৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বোমা হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগ

বেলজিয়ামের আদালতে ইরানি কূটনীতিকের ২০ বছর কারাদণ্ড

আদালতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা - ছবি : ডেইলি সাবাহ/এএফপি

ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে ২০১৮ সালের জুনে ইরান থেকে নির্বাসিত সরকারবিরোধীদের সমাবেশে বোমা হামলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ইরানি এক কূটনীতিককে ২০ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন বেলজিয়ামের এক আদালত।

বৃহস্পতিবার বেলজিয়ামের অ্যান্টভের্প শহরের আদালতে চলা এই মামলার রায় দেয়া হয় বলে জানান মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

আইনজীবীরা বলেন, ইরানের সরকারবিরোধী ন্যাশনাল কাউন্সিল অব রেজিসটেন্স অব ইরানের (এনসিআরআই) এক র‌্যালিতে বোমা হামলার ষড়যন্ত্রের জন্য ভিয়েনাভিত্তিক ইরানি কূটনীতিক আসাদুল্লাহ আসাদিকে আদালত দোষী সাব্যস্ত করে। জার্মান, ফরাসি ও বেলজিয়ান পুলিশের যৌথ অভিযানে ওই বোমা হামলার চেষ্টা ব্যর্থ করা হয় জানান মামলার সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।

বেলজিয়ান সরকারি পক্ষের আইনজীবী জর্জ হেনরি বিথিয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই আদেশের মাধ্যমে দুইটি বিষয় স্পষ্ট হয়েছে, একজন কূটনীতিক অপরাধের জন্য ছাড় পেতে পারেন না এবং সম্ভাব্য হত্যাকাণ্ডে ইরান রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতা।’

১৯৭৯ সালে ইরানের বিপ্লবের পর প্রথম ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো দেশে ইরানি কূটনীতিকের ‘সন্ত্রাসের’ অভিযোগে এমন বিচার করা হলো।

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বেলজিয়ামের আদালতের বিচারের পরিপ্রেক্ষিতে নিন্দা জানিয়ে এক বিবৃতিতে জানায়, আসাদির গ্রেফতারি ও বিচার অবৈধ এবং তা কূটনীতিক সম্পর্কের বিষয়ে ১৯৬১ সালের ভিয়েনা চুক্তির লঙ্ঘন করেছে।

ইরানি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইদ খতিবজাদেহ ওই বিবৃতিতে বলেন, মুজাহিদিনে খালকের প্রভাবিত এই মামলায় বেলজিয়াম ও অন্য ইউরোপীয় দেশগুলো সংশ্লিষ্ট হয়েছে।

মুজাহিদিনে খালক ইরানের সরকারবিরোধী এক সংগঠন। ইরানে ‘সন্ত্রাসের’ অভিযোগে সংগঠনটি নিষিদ্ধ রয়েছে।

বিবৃতিতে খতিবজাদেহ বলেন, ‘এর মাধ্যমে জার্মানি ও বেলজিয়ামে বন্দী অবস্থায় জনাব আসাদির যে অমানবিক পরিস্থিতির শিকার হয়েছেন, তা সহ আমাদের কূটনৈতিক অধিকার ক্ষুণ্ণের জন্য তারা দায়ী থাকবে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান জনাব আসাদির অধিকার রক্ষায় সম্ভাব্য সব আইনি ও কূটনীতিক পদক্ষেপ নেয়ার এবং আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত অঙ্গীকার ভাঙা সরকারকে অভিযুক্ত করার অধিকার রাখে।’

অস্ট্রিয়ায় ইরানের কূটনীতিক মিশনে যুক্ত থাকা ৪৯ বছর বয়সী আসাদুল্লাহ আসাদিকে জার্মানি থেকে গ্রেফতার করা হয়, যেখানে তার কোনো কূটনীতিক ছাড়পত্র ছিল না।

মামলায় অভিযুক্ত আরো তিনজন ইরানি-বেলজিয়ানকে কারাদণ্ডের সাথে সাথে তাদের বেলজিয়ামের নাগরিকত্ব কেড়ে নেয়ার আদেশ দেয়া হয়েছে।

বেলজিয়ান-ইরানি দম্পতি ৩৬ বছর বয়সী নাসিমেহ নামি ও ৪০ বছর বয়সী আমির সাদুনিকে আসাদির কাছে থেকে আধা কেজি বিস্ফোরক ও একটি ডেটোনেটর গ্রহণ করায় অভিযুক্ত করা হয়।

নামিকে ১৮ বছর ও সাদুনিকে ১৫ বছর কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।

বেলজিয়ামভিত্তিক ইরানি কবি মেহেরদাদ আরেফানির বিরুদ্ধে র‌্যালিতে বিস্ফোরক বহনকারী দম্পতিকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ আনা হয়। তাকে ১৭ বছরের কারাদণ্ডের আদেশ দেয়া হয়েছে।

প্যারিসের কাছে ভিলেপিন্টেতে ২০১৮ সালের ৩০ জুন নির্বাসিত এনসিআরআই ইরানের সরকারবিরোধী এক সমাবেশের আয়োজন করে। এনসিআরআই মুজাহিদিনে খালককে মিত্র হিসেবে বিবেচনা করে।

তেহরান বলছে, ইউরোপীয় দেশগুলো ‘সন্ত্রাসী’ মুজাহিদিনে খালককে প্রশ্রয় দিচ্ছে। সংগঠনটি ১৯৯৭ থেকে ২০১২ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাভুক্ত ছিল।

প্যারিসভিত্তিক মুজাহিদিনে খালকের এক মুখপাত্র শাহিন কোবাদি বলেন, ‘এটি প্রমাণিত ইরান সরকার রাষ্ট্রীয়ভাবে সন্ত্রাসের আশ্রয় নিয়েছে এবং সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তা এতে জড়িত।’

এ দিকে আসাদির পক্ষের এক আইনজীবী জানিয়েছেন, তারা আপিল আবেদন করবেন।

ইরান অভিযোগ অস্বীকার করে বলছে, এটি ‘দুর্বলভাবে সাজানো’ অভিযোগ।

সূত্র : আলজাজিরা


আরো সংবাদ



premium cement