৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


বেপরোয়া জবি ছাত্রলীগের প্রধান কাজ নিত্যদিন মারামারি

বেপরোয়া কর্মীরা মানছে না চেইন অব কমান্ড
বেপরোয়া জবি ছাত্রলীগের প্রধান কাজ নিত্যদিন মারামারি। - সংগৃহীত

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়(জবি) ছাত্রলীগের কর্মীরা যেন কিছুতেই বাঁধ মানছেন না। তুচ্ছ কথায় তারা নিজেদের মধ্যে নিত্যদিন মারামারিতে জড়িয়ে পড়ছে। এক্ষেত্রে তাদের কাছে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি সাধারণ সম্পাদক যেন তাসের ঘর। বিভিন্ন সময় ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীরা আধিপত্য বিস্তার, র‌্যাগিং, প্রেম ঘটিত বিভিন্ন অজুহাতে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সামনেই সংঘর্ষে জড়িয়েছে। ছাত্রলীগের শীর্ষনেতৃদ্বয় যেন কিছুতেই তাদের থামাতে পারছে না।

গত সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে ক্যাম্পাসের প্রধান ফটকের বিপরীতে কথাকাটাকাটির জেরে এক ঘোড়ার গাড়ি চালককে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয় শাখা ছাত্ররীগের জুনিয়র কর্মীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী নুরে আলম, হিমু, আশিক, গৌরব জড়িত। এঘটনায় কোতয়ালী থানায় একটি মামলা হয়েছে।

এর আগে গত ২২ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপনের দিন আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সামনেই দু গ্রুপের কর্মীরা দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে। এ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনাও তারা মানেননি। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যচের শিক্ষার্থী সাদেক, নাঈম, অভি, ১২তম ব্যাচের সুফিয়ান, শাকিল, ১৩তম ব্যাচের হাসান, উম্মি, এহসান, শান্ত সক্রিয়ভাবে জড়িত ।

৭ অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মানবিক শাখার ভর্তি পরীক্ষার্থীদের র‌্যাগিং দেয়াকে কেন্দ্র করে জুনিয়র কর্মীদের দুগ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করতে গেলে তাদের সামনে আবারও সংঘর্ষে জড়িয়ে পরে জুনিয়র কর্মীরা। এসময় জুনিয়র কর্মীরা শহীদ মিনারের পাটাতনও খুলে নেয়।

১৩ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় বাসে তাস খেলায় জায়গা না দেয়া স্টাডি গ্রুপে অধ্যয়ন গ্রুপে অধ্যয়নরত গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকবতা বিভাগের শিক্ষার্থী ও চ্যানেল নাইনের সাংবাদিক রিয়াজকে বেধড়ক মারধর করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আদর, মেহেদী, অর্ণব, পার্থ, শিবলী, ফুয়াদ জড়িত। এ ঘটনায় আদর ও মেহেদীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

৩ সেপ্টেম্বর সিনিয়র জুনিয়রের কথা কাটাকাটির জেরে ১৩ তম ব্যাচের লিমনকে বেধড়ক মারধর করে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গ্রুপের ১২তম ব্যাচের মেহেদী ও অভিজিত।

গত ৯ আগস্ট জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের সামনে থেকে অপহৃত সাহেদ নামে এক দোকান কর্মচারীকে অপহরন করে দশ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এঘটনায় কোতয়ালী থানা পুলিশের কাছে আটক হন জবি ছাত্রলীগের কর্মী নবম ব্যাচের গণিত বিভাগের ছাত্র রাকিবুল ইসলাম রিয়াদ ও দশম ব্যাচের ছাত্র নূর-ই-আলম নিশান। ঘটনায় তাঁর সহযোগী হিসেবে জড়িত ছিলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের অষ্টম ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র মঞ্জুর আহমেদ মিলন, দশম ব্যাচের ফিন্যান্স বিভাগের মোবারক হোসেন, দশম ব্যাচের গণিত বিভাগের আকাশ এবং ১২তম ব্যাচের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের সৌরভ। এনিয়ে কোতোয়ালী থানায় একটি অপহরণ মামলা হয়।

২২ জুলাই তুচ্ছ ঘটনায় শাখা ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীরা সংঘর্ষে জড়ায়। এদিন শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম সংঘর্ষ থামাতে আসলে তাকেও লাঞ্চিত করেন জুনিয়র কর্মীরা। সেদিন বাসায় ফেরার পথে দৈনিক ইনকিলাবের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি নাইমুর রহমান নাবিলের উপর ছাত্রলীগ কর্মীরা হামলা চালায়। এ দুই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১তম ব্যাচের শিক্ষার্র্থী পরাগ, সাজেদুল নাইম, ১২তম ব্যাচের আশিক, নুরে আলম, অর্ণব, কৌনিক, মারুফ জড়িত।

৮ জুলাই কোটা সংস্কার আন্দোলনে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯ম ব্যাচের রিয়াজ, ১০ম ব্যাচের কামরুল, রাশেদ রাসু, ১১তম ব্যাচের পরাগ, ১২তম ব্যাচের নুরে আলম, সাইমুুম, সাইফুল্লাহ বিজয়, সাজু জড়িত। এ ঘটনায় পরাগ ও নুরে আলমকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।

এনিয়ে বিভিন্ন ঘটনায় সংগঠন ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিস্কার হন যুগ্ন সম্পাদক রিশাদ, সাংগঠনিক সম্পাদক আকিব ছাত্রলীগ কর্মী শান্ত, শাকিল, রাজিবসহ প্রায় ১৫ এর অধিক কর্মী।

এবিষয়ে জবি ছাত্রলীগের সভাপতি তরিকুল ইসলাম বলেন, আমরা কাউকে অপরাধ করতে উৎসাহিত করিনা। যদি কেউ অপরাধ করে ছাত্রলীগের নাম ব্যবহার করলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেবো।

ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেল বলেন, জামাত-বিএনপির একটি চক্র ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে ছাত্রলীগে ঢুকে অপরাধমূলক কাজ করছে। কেন্দ্রীয় সংগঠনের সাথে কথা বলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবো।


আরো সংবাদ



premium cement