায়। একই কায়দায় গতকাল সন্ধ্যায় সদরঘাট টার্মিনালে ছিল বেজায় ভিড়। লঞ্চের ডেকেও যাত্রীদের জায়গা হচ্ছিল না।
রাজধানী ফাঁকা : ধর্মঘটে রাজধানী ছিল গণপরিবহনশূন্য। দু-একটি বাস দেখা গেলেও তাতে তীল ধারণের ঠাঁই ছিল না। আর এই ফাঁকা রাস্তায় পুরো শহর দাপিয়ে বেরিয়েছে রিকশা, অটোরিকশা। ব্যাটারিচালিত রিকশাও গতকাল রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে চলতে দেখা গেছে।
মানুষের ভোগান্তি : পরিবহন ধর্মঘটের কারণে ঢাকার বাইরে মানুষের যেভাবে দুর্ভোগ হয়েছে, রাজধানীর মানুষেরও একই দুর্ভোগ হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষকে হেঁটে চলতে দেখা গেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নারী-শিশু ও বয়স্ক মানুষ। পল্টন এলাকায় রুবেল নামে একজনের সাথে কথা হয়। তিনি জানালেন হেঁটে তিনি রামপুরা থেকে পল্টন পর্যন্ত এসেছেন। যাবেন সদরঘাটে লঞ্চে চড়ার জন্য। বলেন, তার তেমন কষ্ট হচ্ছে না। তবে অনেক বয়স্ক ও নারী-শিশুকে তিনি কষ্ট করে হেঁটে আসতে দেখেছেন। বাস না থাকায় অন্যান্য পরিবহনে মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে। বিশেষ করে রিকশা ও সিএনজি অটোরিকশায় অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয় বলে অভিযোগ মিলেছে। বেশি চাপ থাকায় অ্যাপস নিয়ন্ত্রিত যানবাহনেও অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেক বাইকার অ্যাপস বন্ধ করে চুক্তিতে যাত্রী বহন করেছে বলেও অভিযোগ মিলেছে।
গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ ট্রাক-কাভার্ডভ্যান পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ নতুন সড়ক পরিবহন আইন স্থগিত করে সংশোধনের জন্য ৯ দফা দাবি দেয়। সংগঠনের আহবায়ক রুস্তম আলী খান বলেছেন, ৯ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত পণ্য পরিবহনের মালিক-শ্রমিকরা ধর্মঘট চালিয়ে যাবে। তবে পণ্য পরিবহন ধর্মঘটের ডাক দিলেও বাস শ্রমিকরাও অঘোষিত ধর্মঘট পালন করছে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী গতকালও বলেছেন, ধর্মঘটের সাথে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। মালিক শ্রমিক ঐক্য লীগের সদস্যসচিব ইসমাইল হোসেন বাচ্চুও বলেছেন, এই ধর্মঘটে তাদের সমর্থন নেই। তারা ধর্মঘটের পক্ষে নন।
বগুড়া অফিস জানায়, পরিবহন শ্রমিকদের অঘোষিত ধর্মঘটে গতকাল বুধবার বগুড়ার বিভিন্ন টার্মিনাল থেকে কোনো যানবাহন বের হয়নি। সকালে কিছু গাড়ি টার্মিনাল থেকে বের হলেও সেগুলো শেরপুরের সীমানা থেকে ফিরিয়ে দেয় শ্রমিকরা। দু-একটি গাড়ি চলাচল করলেও দ্বিগুণ ভাড়া আদায় করেছে যাত্রীদের কাছে থেকে। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, সব রুটেই দ্বিগুণের বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে। কিন্তু অন্য উপায় না থাকায় বাধ্য হয়ে যেতে হচ্ছে। এদিকে গাড়ি চলাচল না করায় অনেকেই রেলস্টেশনে ভিড় করছেন।
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনায় গতকাল বুধবার তৃতীয় দিনের মতো বাস চলাচল বন্ধ ছিল। বুধবার সকাল থেকে বাস চলবে এমন খবরে নগরীর সোনাডাঙ্গা কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, রয়্যাল ও শিববাড়ি মোড়ে শত শত যাত্রী জড়ো হন। কিন্তু বাস না ছাড়ায় তাদের চরম বিপাকে পড়তে হয়। পরিবহন ধর্মঘটের পরিপ্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার দুপুরে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতাদের সাথে জেলা প্রশাসনের সভায় অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচলের যে সিদ্ধান্ত হয় তা কার্যকর হয়নি। খুলনা সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত বৈঠকে দুই পক্ষের আলোচনা শেষে মধ্যস্থতার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা চলমান কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে বুধবার সকাল থেকে বাস চালানোর কথা দিয়েছিলেন।
শরীয়তপুর সংবাদদাতা জানান, শরীয়তপুরে গত মঙ্গলবার থেকে ঢাকা-শরীয়তপুরসহ জেলার সব রুটে বাস ধর্মঘট অব্যাহত রয়েছে। বুধবার সকাল থেকে সকল রুটে ট্রাক চলাচলও বন্ধ হয়ে যায়। এতে ঢাকা-শরীয়তপুরসহ ছয়টি উপজেলায় বাস যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করতে চরম দুর্ভোগ পড়েছে বাস যাত্রী, মালামাল পরিবহনকারী ও ব্যবসায়ীরা। পরিবহন ধর্মঘটে জেলার বিভিন্ন হাটবাজারে শাকসবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে গেছে।
মুন্সীগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, মুন্সীগঞ্জের ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন ঢাকা ও শিমুলিয়া ঘাটগামী যাত্রীরা। এছাড়া মুন্সীগঞ্জ-ঢাকা রুটেও বন্ধ রয়েছে বাস চলাচল। গত বুধবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকেই লৌহজং উপজেলার শিমুলিয়া ঘাট থেকে বাস বন্ধ করে দেয় বাস মালিক কর্তৃপক্ষ। ফলে পদ্মা নদীর পার হয়ে শিমুলিয়া ঘাটে এসে বাস না পেয়ে পরিবহন সঙ্কটে পড়েন যাত্রীরা। মুন্সীগঞ্জ-দীঘিরপাড় বাস সার্ভিসের মালিক নুর হোসেন বেপারি জানান, নারায়ণগঞ্জের পাগলা এলাকায় অবস্থানকালে ট্রাক শ্রমিকরা মারধর করে ওই বাস স্টাফদের। এখন ভয়ে কেউ আর বাস চালাতে চাচ্ছেন না।
টাঙ্গাইল সংবাদদাতা জানান, অন্যান্য জেলার মতো টাঙ্গাইলেও পরিবহন শ্রমিকেরা অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন। টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাস টার্মিনাল থেকে প্রায় সব রুটেই বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। এছাড়া ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়েও বন্ধ রয়েছে যানবাহন চলাচল। বুধবার বেলা ১১টার দিকে শ্রমিকরা প্রায় সব রোডে বাস চলচল বন্ধ করে দেয়। বিশেষ করে ময়মনসিংহ, ঢাকা এবং উত্তরবঙ্গগামী বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, পরিবহন শ্রমিকদের ধর্মঘটে গতকাল বুধবার ভোর থেকে যুক্ত হয়েছে কুমিল্লা জেলাও। সকাল থেকে কুমিল্লার সাথে সরাসরি ঢাকা, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়াসহ বেশির ভাগ জেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এতে যাত্রীদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করে। কুমিল্লা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম জানান, বুধবার ভোরে কুমিল্লা থেকে যাত্রী নিয়ে এশিয়া ও তিশা পরিবহনের কয়েকটি গাড়ি ঢাকায় যাওয়ার পথে চিটাগাং রোড অতিক্রম করার পর ক্ষুব্ধ শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়ে, এ সময় কিছু যানবাহন ভাঙচুর করা হয়।
ফরিদপুর সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরেও ধর্মঘটে নেমেছেন পরিবহন ও ভারী যান শ্রমিকেরা। গতকাল বুধবার সকাল ৯টা হতে এ ধর্মঘট শুরু হয়। এর ফলে জেলার লোকাল ও দূরপাল্লা রুটে চলাচলকারী সব বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাশাপাশি বন্ধ রয়েছে ট্রাক চলাচলও। এমনকি প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাসসহ ছোট যানবাহনগুলোও ফরিদপুরের বাইরে যেতে পারছে না পাশের জেলাগুলোর শ্রমিকদের প্রতিরোধের মুখে। এর ফলে ফরিদপুরের সাধারণ যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছে। ফরিদপুরের সাথে যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরাসহ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলায় বাসসহ অন্যান্য গাড়ি যাতায়াত করে। গতকাল সকাল থেকেই সব বন্ধ রয়েছে।
আশুলিয়া (ঢাকা) সংবাদদাতা জানান, দেশব্যাপী অঘোষিত পরিবহন ধর্মঘটের অংশ হিসেবে গতকাল বুধবার আশুলিয়ায় সব সড়ক, মহাসড়ক ও শাখা সড়ক পরিবহনশূন্য হয়ে পড়ে। এ সময় সড়ক ও মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিবহন শ্রমিকদের পিকেটিং করতে দেখা গেছে। দূরপাল্লার পরিবহনের পাশাপাশি স্থানীয় কোনো পরিবহনও চলাচল করতে দেখা যায়নি আশুলিয়ায়। এ সুযোগে সড়কগুলোতে ছিল রিকশা ও নিষিদ্ধ অটো রিকশার রাজত্ব।
হাকিমপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের কারণে হিলি স্থলবন্দর থেকে দেশের অভ্যন্তরে সব ধরনের পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম বিপাকে পড়েছেন বন্দরের ব্যবসায়ীরা। পানামা হিলি পোর্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, বন্দরের অভ্যন্তরে ট্রাকে পণ্য ওঠানামার কাজ স্বাভাবিক চলছে। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় বন্দর অভ্যন্তরে দেশী ট্রাক প্রবেশের সংখ্যা অনেক কমে গেছে।
ভূঞাপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা জানান, টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে গতকাল বুধবার তৃতীয় দিনের মতো বাস ট্রাক চলাচল বন্ধ রেখে ধর্মঘট অব্যাহত রেখেছে শ্রমিকরা। শ্রমিকরা ভূঞাপুর বাসস্ট্যান্ড চত্ত্বরে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের উদ্যোক্তা চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চনের কুশপুত্তলিকায় জুতার মালা পরিয়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া সংবাদদাতা জানান, পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শিল্প ও বন্দরনগরী আশুগঞ্জেও। এর ফলে আশুগঞ্জ সারকারখানা থেকে দেশের সাতটি জেলায় সার সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
শার্শা (যশোর) সংবাদদাতা জানান, গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বন্দরনগরী বেনাপোল থেকে দূরপাল্লার পরিবহন ও বন্দরের পণ্য পরিবহন বন্ধ করে দিয়েছেন যশোর মোটর বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সদস্যরা। যান চলাচল বন্ধ থাকার কারণে ভারত থেকে ফিরে আসা পাসপোর্ট যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হলেও ঢাকা ও খুলনা রুটে ট্রেন চলাচল করায় যাত্রীরা ট্রেনে করে গন্তব্যে যেতে পারছেন।
সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইন বাতিলের দাবিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে ধর্মঘট পালন করেছে পরিবহন চালক ও শ্রমিকরা। গতকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে ৮ ঘণ্টা জনদুর্ভোগের পর বেলা ২টায় অবরোধ তুলে নেয়া হয়। এরপর ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হয়। তবে টানা ৮ ঘণ্টা অবরোধে লাখ লাখ মানুষকে চরম ভোগান্তি আর দুর্ভোগের শিকার হতে হয়।
শেরপুর (বগুড়া) সংবাদদাতা জানান, বগুড়ার শেরপুরে বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গতকাল বুধবার সকাল থেকে যাত্রীসাধারণকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গতকাল সকাল থেকেই কোনো প্রকার পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই যাত্রীবাহী বাস ও আন্তঃজেলা বাস, ট্রাকের চলাচল এবং দূরপাল্লার কোচ বন্ধ রয়েছে। এ প্রসঙ্গে শেরপুর শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ও শ্রমিক ফেডারেশন রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুর রহমান মিলন বলেন, শ্রমিকরা স্বেচ্ছায় কর্মবিরতি করেছেন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, মালিক-শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটে চট্টগ্রাম নগরবাসী ও ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। ট্্রাক-কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম থেকে দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। নগরীতে অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন চলাচলেও বাধার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গতকাল বুধবার সকাল থেকে নগরীর কদমতলী, টাইগারপাস ও দেওয়ানহাট এলাকায় সড়কে ট্্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল করছে সীমিত আকারে। এ ছাড়াও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় সড়কে চলাচলরত অন্যান্য গণপরিবহন চলাচলেও বাধা দিয়েছে তারা। যাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণ এমনকি জোর করে নামিয়ে দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান চলাচল বন্ধ থাকায় বন্দর থেকে আমদানিকৃত পণ্য খালাস ও ডিপো থেকে রফতানি পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহন বন্ধ হয়ে পড়ে। পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় আমদানিকারক, তৈরী পোশাক শিল্প মালিক, রফতানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টসহ সংশ্লিষ্টদের উদ্বেগ বাড়ছে।
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, নতুন সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের দাবিতে সাতক্ষীরায় তৃতীয় দিনের মতো ধর্মঘট পালন করেছে শ্রমিকরা। কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল থেকে গতকাল বুধবার কোনো বাস ছেড়ে যায়নি। বন্ধ রয়েছে অভ্যন্তরীণ রুটের সকল বাস চলাচলও। এ ধর্মঘটের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে। এর ফলে বিপাকে পড়েছে ভোমরা স্থলবন্দরের ব্যবসায়ীরা। ট্রাক ঠিকমতো না পাওয়ায় তাদের দ্বিগুণ খরচে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে। তবে আমদানি-রফতানিতে গতকাল পর্যন্ত তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি বলে জানিয়েছেন শুল্ক স্টেশনের কর্মকর্তারা।
টঙ্গী সংবাদদাতা জানান, গাজীপুরে গণপরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে হামলা, ভাঙচুর চালিয়ে অরাজকতা সৃষ্টি করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় পুলিশ ও সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। গত বুধবার সকাল থেকে গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগ আলী মার্কেট, মিলগেইট, স্টেশন রোড, বোর্ড বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে শ্রমিকরা মহাসড়কে চলাচলকারী যানবাহনের ওপর দফায় দফায় হামলা চালিয়ে মারধর ও ভাঙচুর করে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। ধর্মঘট চলাকালে বিআরটিসির কিছু বাস ছাড়া কোনো পাবলিক পরিবহন চলাচল করেনি। মহাসড়ক ছিল ব্যাটারিচালিত রিকশা, অটো, ইজিবাইক ও অযান্ত্রিক যানবাহনের দখলে।


আরো সংবাদ



premium cement
অপরাজেয় থেকেই বুন্দেসলিগার শিরোপা বুঝে নিল লেভারকুসেন যুদ্ধের সময় নিখোঁজ হাজার হাজার মানুষের ভাগ্য সম্পর্কে শ্রীলঙ্কাকে স্পষ্ট জানাতে হবে : জাতিসঙ্ঘ অনুমোদন ছাড়া কিভাবে ইলেক্ট্রোলাইট ড্রিংকস বিক্রি করছিল কোম্পানিগুলো সরকারি কেন্দ্রে কৃষকেরা ধান বেচতে পারে না, লাভ খাচ্ছে দালালরা গরুর নাম উড়াল সড়ক, ওজন ৩৫ মণ ইরান ২ সপ্তাহের মধ্যে পরমাণু অস্ত্র বানাতে পারবে! বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ভিক্ষুক, মোট সম্পত্তি ৭.৫ কোটি ভারতের কোভ্যাক্সিনেও রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ইসরাইল সরকারে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব : নেতানিয়াহুকে গাঞ্জের পদত্যাগের আলটিমেটাম রাফায় ইসরাইলি হামলা, সরে যেতে বাধ্য হয়েছে ৮ লাখ ফিলিস্তিনি চেন্নাইকে বিদায় করে বেঙ্গালুরুর ‘অবিশ্বাস্য’ প্লে অফ

সকল