আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার চার্জশিট দেয়া হতে পারে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) প্রধান মনিরুল ইসলাম। তিনি বলেন, শিবির সন্দেহে আবরারকে পেটানো হয়েছে বলে আসামিদের জবানবন্দীতে উঠে এসেছে। তবে সব বিষয় খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গতকাল সোমবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
পুলিশের এ কর্মকর্তা বলেন, আবরার হত্যাকাণ্ডের এক সপ্তাহে মধ্যেই এ ঘটনায় ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে ১৫ জন এজাহারভুক্ত আসামি। সিটিটিসি প্রধান বলেন, চারজন এরই মধ্যে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন, তাদের কথায় উঠে এসেছে শিবির সন্দেহে তাকে (আবরার) ডেকে এনে মারধর করা হয়। তাদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ও তথ্যপ্রযুক্তির বিশ্লেষণ এবং অন্যান্য সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আসলে একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে হবে। শুধু শিবির সন্দেহে তাকে পিটিয়েছে না অন্য কোনো কারণ আছে তা আরো তদন্ত ছাড়া যাবে না। তবে পুলিশের তদন্তেও শিবির সন্দেহে আবরারকে পেটানোর বিষয়টি প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে, যোগ করেন পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল।
তিনি বলেন, এই মামলার গ্রেফতার হওয়া বাকি আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদ অব্যাহত রয়েছে। এ ছাড়া আরো যারা পলাতক রয়েছে তাদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।
আবরার হত্যার রাতে পুলিশের ভূমিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, পুলিশ ঘটনার দিন রাত ৩টার পরে হলে গিয়েছে। সে সময়ও পুলিশকে বলা হয়েছে কোনো সমস্যা নেই। ভেতরে সমস্যা না থাকলে পুলিশ হলে ঢোকার রেওয়াজ নেই। সমস্যা থাকলে, কেউ জানালে, তখন তারা ঢুকতে পারে। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে যেটা পেয়েছি, ৩টার বেশ আগেই আবরার মারা গেছে। পুলিশ গিয়েছে অনেক পরে। ফলে কোনো চিৎকার বা শব্দ শোনাও সম্ভব হয়নি।
অনেকে বলছেন মারধর করেছে দুই দফা, তিন দফা। আপনাদের পর্যবেক্ষণ কী বলছেÑ এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, কারো কারো জবানবন্দীতে এসেছে বারবার কয়েক ঘণ্টা মারধর করা হয়েছে আবরারকে।
চার্জশিটের বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরুল ইসলাম বলেন, আগামী নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে আবরার হত্যা মামলার তদন্ত শেষ হবে বলে আশা করছি। আদালত ১৩ নভেম্বর চার্জশিট দেয়ার দিন ধার্য করেছে, তার আগেই তদন্তকাজ শেষ হবে। এরপর চার্জশিট দেয়া হবে।
গত ৬ অক্টোবর রোববার রাত ৩টার দিকে শেরে বাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল (ইইই) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। ওই রাতে হলের ২০১১ নম্বর কক্ষে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন সন্ধ্যার পর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করা হয়। নিহত আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদি হয়ে মামলাটি করেন।
মেহেদী হাসান রবিনের জবানবন্দী
আদালত প্রতিবেদক জানায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। গতকাল সোমবার পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে রবিন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিতে সম্মত হন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো: ওয়াহিদুজ্জামান। তিনি আসামির জবানবন্দী রেকর্ড করার আবেদন করেন। ঢাকা মহানগর হাকিম তোফাজ্জল হোসেন আসামি মেহেদী হাসান রবিনের জবানবন্দী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় রেকর্ড করেন। এরপরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। গত ৮ অক্টোবর রবিনের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
আবরার হত্যা মামলায় এ আসামিসহ মোট পাঁচজন আদালতে স্বীকৃতিমূলক জবানবন্দী দিলো। গত বৃহস্পতিবার বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত উপ-সমাজসেবা সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, শুক্রবার বহিষ্কৃত ক্রীড়া সম্পাদক মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন এবং শনিবার বহিষ্কৃত তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক অনিক সরকার এবং রোববার ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সদস্য মুজাহিদুর রহমান আদালতে দোষ স্বীকার করে জবানবন্দী দেন।
গত ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের দ্বিতীয় তলার সিঁড়ি থেকে অচেতন অবস্থায় আবরার ফাহাদকে উদ্ধার করা হয়। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে সোমবার সন্ধ্যায় চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ।
ফের আন্দোলনে নামছে বুয়েট শিক্ষার্থীরা : বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার বিচারসহ ১০ দফা দাবিতে মঙ্গলবার থেকে আবারো আন্দোলনে নামছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
গতকাল সোমবার বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা চলাকালীন বুয়েটের শহীদ মিনারের সামনে গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালনের সময় এ কথা জানিয়েছে আন্দোলনকারীরা। এর আগে আবরার ফাহাদের খুনিদের বিচারসহ ১০ দফা দাবিতে টানা ছয় দিন ধরে আন্দোলন করছিল শিক্ষার্থীরা। ভর্তি পরীক্ষার কথা বিবেচনা করে তারা তাদের আন্দোলন দুই দিনের জন্য শিথিল করেছিল।
গণস্বাক্ষর কর্মসূচি পালন করা অবস্থায় বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা জানায়, ভর্তি পরীক্ষা উপলক্ষে তাদের আন্দোলন দুই দিনের জন্য শিথিল করা হয়েছিল। যেহেতু দু’দিন গতকাল শেষ হয়ে গেছে তাই মঙ্গলবার থেকে আমরা আবারো আন্দোলন শুরু করব।
এ সময় তারা আরো বলে, আমাদের দাবি ১০ দফা। এই ১০ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।
উল্লেখ্য গত ৫ অক্টোবর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যকার চুক্তি নিয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন আবরার ফাহাদ। স্ট্যাটাসের কারণে বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ২০১১ নম্বর রুমে (টর্চার সেল) নিয়ে আবরারকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে আবরার ফাহাদের নিথর দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এর মধ্যে এজাহারভুক্ত ১৫ জন রয়েছে। পুলিশের তদন্তে নাম আসায় বাকি চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা