২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

স্কুল শিক্ষার্থীরা করোনায় আক্রান্তের খবর, যা বলছে সরকার

- ছবি : সংগৃহীত

দেশের দুই জেলার স্কুলের কয়েকজন শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও শিক্ষা কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার সাথে স্কুলে আসা যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই।

ঠাকুরগাঁও ও মানিকগঞ্জে কয়েকটি স্কুল মিলিয়ে মোট ১৪ শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে খবর পাওয়া যাচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমেও বিভিন্ন স্কুলে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের দাবি করেছেন শিক্ষার্থীরা। তবে শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনি বলছেন, সামাজিক মাধ্যমে অনেকে বিভিন্ন স্কুলে করোনাভাইরাসের আক্রান্ত হওয়ার তথ্য দিলেও বাস্তবে অনুসন্ধান করে তার সত্যতা পাওয়া যায়নি। তিনি জানিয়েছেন, প্রতিটি ঘটনা আমলে নিয়ে সরকার তদন্ত করে দেখছে। কেউ করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সরকার।

দেড় বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর চলতি মাসের ১২ তারিখ থেকে দেশের স্কুল-কলেজসহ সমমানের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া হয়েছে। তবে দেশে এখনো করোনাভাইরাসের সংক্রমণ অব্যাহত রয়েছে। যদিও সংক্রমণের হার নেমে এসেছে ৫ ভাগের নিচে। দেশে এ পর্যন্ত প্রায় ১৫ লাখ মানুষ করোনা বা কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন।

ঠাকুরগাঁও ও মানিকগঞ্জে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত শিক্ষার্থী
ঠাকুরগাঁওয়ের দু’টি আলাদা স্কুলের ১৩ জন শিক্ষার্থী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। এরা চতুর্থ শ্রেণী থেকে ১০ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। তবে পৃথক প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করলেও জেলার সরকারি শিশু সদনে তারা একসাথেই থাকে।

একটি বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক সাংবাদিকদের বলেছেন, কয়েক শিশুর মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখার পর তাদের পরীক্ষা করানো হলে পজিটিভ রিপোর্ট আসে। তখন ওই শিশু সদনের অন্য শিক্ষার্থীদেরও পরীক্ষা করে দেখা হয়। সতর্কতা হিসেবে এসব শ্রেণীর পাঠদান দু’দিন বন্ধ রাখা হয়।

ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন মো: মাহফুজার রহমান সরকার বিবিসি বাংলাকে বলছেন, কিভাবে এই ১৩ জন আক্রান্ত হয়েছে, তা বোঝা যাচ্ছে না। হয়তো তাদের এক বা দু’জন আগে আক্রান্ত হয়েছে। কিন্তু সবাই একই শিশু সদনে থাকার কারণে অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি জানান, পরে এসব শিক্ষার্থীর শ্রেণীর অন্যদের পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে, তাদের কারো মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়নি। এই শিক্ষার্থীদের আলাদা করে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। দু’দিন বন্ধ রাখার পরে শনিবার আবার এসব শ্রেণীর পাঠদান শুরু হয়েছে।

অন্য দিকে মানিকগঞ্জে বুধবার করোনাভাইরাসের উপসর্গ রয়েছে, অষ্টম শ্রেণীর এরকম একজন শিক্ষার্থীকে ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পর মৃত্যু হয়। ওই শিক্ষার্থী সর্বশেষ ১৫ সেপ্টেম্বর ক্লাসে উপস্থিত ছিল বলে স্কুল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

করোনাভাইরাসের উপসর্গ নিয়ে তার মৃত্যু হলেও পরীক্ষা না করানোয় আসলে তার কোভিড-১৯ ছিল কি-না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শনিবার তার শ্রেণীর অপর শিক্ষার্থীদের নমুনা পরীক্ষা করানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলার সিভিল সার্জন মো: আনোয়ারুল আমিন আখন্দ।

আগের সপ্তাহে একই বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণীর একজন শিক্ষার্থীর করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে পাঠদান বন্ধ রেখে ওই শ্রেণীর ৫৮ জন শিক্ষার্থীর নমুনা পরীক্ষা করা হয়। তবে তাদের কারও পজিটিভ ধরা পড়েনি। ফলে বৃহস্পতিবার থেকে আবার স্কুলে পাঠদান শুরু হয়েছে।

অন্যসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কী অবস্থা?
শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার খবরে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে বলে শিক্ষকরা জানিয়েছেন। ঠাকুরগাঁও ও মানিকগঞ্জের স্থানীয়রা জানান, ওই বিদ্যালয়গুলো ছাড়াও অন্যান্য বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অনেক অভিভাবক তাদের সন্তানদের কোভিড-১৯ টেস্ট করানোর জন্য হাসপাতালে যোগাযোগ করেছেন। শিক্ষার্থীদের এই উদ্বেগের বিষয়টি উঠে এসেছে শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনির বক্তব্যেও।

শনিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘কোনো কোনো জায়গায়, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকে আমাকে লিখে পাঠাচ্ছেন, এই স্কুলে এতজন আক্রান্ত, ওই স্কুলে এতজন আক্রান্ত। আমরা সাথে সাথে প্রতিটা জায়গায় অনুসন্ধান করছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোথাও সত্যতা পাইনি।’

সরকার কী বলছে?
ঠাকুরগাঁওয়ে শিক্ষার্থীদের আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বে সাথেই নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক আলমগীর মুহম্মদ মনসুরুল আলম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, ‘প্রাথমিক স্কুলে শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনাভাইরাস পাওয়ার খবর পাওয়ার পরই আমরা নিয়মিত খোঁজখবর নিচ্ছি। অন্য শিক্ষার্থী কারো মধ্যে কোনো উপসর্গ আছে কি-না, সেদিকেও নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে।’

তিনি জানান, দেশের সব স্কুলের শিক্ষকদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, যেন তারা শিক্ষার্থীদের সাথে করোনাভাইরাস নিয়ে প্রতিদিন অন্তত আধা ঘণ্টা কথা বলেন। সচেতন করার পাশাপাশি তাদের কোনো উপসর্গ আছে কি-না, পরিবারের কেউ আক্রান্ত হয়েছে কি-না, ইত্যাদি তথ্য নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনি বলেছেন, দুই একটি ঘটনা ছাড়া মাধ্যমিক পর্যায়ে আক্রান্ত হওয়ার তথ্য নেই। তার ভাষায়, ‘করোনা এমন একটি বিষয় যে কেউ যেকোনো সময় এতে আক্রান্ত হতে পারেন। কিন্তু আমরা সার্বক্ষণিক মনিটরিং রাখছি। যাতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আসার কারণে একজন থেকে আরেকজনের সংস্পর্শে এসেই যেন সংক্রমিত না হয়।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কোথাও যদি সংক্রমণের ঘটনা ঘটে, সেই ঘটনা নানা জায়গায় হতে পারে। বাড়িতে হতে পারে, আসার পথে হতে পারে, এমনকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে একজন থেকে আরেকজনের হতে পারে। আমরা কোথাও কোনো ধরনের খবর পাওয়া মাত্র যেভাবে যা করার, কন্ট্রাক্ট ট্রেসিং করা বা... যা কিছু, আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিচ্ছি। এই পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের আওতাধীন যত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আছে, আমরা কোথাও এরকম সংক্রমণ এখনো পাইনি।’

শিক্ষামন্ত্রী আরো বলেন, ‘যদি প্রয়োজন হয়, তাহলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আমরা আবার বন্ধ করে দেব। কোনো দ্বিধা করব না। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোথাও সেরকম পরিস্থিতি তেমনভাবে উদ্ভব হয়নি। যদি কোথাও হয়, নিশ্চয়ই আমরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’

সূত্র : বিবিসি


আরো সংবাদ



premium cement