১৯ মে ২০২৪, ০৫ জৈষ্ঠ ১৪৩১, ১০ জিলকদ ১৪৪৫
`


ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনে চলতি সপ্তাহেই টাস্কফোর্স গঠন

নেতৃত্বে থাকবেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক অতিরিক্ত সচিব; আইনের সংশোধনের পাশাপাশি আইনের পূর্ণ বাস্তবায়ন জরুরি
-

ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের জন্য চলতি সপ্তাহেই গঠন করা হচ্ছে একটি উচ্চপর্যায়ের টাস্কফোর্স। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে এই টাস্কফোর্স কাজ করবে। কমিটির সদস্য সংখ্যা হতে পারে চারজন। এতে একজন যুগ্ম সচিব এবং দু’জন উপসচিব থাকবেন। টাস্কফোর্স ১৫ থেকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আইনটি সংশোধনের বিষয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে সুপারিশ প্রদান করবে। তবে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে খেলাপি ঋণ আদায়ের পদক্ষেপ নিয়ে সংশয়ও রয়েছে। কারণ বিদ্যমান আইনে অনেক ধারা যথাযথভাবে সঠিক সময়ে পরিপালন করা হচ্ছে না। যদি তা হতো তবে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার অনেক কম হতো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। তাই আইন সংশোধনের পাশাপাশি এর যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসন থাকা জরুরি বলে তারা মত প্রকাশ করেছেন।
গত সপ্তাহে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের বিষয়ে জানতে চাইলে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব মো: আসাদুল ইসলাম এ প্রতিবেদককে বলেছেন, অর্থমন্ত্রী আমাদের যেভাবে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবে আমরা কাজ শুরু করে দিয়েছি। ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের বিষয়ে সুপারিশ দেয়ার জন্য আগামী সপ্তাহেই (চলতি সপ্তাহে) একটি কমিটি বা টাস্কফোর্স গঠন করা হবে। এই টাস্কফোর্স যে সুপারিশ দেবে তা অর্থমন্ত্রীর কাছে উপস্থাপন করা হবে।
উল্লেখ্য, নতুন দায়িত্বভার গ্রহণ করে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য আমাদের যা যা করার প্রয়োজন আমরাই তাই করব। এ বিষয়ে আমরা ব্যাংক কোম্পানি আইনও সংশোধন করব।
এদিকে বর্তমানে খেলাপি ঋণ পরিস্থিতি আদায়ের হার এবং আইনটি সংশোধনের বিষয়ে গত সপ্তাহ জুড়েই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিভিন্ন অংশীজনের সাথে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারি বিভিন্ন ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের বিষয়ে বেশ কিছু প্রস্তাব এসেছে। প্রস্তাবগুলো এখন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে।
বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধন করে খেলাপি ঋণ আদায় করার বিষয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক সূত্র জানায়, খেলাপি ঋণ আদায়ের জন্য বিদ্যমান ব্যাংক কোম্পানি আইন সংশোধনের তেমন কোনো কারণ আছে বলে মনে হয় না। কারণ বিদ্যমান আইনই বা আমরা কতটুকু প্রয়োগ করতে পারছি? এই আইনে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনেক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা কী তা সময়মতো প্রয়োগ করতে পারছে? তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ৪৪ (১) ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোম্পানি আইনে ভিন্নরূপ কোনো বিধান থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশ ব্যাংক যেকোনো সময়ে উহার এক বা একাধিক কর্মকর্তার দ্বারা কোনো ব্যাংক-কোম্পানি ও উহার