নির্বাচনী বছরে শিক্ষা খাতে একটি মেগা প্রকল্প হাতে নিচ্ছে সরকার। ‘মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি’ নামে এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৩৮ কোটি টাকা। যৌথভাবে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করবে বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। কিছু ব্যয় সরকারের বাজেট থেকে বহন করা হবে। এর আগে দেশের শিক্ষা খাতের ইতিহাসে এত বড় প্রকল্প নেয়া হয়নি। এ কর্মসূচির মাধ্যমে ২০ হাজার স্কুল, ১০ হাজার মাদরাসা ও এক হাজার কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রায় এক কোটি ৫০ লাখ ছাত্র এবং ৩ লাখ শিক্ষক উপকৃত হবে বলে দাবি করা হয়েছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য মাঠপর্যায়ে প্রচুর লোকবল নিয়োগ দেয়া হতে পারে। গঠন করা হবে একাধিক বিশেষায়িত কমিটি। শুধু এ কর্মসূচির জন্য পৃথক ‘আর্থিক ক্ষমতা অর্পণ’ নির্দেশনা জারি করবে সরকার। প্রকল্পটি অর্থমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য এটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে।
অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
এ কর্মসূচির আওতায় মাধ্যমিক ও মাদরাসাÑ উভয় শিক্ষাব্যবস্থার গুণগত মান আরো বাড়ানো হবে। শুধু শিক্ষার্থী নয়, শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতেও জোর দেয়া হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে অবকাঠামো থেকে শুরু করে উপবৃত্তি, প্রণোদনা, বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনায় জবাবদিহিতা বৃদ্ধির ব্যবস্থা করা হবে। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছর থেকে শুরু করে ২০২২-২৩ পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদে পরিচালনা বাজেটের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হবে।
সূত্র জানায়, বিশাল এ কর্মসূচির মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ১৭ দশমিক ২০৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী টাকায় যার পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৩৭ হাজার ৬৬৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা (প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসাবে)। বাজেটের পরিচালন ব্যয় বরাদ্দের আওতায় সরকারের ট্রেজারি থেকে এ কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে। পূর্বনির্ধারিত রেজাল্ট ফ্রেমওয়ার্কের আলোকে ডিএলআই অর্জনসাপেক্ষে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে পুনর্ভরণকৃত অর্থ সরাসরি সরকারি কোষাগারে জমা হবে। এ প্রকল্পে বিশ্বব্যাংক দেবে ৫০ কোটি মার্কিন ডলার। এডিবি দেবে সাড়ে ২২ কোটি ডলার। বিশ্বব্যাংক ঋণের অতিরিক্ত আরো এক কোটি ডলার জিএফএফ গ্রান্ট কারিগরি সহায়তা হিসেবে দেবে। প্রকল্প ব্যয়ের বাকি টাকা আসবে সরকারি কোষাগার থেকে। এ ছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিল, ইউনিসেফ, ইউনেস্কো, ডিএফআইডি এবং ইউএনএফপিএ এই কর্মসূচিতে কারিগরি সহায়তা দেবে।
প্রস্তাবিত এ কর্মসূচিতে মাধ্যমিক পর্যায়ের সাধারণ ও মাদরাসা শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ এ কর্মসূচির সাধারণ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অংশ বাস্তবায়ন করবে। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ মাদরাসা শিক্ষা সংশ্লিষ্ট অংশ বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকবে। প্রস্তাবিত মাধ্যমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচির (এসইডিপি) মূল তিনটি রেজাল্ট এরিয়া রয়েছে। প্রথমত, এনহান্সড কোয়ালিটি অ্যান্ড রেলেভেন্স অব সেকেন্ডারি এডুকেশনের আওতায় কারিকুলাম উন্নয়ন ও শিক্ষাকে শ্রমবাজারের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা। শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বাড়ানো। বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও আইসিটি বিষয়ে শিখন-শেখানো পদ্ধতির উন্নয়ন। পাঠাভ্যাস উন্নয়ন, শিক্ষার্থীদেরমূল্যায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন, শিক্ষাকার্যক্রমে আইসিটির ব্যবহার বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন লক্ষ্য অর্জনে কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। দ্বিতীয়ত, ইম্প্রুভড একসেস অ্যান্ড রিটেনশনের আওতায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। মাধ্যমিক শিক্ষার সুযোগ ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি (উপবৃত্তি দেয়া, অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ ইত্যাদি) করা হবে। সুযোগবঞ্চিত এলাকায় শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক শিক্ষা সমাপ্তির হার বৃদ্ধির (বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা তথা পুরস্কার, সচেতনতা বৃদ্ধি, বয়ঃসন্ধিকালীন সমস্যা মোকাবেলায় সহায়তা ইত্যাদি) কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। তৃতীয়ত, স্ট্রেংদেনেড গভর্ন্যান্স, ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড প্ল্যানিংয়ের আওতায় শিক্ষা ব্যবস্থার বিকেন্দ্রীয়করণ এবং পরীবিক্ষণ ও মূল্যায়ন ব্যবস্থার উন্নয়ন করা হবে।
প্রকল্প অনুমোদনে চার শর্ত
প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চারটি শর্ত দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, কর্মসূচির মোট ব্যয় এক লাখ ৩৭ হাজার ৬৬৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা সম্ভাব্য ব্যয়সীমা হিসাবে বিবেচিত হবে। মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামোর আওতায় দেয়া ব্যয়সীমার মধ্যে সঙ্কুলানসাপেক্ষে প্রকৃত প্রয়োজনের নিরিখে বার্ষিক বাজেটে প্রস্তাবিত কর্মসূচির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হবে। বিনিয়োগসংক্রান্ত কার্যক্রমগুলো বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় বরাদ্দ স্কিমের আওতায় দেয়া হবে। এ কর্মসূচির আওতায় যেসব স্কিম গ্রহণ করা হবে তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সুপারিশ করার জন্য অর্থ বিভাগের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা