৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


আয়কর না দেয়ায় বিপাকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

শিক্ষার্থীদের আশঙ্কা, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর আরোপিত আয়করের টাকা তাদের কাছ থেকেই নেয়া হবে - ছবি : বিবিসি

নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আয়কর জমা না দেয়ায় ঢাকার ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এতে ব্যাংকের লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

জব্দ হওয়া ব্যাংক হিসাবের তালিকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এবং ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির মতো শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নামও পাওয়া যাচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বলছে, আয়করের অর্থ জমা না দেয়া পর্যন্ত কোনোভাবেই তারা জব্দ হিসাবগুলো ছাড়বেন না।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন,‘তাদেরকে অনেকবার রিমাইন্ডার দেয়া হয়েছে, চিঠিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারা সেটি আমলে নেননি। সে কারণে অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাদেরকে কঠোর অবস্থানে যেতে হয়েছে। এখন আয়কর দিয়েই তাদেরকে হিসাব ছাড়াতে হবে।’

এর আগে ২০০৭ এবং ২০১০ সালে পৃথক দু’টি প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল, ডেন্টাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের বাৎসরিক আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ আয়কর নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

তাদের এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আদালতে ৪০টিরও বেশি রিট আবেদন করে সংক্ষুব্ধ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো।

সেই আবেদনের প্রেক্ষিতেই ২০১৬ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাজস্ব বোর্ডের প্রজ্ঞাপনকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাই কোর্ট।

এরপর সেই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ।

শুনানি শেষে গত ২৭ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের রায় বাতিল করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল, ডেন্টাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ হারে কর আদায়ের সিদ্ধান্ত বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট।

মূলত : এর পরেই আয়কর আদায়ে তৎপরতা শুরু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

বকেয়া হাজার কোটি
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে নিবন্ধিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে ১০৭টি।

এর বাইরে, আরো অন্তত ৮০টি বেসরকারি মেডিক্যাল, ডেন্টাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ রয়েছে।

এসব বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর কাছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকার মতো আয়কর বকেয়া রয়েছে বলে জানিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

বিশাল অঙ্কের এই রাজস্ব আদায়ে গত মার্চ থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো শুরু করে রাজস্ব বোর্ড।

প্রাথমিকভাবে ঢাকায় অবস্থিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোকে চিঠি দেয়া হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘লোকবল ঘাটতিসহ আমাদের বেশকিছু সমস্যা রয়ে গেছে। সেই কারণে আপাতত ঢাকা অঞ্চলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছ থেকেই আয়কর আদায় করা হচ্ছে।’

পর্যায়ক্রমে দেশের অন্য অঞ্চলের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, ডেন্টাল এবং ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজেও চিঠি পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

যাদের হিসাব জব্দ হলো
আয়কর পরিশোধ না করায় এখন পর্যন্ত ঢাকার মোট ৩১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।

ওই তালিকায় নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ইস্টওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির নাম রয়েছে।

এছাড়া রয়েছে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক এবং সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটির নাম।

পাশাপাশি নটর ডেম ইউনিভার্সিটি, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি, এক্সিম ব্যাংক ইউনিভার্সিটি, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পাওয়া যাচ্ছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘এক কথায় ঢাকার পরিচিত সব বিশ্ববিদ্যালয়ের নামই ওই তালিকায় রয়েছে।’

রাজস্ব বোর্ড বলছে, বকেয়া আয়কর পরিশোধের অনুরোধ জানিয়ে মার্চের প্রথম সপ্তাহে ঢাকার অন্তত ৪০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়কে চিঠি দেয়া হয়।

চিঠিতে কর পরিশোধের জন্য সময়সীমা বেঁধে দেয়া ১৫ মার্চ। নির্ধারিত ওই সময়ের মধ্যে কর পরিশোধ না করলে জরিমানাসহ অন্য আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও সেখানে সতর্ক করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কিন্তু তারপরও তারা আয়কর পরিশোধ করেননি, এমনকি অনেকে যোগাযোগ পর্যন্ত করেননি।’

মূলত সে কারণেই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যা বলছে
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বলছে, ১৫ শতাংশ আয়কর দেয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট থেকে যে রায় ঘোষণা করা হয়েছে, সেটির পূর্ণাঙ্গ কপি এখনো হাতে পাননি তারা।

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পরিচালক বেলাল আহমেদ বলেন, ‘আদালতের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ এবং আয়কর দেয়া সংক্রান্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার বিষয়ে কোনো সুযোগ না দিয়ে ঈদের আগে ব্যাংক এভাবে অ্যাকাউন্ট স্থগিত করা একটি অমানবিক পদক্ষেপ।’

বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মূলত ‘বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০’- এর আওতাধীন। এই আইনে ট্রাস্টের অধীনে অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হিসেবেই সেগুলো প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত হয়ে থাকে।

আহমেদ বলেন,‘আর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ৪৪-এর সাত ধারা অনুযায়ী, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিলের অর্থ সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রয়োজনীয় ব্যয় ব্যতীত অন্য কোনো উদ্দেশে ব্যয় করার বিধান নেই।’

কাজেই আয়কর দিলে সেটি বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সরাসরি লঙ্ঘন হবে বলেই মনে করছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতি।

আহমেদ বলেন, ‘তবে এর মানে এই নয় যে আদালতে রায়ের প্রতি আমাদের আস্থা নেই। আস্থা অবশ্যই আছে। তবে আমরা এখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষায় আছি। সেটি হাতে পেলেই আমাদের পরবর্তী করণীয় ঠিক করা হবে।’

এদিকে, ঈদের আগে ব্যাংক হিসাব জব্দ করায় চরম বেকায়দায় পড়েছে ঢাকার বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো।

আহমেদ বলেন, ‘এর ফলে আমাদের সকল আর্থিক কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। এক সপ্তাহ পরেই ঈদ, অথচ এখনো আমরা আমাদের শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীর বেতন-ভাতা দিতে পারছি না। এমনকি বিদ্যুৎ-পানিসহ অন্য বিলও পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।’

বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির পরিচালক বেলাল আহমেদ বলেন, ‘সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার এবং করারোপ সংক্রান্ত আইনগত জটিলতা নিরসনে আমরা এনবিআর, শিক্ষামন্ত্রী এবং রাষ্ট্রপতির কাছেও লিখিত অনুরোধ জানিয়েছি।’

কী বলছে রাজস্ব বোর্ড?
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বলছে, তারা আদালতের নির্দেশেই আয়কর আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা বলেন,‘আদালত কর আদায়ের পক্ষে রায় দিয়েছেন। আমরা এখন সেই আদেশটিই বাস্তবায়ন করছি।’

এক্ষেত্রে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পক্ষ থেকে যে আইনগত জটিলতার কথা বলা হচ্ছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা আগেও বিভিন্ন সময় এরকম নানান জটিলতার কথা বলেছেন। কিন্তু আদালতে সেগুলো টেকেনি। বিজ্ঞ আদালত সব বুঝে-শুনেই আয়কর আদায়ের পক্ষে রায় দিয়েছেন।’

আদালত এ বিষয়ে নতুন কোনো রায় বা নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত রাজস্ব বোর্ড তার কাজ চালিয়ে যাবে বলেও জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাস্ট আইনের অধীনে প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মূলত অলাভজনক প্রতিষ্ঠান হওয়ার কথা।

আইন অনুযায়ী, এগুলোর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যরাও কোনো ধরনের বেতন বা লাভ নিতে পারেন না। কিন্তু বাস্তবে তার বিপরীত চিত্র থাকার অভিযোগ রয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের উচ্চপদস্থ একজন কর্মকর্তা বলেন,‘অডিট করতে গিয়ে আমরা দেখছি যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনেকেই নিয়মিতভাবে মুনাফা অর্জন করছে এবং মালিকপক্ষ নানান কৌশলে মুনাফার সুফলও ভোগ করছে। এমনকি লাভে থেকেও অনেকে লোকসান দেখিয়েছেন, এমন ঘটনাও আমরা পেয়েছি।’

মূলত এরকম প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করে সেগুলোর ওপর করারোপ করা হচ্ছে বলে জানানো হয়েছে।

রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা বলেন, ‘অন্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমরা ৩০ শতাংশ হারে আয়কর নিচ্ছি। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বলেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর কাছ থেকে ১৫ শতাংশ আয়কর কম নেয়া হচ্ছে।’

এক্ষেত্রে আয়কর না দিলে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোর জব্দ ব্যাংক হিসাব ছাড়া হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি।

ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘কর দিয়েই তাদের জব্দ ব্যাংক হিসাব মুক্ত করতে হবে। এক্ষেত্রে পুরোটা একবারে না পারলে কিস্তিতে হলেও দিতে হবে।’

এমন কঠোর অবস্থানের কারণে কিছু কিছু বিশ্ববিদ্যালয় আংশিক আয়কর দিচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

রাজস্ব বোর্ডের একজন ঊচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় আংশিকভাবে আয়কর পরিশোধ করেছে। তাদের জব্দ অ্যাকাউন্ট ছেড়ে দেয়া হচ্ছে।’

তবে ওই সাতটি বিশ্ববিদ্যালয় কারা, সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি তিনি।

সবাইকে কর দিতে হবে?
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে কারা করের আওতায় পড়বেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পর সেটির একটি ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।

উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি-সহ অন্য আয় থেকে সমস্ত পরিচালন ব্যয়, বেতন ইত্যাদি মেটানোর পর যে অর্থ উদ্বৃত্ত থাকবে, তার উপরেই এই কর ধার্য হবে।’

কাজেই পরিচালন ব্যয় ও অন্য আনুষঙ্গিক খরচের পর যদি দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের তহবিলে কোনো উদ্বৃত্ত বা বাড়তি অর্থ নেই, তাহলে তাদেরকে ১৫ শতাংশ আয়কর দিতে হবে না বলে জানা গেছে।

এদিকে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আয়ের ওপর কর নেয়ার সিদ্ধান্ত যৌক্তিক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকদের কেউ কেউ।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, ‘যেসব শর্ত ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কর আওতার বাইরে রাখা হয়েছিল, তাদের বেশিরভাগই এখন সেগুলো মেনে চলছে না।’

তিনি আরো বলেন, ‘কর রেয়াতের উদ্দেশ্য ছিল শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে সামাজিক কল্যাণ সাধন, কিন্তু তারা এখন রীতিমত লাভজনক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়ে গেছে। কাজেই তাদের ওপর করারোপ করাটা মোটেই অযৌক্তিক নয়

একই কথা বলছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম।

তিনি বলেন, ‘করটা নেয়া হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্পোরেট আয়ের উপরে। সুতরাং এর যৌক্তিকতা রয়েছে।’

তবে আয়ের উদ্বৃত্ত অর্থ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি শিক্ষার্থীদের কল্যাণ ও পড়াশোনার গুণগতমান উন্নয়নে ব্যয় করতে চায়, সেটি বিবেচনায় নিয়ে তাদের করের হার আরেকটু কমানো যেতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চাপবে?
বেসরকারি কোনো বিশ্ববিদ্যালয়কে এতদিন আয়কর দিতে হতো না।

এখন নতুন করে তাদের ওপর যে করারোপ করা হয়েছে, আদতে সেটি শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ওপর বাড়িতি চাপ তৈরি করতে পারে বলে অনেকের উদ্বেগ রয়েছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাঞ্জিমুর রহমান রাফি বলেন, ‘কর্তৃপক্ষ মূলত এই কর নিজেরা দিবে না। আগেও যেকোনো ধরনের খরচ ছাত্রছাত্রীদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।’

আর ফয়সাল মাহমুদ নামের আরেকজন শিক্ষার্থী বলছেন, ‘একটা শঙ্কা তৈরি হয় যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এরপর ‘হিডেন চার্জে’র দিকে যাবে’।

ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টসের শিক্ষার্থী মাহমুদ বলেন, ‘একেকটা বিশ্ববিদ্যালয় এখন একেক রকম ফি নেয়। এটা সামনের দিনে আরো প্রকট হবে।’

শিক্ষার্থীদের এই আশঙ্কা যে অমূলক নয়, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্যেও সেটি পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে।

বাংলাদেশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, ‘এটি শিক্ষার্থীর ওপরে অটোমেটিক্যালি যাবে। আগে যারা ১০ টাকা নিতো, এখন ১২ টাকা নিবে।’

যদিও সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরে অ্যাটর্নি জেনারেল জানিয়েছিলেন যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছ থেকে আয়কর নেয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা কোনোভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

সিপিডি’র গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘সুতরাং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে সরকারকেই সেটি নিশ্চিত করতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘কোনো বিশ্ববিদ্যালয় যদি অযৌক্তিকভাবে বেতন-ফি বাড়ায়, অভিভাবক হিসেবে ইউজিসিকেই তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যেতে হবে।’

এর আগে, ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিক্যাল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ওপর সাড়ে সাত শতাংশ হারে ভ্যাট আরোপ করেছিল সরকার।

এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। টানা কয়েক দিনের আন্দোলনের মুখে শেষমেশ আরোপিত ভ্যাট প্রত্যাহার করে নেয় সরকার।

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement