৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


শহরাঞ্চলে নতুন দারিদ্র্য

সামাজিক সুরক্ষা বাড়াতে হবে

-

দেশে বিগত ১৪ বছর ধরে অভাবনীয় উন্নয়নের কথা সরকারের তরফ থেকে দেশবাসীকে শোনানো হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। এটি সত্যি যে, এ সময়ের মধ্যে দেশে বড় বড় অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। অবকাঠামোগত উন্নতি হয়েছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এসব কি সবার জন্য সমান সুযোগ বয়ে এনেছে? বাস্তবে সরকারঘনিষ্ঠ একটি ক্ষুদ্রগোষ্ঠী বিপুল অর্থের মালিক হয়েছে। ফলে দেশে আগের চেয়ে বিপুলসংখ্যক মানুষ দরিদ্র হয়েছেন। মূলত দেশে সম্পদ যখন সৃষ্টি হয় তখন আয়বৈষম্য অবধারিত। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেছেন, দেশে বৈষম্য বাড়ছে। তবে সেটি প্রাকৃতিক কারণে নয়, মানবসৃষ্ট। সমতাভিত্তিক সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে বৈষম্য কমানো সম্ভব বলে মনে করেন তিনি।
সঙ্গত কারণে বলা যায়, বৈষম্য প্রশমনে সরকারকে পক্ষপাতহীনভাবে সুস্পষ্ট নীতির আলোকে কাজ করতে হবে। তা না হলে আয়বৈষম্য দূর করা যাবে না। যার প্রমাণ, আমাদের দেশে পাকিস্তান আমলে ২২ পরিবারের কাছে বেশির ভাগ সম্পদ কুক্ষিগত ছিল এখন সেটি ২৫৫ পরিবারে উন্নীত হয়েছে। ফলে দেশে ধনী-গরিবের মধ্যে দিন দিন আয়বৈষম্য আকাশছোঁয়া হচ্ছে।

রাষ্ট্রীয় সংস্থা বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণার তথ্যমতে, গত বছর মোট দরিদ্রের ৫১ শতাংশ ছিল নতুন দরিদ্র। যারা নিম্নমধ্যবিত্ত থেকে নেমে গেছেন। দেশে করোনা মহামারীর সময় দারিদ্র্যের হার প্রায় দ্বিগুণ হয়েছিল। পরে ধীরে ধীরে তা কমে আসে।
সংস্থাটির এক গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে, করোনা-পরবর্তী সময় দারিদ্র্য কমাতে আত্মকর্মসংস্থান বড় ভূমিকা রেখেছে। যাদের আর্থিক সঞ্চয় ছিল, তারা সেটি ভেঙে নিজের কর্মসংস্থানের জন্য কাজে লাগিয়েছেন। তা ছাড়া আধুনিক প্রযুক্তি, বিশেষ করে মোবাইলে আর্থিক সেবা বা এমএফএস আত্মীকরণ দারিদ্র্য কমিয়ে আনতে সহায়তা করেছে। করোনাকালে অনেক শিশু স্কুল থেকে ঝরে পড়েছে। নিম্নআয়ের পরিবারের মধ্যে সেই প্রবণতা বেশি।
সরকারি হিসাবে বাংলাদেশের জনসংখ্যা এখন প্রায় ১৭ কোটি। এর ৯ শতাংশ অর্থাৎ দেড় কোটির বেশি মানুষ করোনাকালে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে। করোনার প্রভাবে শহরে নতুন দারিদ্র্যের আবির্ভাব ঘটেছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর সর্বশেষ জরিপে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ যে দারিদ্র্য হারের কথা বলা হয়েছে, তার প্রায় অর্ধেক বা ৯ শতাংশের মতো নতুন দরিদ্র হয়েছে। এর আগে তারা নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণীতে উন্নীত হয়েছিল।
বিশেষজ্ঞদের অভিমত, নতুন দরিদ্র মানুষকে আবার দারিদ্র্যসীমার উপরে তুলতে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। বিআইডিএসের সমীক্ষায় দেখা গেছে, চরম দরিদ্র পরিবারের ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ জানিয়েছে, মহামারী চলার সময় তাদের সন্তানদের শিক্ষা বন্ধ করতে হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীদের ফিরিয়ে আনতে বিশেষ কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। এছাড়া যেহেতু সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর বিভিন্ন কর্মসূচি ঠিকমতো বাস্তবায়ন দারিদ্র্য কমাতে বিশেষ অবদান রাখে। শহরাঞ্চলেও সামাজিক সুরক্ষা সুবিধা অল্প বিধায় সে জন্য গ্রামীণ জনপদের মতো শহরেও সমানভাবে নজর দিতে হবে। শহরের দরিদ্র মানুষ যাতে এসব কর্মসূচির সুবিধাভোগী হতে পারেন; তার জন্য এর আওতা বাড়াতে হবে।


আরো সংবাদ



premium cement