৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


লোডশেডিং ভোগান্তি

ভুল নীতির খেসারত

-


কয়েক বছর ধরে মাত্রাতিরিক্ত গরমে দিশেহারা মানুষ। এ বছরও শুরু হয়েছে অসহনীয় গরম। গরম সামনে আরো বাড়বে। এর সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে লোডশেডিং। তীব্র গরমের সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন মানুষ করুণ অবস্থায় পড়ে। সরকার রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনে কৃতিত্ব নেয়। কাগজ-কলমে চাহিদার তুলনায় বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা অনেক বেশি। তবে গরমের সময় কেন বিদ্যুৎ থাকে না- এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পায় না মানুষ। সরকারের বিবেচনায় শহরের মানুষ কিছুটা বেশি অনুগ্রহ পায়। তাদের ভাগে লোডশেডিং কম পড়ে। বিশেষ করে ঢাকার আশপাশ এলাকা ও বড় শহরগুলো এ সুবিধার আওতায় রয়েছে। তবে ঘাটতি বিদ্যুতের পুরোটা গ্রামের মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়।
রমজানে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের প্রতিশ্রুতি ছিল। গরম পড়ার সাথে সাথে এ প্রতিশ্রুতি রাখতে পারেনি সরকার। ইফতার ও সাহরির বিশেষ মুহূর্তেও বিদ্যুৎ থাকছে না। একবার গেলে টানা দুই ঘণ্টায় ফেরে না। গ্রামাঞ্চলে আট থেকে ১০ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে। দেশে মৃদু তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। চলতি সপ্তাহে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠেছে। এখন দেখা গেছে বহু এলাকায় চাহিদার তুলনায় ৩০ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ কম মিলছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৪৩ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা উঠতে দেখা গেছে। এ অবস্থায় বিদ্যুতের ঘাটতিও বাড়বে। মানুষকে তীব্র দাবদাহে আরো বেশি সময় লোডশেডিং পোহাতে হবে। কিছু এলাকায় মাত্রাতিরিক্ত লোডশেডিং হচ্ছে। সিলেটের কোথাও কোথাও ১৫ থেকে ২০ ঘণ্টা বিদ্যুৎ না থাকার খবর পাওয়া যাচ্ছে। এতে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়। বিশেষ করে বৃদ্ধ ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি সঙ্কটে পড়ে। হিটস্ট্রোকসহ নানা স্বাস্থ্য জটিলতা তৈরি হয়। এ ছাড়া শিল্প উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে আসে।

সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তথ্য মতে, এখন বিদ্যুতের চাহিদা ১৬ হাজার মেগাওয়াট। সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়েছে ১৪ হাজার মেগাওয়াট। সামনে বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে ১৭ হাজার মেগাওয়াট হতে পারে। অথচ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোর সক্ষমতা ২৬ হাজার মেগাওয়াট। দ্বিগুণের কাছাকাছি। এ ঘাটতির কারণ সরকারের বিবেচনাহীন বিদ্যুৎনীতি। এ নীতির এখন পর্যন্ত মূলমন্ত্র হচ্ছে একটি শ্রেণীকে বিদ্যুৎ খাত থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ায় সহায়তা করা। বহু বিদ্যুৎকেন্দ্র বসিয়ে রাখা হয়েছে। সরকারের কাছের মানুষজন এমনকি বিদেশী কোম্পানি এ বাবদ উচ্চমূল্যের ক্যাপাসিটি চার্জ ভোগ করছে। জনগণের অর্থের বিপুল শ্রাদ্ধ করে সরকার বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানোর পরিবর্তে উৎসাহী এক শ্রেণীর মানুষের পেট ভরছে। এদিকে মানুষ উচ্চমূল্য দিয়ে বিদ্যুৎ কিনেও সময়মতো পাচ্ছে না। জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত না করে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করা হয়েছে। এখন গ্যাস তেলের অভাবে সেগুলো উৎপাদন করতে পারছে না। দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতা ১২ হাজার ২২৬ মেগাওয়াট, সরবরাহ কম থাকায় উৎপাদন করা যাচ্ছে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার মেগাওয়াট। অন্যদিকে তেল সরবরাহ করতে না পারায় তেল-নির্ভর কেন্দ্রগুলোর বড় একটি সংখ্যা অলস বসে থাকে।
আধুনিক রাষ্ট্রগুলো জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থায় সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। সবার আগে মনোযোগ দেয় দেশের জ্বালানি নিরাপত্তায়। আমাদের ক্ষেত্রে ঘটেছে তার উল্টোটা। বিশেষ করে বর্তমান সরকারের আমলে বিদ্যুৎ উৎপাদন নীতিতে সেটি দেখা গেছে। তারা লক্ষ্য দিয়েছে কোথা থেকে বেশি অর্থ তছরুপ হবে সেদিকে। এ উদ্দেশ্যে বিপুল বিদ্যুৎ অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। ফলে একটি শ্রেণী ফুলেফেঁপে উঠেছে কিন্তু দেশের মানুষের বিদ্যুৎচাহিদা পূরণ করা যায়নি।


আরো সংবাদ



premium cement