খাতাপত্র এবং হিসাব পরিদর্শন করিতে পারিবে। ’ কিন্তু কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া ঠিক সময় ক’বার এই পরিদর্শন কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে সে প্রশ্নটি আমাদের মাথায় থেকেই যায়। অভিযোগ রয়েছে, একজন প্রভাবশালী ব্যাংক মালিকের গুলশান শাখায় মোটা দাগের অনেকগুলো অনিয়ম রয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সেই শাখা পরিদর্শন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক মনে করলে যেকোনো ব্যাংকের শাখা পরিদর্শন করতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা সম্ভব হচ্ছে না। কারণটি কিন্তু সবাই বুঝতে পারবেন।
ব্যাংক কোম্পানি আইনের একই ধারায় বলা হয়েছে,‘৮৫[ (৫) বাংলাদেশ ব্যাংক এই ধারার অধীন কোনো পরিদর্শন বা পরীক্ষাকার্য সম্পন্ন করার পর উক্ত প্রতিবেদন বিবেচনান্তে যদি এইরূপ অভিমত পোষণ করে যে, উক্ত ব্যাংক-কোম্পানির কার্যাবলী উহার আমানতকারীদের স্বার্থের পরিপন্থী পদ্ধতিতে পরিচালিত হইতেছে, তাহা হইলে বাংলাদেশ ব্যাংক, লিখিত আদেশ দ্বারা-
(ক) উক্ত ব্যাংক-কোম্পানি কর্তৃক নতুন আমানত গ্রহণ নিষিদ্ধ করিতে পারিবে;
(খ) ধারা ৬৪ এর উপধারা (৪) এর অধীন উক্ত ব্যাংক- কোম্পানির অবসায়নের উদ্দেশ্যে আবেদন দাখিল করিতে পারিবে;
(গ) আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষার্থে বাংলাদেশ ব্যাংক যেইরূপ সঙ্গত মনে করে সেইরূপ আদেশ প্রদান কিংবা কার্যক্রম গ্রহণ করিতে পারিবে।’
কিন্তু এই ধারাও অনেক সময় পরিপালন করা সম্ভব হয়নি। যদি হতো তবে ফারমার্স ব্যাংকের মতো কাণ্ড ব্যাংকিং খাতে ঘটতো না। তাই এখানে আইন সংশোধন করার চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যাতে তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে তার জন্য এই প্রতিষ্ঠানকে পূর্ণাঙ্গভাবে স্বায়ত্তশাসন দেয়া জরুরি। কিন্তু তা না হলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যদি প্রভাবশালীদের চাপের কাছে নতি স্বীকার করে তাহলে যত আইন সংশোধনই করা হোক না কেন খেলাপি ঋণ বা ব্যাংক খাতের অনিয়ম কমানো সম্ভব হবে না বলে মনে করেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের এক সূত্র।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালে যেখানে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার ৪৮২ কোটি টাকা, সেখানে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ হাজার ৩৭০ কোটি টাকা। একই সময় ঋণ অবলোপন করা হয়েছে আরো প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা। এই হিসাব ধরলে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ হবে দেড় লাখ কোটি টাকা। যা আমাদের জাতীয় বাজেটের এক-চতুর্থাংশ।


আরো সংবাদ



premium cement
শিগগিরই মাগুরায় রেললাইন চালু হবে : রেলমন্ত্রী সংসদ ভবনের সামনে স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষে ছাত্রলীগকর্মী নিহত জুজুৎসুর সম্পাদকের যৌন নিপীড়নের তথ্য দিলো র্যা ব পানচাষীদের পরিশ্রমের ফসল জিআই স্বীকৃতি : প্রতিমন্ত্রী বগুড়ায় অবৈধ মজুদকৃত ১ লাখ ডিম উদ্ধার তথ্যের জন্য সাংবাদিকরা শতবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে যেতে পারেন : ডেপুটি গভর্নর ইসরাইলি হামলায় ৪০ ফিলিস্তিনি নিহত আফগানিস্তানে গুলিতে ৩ স্প্যানিশ ও ৩ আফগান নিহত বিভিন্ন অপরাধে সাতজনের ফাঁসি কার্যকর করল ইরান কিরগিস্তানে আতঙ্কে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীরা ‘প্রাচীন হিব্রুদের সাথে ইসরাইলি ইহুদিদের জেনেটিক সংযোগ নেই’

সকল