শিল্পের ভবিষ্যৎ অন্ধকার
- ০৭ জুন ২০২৩, ০০:০৫
দেশে শিল্প খাতের বিকাশ রুদ্ধ হওয়ার উপক্রম। বিদ্যুৎ খাতে বিদ্যমান বিপর্যয়কর পরিস্থিতির কারণে শিল্প-কারখানা চালু রাখা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। দিনে পাঁচ থেকে ছয় ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে কোথাও কোথাও। বড় বড় কারখানা নিজস্ব জেনারেটর দিয়ে চালু রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু বিপুল ব্যয়ের কারণে সেটা সম্ভব হচ্ছে না বেশির ভাগ ছোট কারখানার পক্ষে। আবার বড় কারখানাতেও সমস্যা আছে। গার্মেন্ট কারখানার সব কাজ জেনারেটরে চালু রাখা যায় না। সেই অংশের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ থাকে লোডশেডিংয়ের সময়গুলোতে।
বিদ্যুৎ না থাকায় যতক্ষণ কাজ বন্ধ থাকে ততক্ষণ অলস সময় পার করেন কারখানার শ্রমিকরা। বিপুল কর্মঘণ্টার অকারণ অপচয় ঘটছে প্রতিদিন। বিদ্যুতের অভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে মারাত্মকভাবে। শিল্প মালিকরা বলছেন, শুধু বিদ্যুতের অভাবে তাদের কারখানার উৎপাদন ৩০ শতাংশের বেশি কমে গেছে। পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে অপারগ হয়ে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
পরিস্থিতির ভয়াবহতা উঠে এসেছে একটি দৈনিকের রিপোর্টে। বলা হয়েছে, পঞ্চবটি বিসিক শিল্পনগরীতে ২১৫টি পোশাক কারখানা, সাতটি ডাইং কারখানা এবং চার শতাধিক নিটওয়্যার কারখানা আছে। নিটিং কারখানাগুলো পুরোটাই বিদ্যুৎনির্ভর। কিন্তু ৯৫ শতাংশ কারখানায় জেনারেটর নেই। ফলে লোডশেডিংয়ের সময় এই ৯৫ শতাংশ কারখানাগুলোর উৎপাদন বন্ধ থাকছে।
রিপোর্টে ৫০০ শ্রমিক রয়েছেন এমন একটি গার্মেন্ট কারখানার উদাহরণ তুলে ধরে বলা হয়, গত রোববার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঁচ দফায় কারখানাটিতে সাড়ে চার ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। ৫০০ কিলোওয়াটের জেনারেটর চালাতে প্রতি ঘণ্টায় ১৮ হাজার টাকার ডিজেল লাগে। প্রতিদিন এভাবে লাখ টাকার ডিজেল পুড়ে কারখানা চালু রাখতে হলে সেটি লাটে উঠতে বেশি সময় লাগার কথা নয়।
বিদ্যুৎসঙ্কটে চট্টগ্রামের ইস্পাত কারখানায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। দেশের বড় ইস্পাত কারখানাগুলোর অবস্থান চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও মিরসরাই এলাকার ইস্পাত কারখানায় দুই দিন ধরে উৎপাদন কমবেশি ৩০ শতাংশ ব্যাহত হচ্ছে।
সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে পোশাক শিল্পের মালিক শিল্পপতিরা এখনো বেশ রেখেঢেকে কথা বললেও বাস্তব অবস্থা ভিন্ন। তারা বলছেন, শিগগিরই বিদ্যুৎ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। কিন্তু খালি চোখে দৃশ্যমান যে বাস্তবতা এ মুহূর্তে বিদ্যমান; তা রীতিমতো নেতিবাচক। শুধু বিদ্যুৎ নয়, গ্যাসসঙ্কটেও শিল্পের উৎপাদন বন্ধ হচ্ছে মারাত্মকভাবে।
আমরা দেখেছি, ২০২২-২৩ অর্থবছরের মার্চে দেশের রফতানি আয় কমেছে ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ২০২২ সালের মার্চে রফতানি হয় ৪ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার। যা ২০২৩ সালের মার্চে হয়েছে ৪ দশমিক ৬৪ বিলিয়ন ডলার। এ অবনতিশীল প্রবণতা কাটিয়ে ওঠা যায়নি। বরং তা আরো গভীর হয়েছে।
শিল্পের উৎপাদন বা রফতানি বৃদ্ধির সাথে শুধু অব্যাহত বিদ্যুৎ-গ্যাস সরবরাহের সম্পর্ক আছে তা নয়। শিল্প বিকাশে সুশাসনও জরুরি, যেটি গত ১৫ বছরে নিন্মতম পর্যায়েও নেই। আমাদের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধানতম খাত তৈরী পোশাক শিল্প। এ খাতে ব্যাকওয়ার্ড লিঙ্কেজ শিল্প এখনো আমদানিনির্ভর। তা-ও আবার এককভাবে চীনের ওপর নির্ভরতা সবচেয়ে বেশি। গত ৪০ বছরেও এ ক্ষেত্রে স্বনির্ভর হওয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। চীনের কাছ থেকে নির্বিঘ্ন সরবরাহ পাওয়া অদূর ভবিষ্যতে হুমকিতে পড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে গার্মেন্ট রফতানিতে বড় ধরনের সঙ্কট দেখা দিতে পারে।
আবার লাখো কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করে চাহিদার অতিরিক্ত উৎপাদনক্ষমতা অর্জন করা হয়েছে অস্বচ্ছ কায়দায়। এখন দেখা যাচ্ছে, সেগুলো চালানোর মতো জ্বালানি কেনার টাকা নেই। এভাবে বিদ্যুৎ খাতকেও আমদানিনির্ভর করে ফেলা হলো। নেপাল থেকে ভারত হয়ে আমদানি করা বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ পাওয়া কতদিন সম্ভব হবে তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট কারণ আছে। সব মিলিয়ে দেশের শিল্প খাতের ভবিষ্যৎ অন্ধকারাচ্ছন্ন বললে বাড়িয়ে বলা হবে এমন না।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা