২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উপজেলা নির্বাচনে আ’লীগের তৃণমূলে সংঘাত বাড়ার আশঙ্কা

দেশে মোট ৪৯৫টি উপজেলার প্রথম ধাপের ১৫২ টি উপজেলায় নির্বাচন হবে ৮মে - প্রতীকী ছবি

উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই মাঠে প্রার্থীদের ছড়াছড়ি। এবার নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হবে না। থাকবে না দলীয় মনোনয়ন। তাই চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ থেকেই অনেক প্রার্থী হচ্ছেন এক উপজেলায়।

আর বিএনপি দলের সমস্যদের নির্বাচনে না দাঁড়াতে কঠোর হুঁশিয়ারি দিলেও কিছু কিছু উপজেলায় তাদের থামানো যাবে না বলেই মনে হচ্ছে।

২১ মার্চ নির্বাচন কমিশন প্রথম ধাপে ১৫২টি উপজেলায় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। দেশে মোট ৪৯৫টি উপজেলার প্রথম ধাপের ১৫২টি উপজেলায় নির্বাচন হবে ৮ মে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী প্রথম ধাপে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে ১৫ এপ্রিল পর্যন্ত। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ১৭ এপ্রিল, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল। ১৫২ উপজেলার মধ্যে ২২ উপজেলায় ভোট হবে ইভিএমে।

প্রথম ধাপের পর ২৩ মে দ্বিতীয়, ২৯ মে তৃতীয় এবং ৫ জুন শেষ ধাপের ভোট হবে। এসব উপজেলায় চেয়ারম্যান, সাধারণ ভাইস চেয়ারম্যান ও সংরক্ষিত ভাইস চেয়ারম্যান পদে এই নির্বাচন হয়ে থাকে।

এবার আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে নির্বাচনে অংশ নেবে না। তারা কোনো প্রার্থীকেও মনোনয়ন দেবে না। এটা তারা আগেই নির্বাচন কমিশনে জানিয়ে দিয়েছে। ফলে উপজেলা নির্বাচনে এবার প্রার্থী অনেক বেশি হবে। এরইমধ্যেওই প্রার্থীরা তাদের কাজ শুরু করে দিয়েছেন। আর অন্যান্য দল থেকেও একাধিক প্রার্থী হবে। বিএনপি এই নির্বাচনে অংশ না নেয়ার সিদ্ধান্ত এরইমধ্যে জানিয়ে দিয়েছে। তবে স্থানীয় পর্যায়ে অনেকে এই সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হতে পারেন বলে জানাগেছে। কারণ দলীয় কোনো প্রতীক না থাকায় তার সুবিধা তারাও নেবেন।

কিন্তু আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তে এই নির্বাচনে তৃণমূলস্তরে দ্বন্দ্ব আরো প্রকট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংসদ নির্বাচনে এবার যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে তা আরো বিস্তৃত হওয়ার আশঙ্কা আছে। আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র যে ৬২ জন সংসদ সদস্য হয়েছেন তারা চাইবেন উপজেলায় তাদের প্রার্থীদের পাস করিয়ের অবস্থান আরো সংহত করতে। দল কাউকে মনোনয়ন না দিলেও প্রত্যেক এলাকার এমপির সমর্থনে এরইমধ্যে প্রার্থীরা আত্মপ্রকাশ করেছেন। এমদিকে বিরোধী আওয়ামী শিবিরও তাদের প্রার্থী নিয়ে মাঠে নামছেন। ফলে উপজেলা নির্বাচনে এক আওয়ামী লীগ থেকেই একাধিক প্রার্থী থাকবেন। তৃনমূলের নেতা-কর্মীরাও সেভাবে ভাগ হয়ে যাবে।

বরিশালের বানারিপাড়া উপজেলার সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা শরিফুদ্দিন আহমেদ কিসলু বলেন,‘এবার দলীয়ভাবে নির্বাচন না হওয়ায় প্রার্থী অনেক বেশি হবে। অনেকেই তাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করতে নামবেন। আমাদের উপজেলায় আওয়ামী লীগ থেকেই চেয়ারম্যান পদে একাধিক প্রার্থী হচ্ছেন। এরফলে তৃণমূল আওয়ামী লীগে দ্বন্দ্ব ও বিভেদ বাড়বে।’

তার কথায়,‘তারপরও দলের এই সিদ্ধান্তের কারণে নির্বাচন প্রতিযোগিতামূলক হবে এবং ভোট কেন্দ্রে ভোটারের উপস্থিতি বাড়বে।’

তিনি বলেন,‘আগে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনে কেউ দলীয় মনোনয়ন নিয়ে বৈতরণী পার হতেন। এবার আর তা হবে না। ভোট নিরপেক্ষ ও অবাধ হলে জনপ্রিয় প্রার্থীরা পাস করবেন। যারা সব সময় সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকেন তারা সুবিধা পাবেন।’

আর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির সরদার জানান,‘এরইমধ্যে আমার উপজেলায় আওয়ামী লীগ থেকে চেয়ারম্যান পদে চারজন প্রার্থী মাঠে নেমেছেন। বর্তমান চেয়ারম্যানসহ তারা থানা আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন তারা।’

তিনি বলেন,‘এরইমধ্যে উপজেলা আওয়ামী লীগে বিভাজন, গ্রুপিং শুরু হয়ে গেছে। যার যার মতো মাঠে নেমেছেন। হুমকি ধামকি শুরু হয়ে গেছে।’

এব প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘এই পরিস্থিতি সারাদেশে। আওয়ামী লীগ থেকে অনেক প্রার্থী। দলীয় মনোনয়ন এবার তুলে দেয়ায় যে যার মতো দাঁড়িয়ে যাচ্ছেন। এতে সংঘাত-সংঘর্ষেরও আশঙ্কা আছে।’

পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মোস্তাফিজুর রহমান মনে করেন,‘এমপি-মন্ত্রীরা যার যার এলাকায় তাদেও প্রার্থীদের জয়ী করতে নানাভাবে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করতে পারেন। তারা চাইবেন তাদের অনুসারীরা যাতে জিতে আসেন। এ বিষয়ে কেন্দ্র থেকে তাদের বিরত করতে স্পষ্ট নির্দেশনা থাকা দরকার।’

তারও কথা,‘নির্বাচনে এবার আওয়ামীন লীগ থেকে একই পদে অনেক প্রার্থী।

২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীকে অংশ নেয়। তারপরও প্রায় প্রত্যেক উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলো। ৩২ শতাংশ উপজেলায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা স্বতন্ত্র হিসাবে নির্বাচন করে জয়ী হয়। আর ওই নির্বাচনে ১১৫ জন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিনা ভোটে ন(বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন। আর নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি ছিল খুবই কম। আর বিএনপির হাতেগোনা কয়েকজন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র হিসাবে অংশ নেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন বলেন,‘এবার দলীয়ভাবে আমাদের কোনো প্রার্থী থাকছে না। এটা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত। দলের যে কেউ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। এখন এটা নিয়ে যদি কেউ গ্রুপিং, কোন্দল বা সংঘাত তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে কিছু করা যাবেনা।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,‘নির্বাচনে দলীয় কোনো মনোনয়ন না থাকায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা ভালো হবে। অনেক প্রার্থী হবে। ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থী বেছে নিতে পারবেন। আর ভোটারের উপস্থিতিও বাড়বে।’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিএনপি অংশ না নেয়ায় আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থী দেয়ার পাশাপাশি দল থেকে স্বতন্ত্রদের উৎসাহিত করেছে নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করতে ও ভোটার উপস্থিতি বাড়তে।

এদিকে বিএনপির তৃণমূলে কথা বলে জানা গেছে, কিছু এলাকায় কেউ কেউ উপজেলায় প্রার্থী হতে আগ্রহী হলেও তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। এর আগে উপজেলায় এবং পৌরসভায় যারা দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে প্রার্থী হয়েছেন তাদের বহিষ্কার করা হয়েছে। বিজয়ী হয়েও তারা বহিস্কার এড়াতে পারেননি।

রাজশাহী পুটিয়া পৌরসভার মেয়র এবং উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন খান বলেন,‘আমি ধানের শীষ নিয়ে মেয়র হয়েছি ২০২০ সালে। তখন পৌর নির্বাচনে দল অনুমতি দিয়েছিল। কিন্তু এবার উপজেলা পরিষদে দল অনুমতি দিচ্ছে না। কেউ প্রার্থী হলে তাকে বহিষ্কার করা হবে।’

আর বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল বলেন,‘দেশের মানুষের এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে কোনো আগ্রহ নাই। এই সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে না। তাই বিএনপিরও উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কোনো আগ্রহ নাই।’

সূত্র : ডয়েচে ভেলে


আরো সংবাদ



premium cement