০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


ড্যান্স ক্লাবের আড়ালে নারী পাচার

অন্ধকার জগতের বিরুদ্ধে আরো ব্যবস্থা চাই

-

একটি কথা প্রচলিত হয়েছে ‘ঢাকায় টাকা উড়ে’। যারা এই উড়ন্ত টাকা ধরতে পারেন তারা সহজে ধনী হয়ে যান। এখানে নীতি-নৈতিকতা, বৈধতা ও আইন কানুন ধর্তব্য নয়। এই শহরে কোটি মানুষ জমায়েত হয়েছে। কেউ জীবন জীবিকার তাগিদে, কেউবা বেঁচে থাকার প্রয়োজনে। এ শহরে এমন কিছু মানুষও জড়ো হয়েছে যারা অন্ধকার জগতের। দিনের বিশাল ঢাকার পাশাপাশি অন্ধকার ঢাকার আকার ও আয়োজনও কম নয়। ২০১৯ সালের শেষের দিকে সরকার অন্ধকার ঢাকার অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সাময়িক কিছু অভিযান চালায়। তখন জানা গিয়েছিল ঢাকার আরেক বিশাল জগৎ সম্পর্কে। সে জগতের রয়েছে বহু ‘রাজা-রানী ও সম্রাট’। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওই সব নিয়ন্ত্রিত ও সিলেকটিভ অভিযানও বেশিদূর অগ্রসর হয়নি। গত শনিবার র্যাব রাজধানীর অন্ধকার জগতের আরেক হোতার খোঁজ দিলো। এ হোতা অনেক বড় কেউ না হলেও আবারো ঢাকা শহরের অন্ধকার দিকটির দিকেই দৃষ্টি আকৃষ্ট করল।
র্যাব সূত্রে প্রকাশিত সংবাদমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, এক হতদরিদ্র ঢাকায় এসে কিভাবে ছোটখাটো মাফিয়ায় পরিণত হলো। কামরুল ইসলাম নামের ওই যুবক ২০০১ সালে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় আসে। প্রথমে বাড্ডায় রিকশা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে। কিছু দিন পর ডেলিভারি ভ্যানচালক হিসেবে কাজ নেয়। এরপর জড়িত হয় কথিত ড্যান্স গ্রুপের সাথে। এর পরই উত্থান শুরু হয় কামরুলের। সে পরিচিতি পেতে থাকে ডিজে কামরুল হিসেবে। কোথাও সে ড্যান্স কামরুল। একজন ব্যক্তির উত্থানের সাথে সাথে একটি অপরাধী সিন্ডিকেটও গড়ে উঠতে থাকে। এমন ব্যক্তিত্বর সংখ্যা রাজধানীতে আসলে কত কেউ জানে না। র্যাবের দেয়া বর্ণনায় জানা যাচ্ছে, কামরুল ড্যান্স ক্লাবের নামে মূলত একটি নারীপাচার সিন্ডিকেট গড়ে তোলে। তাদের পরিচালিত অভিযানে ২৩ নারী উদ্ধার হয়েছে। এ চক্রের আরো ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
নাচ-গান শেখানোর কথা বলে কামরুলচক্র ফাঁদ পাতত। কম বয়সী মেয়েদের এনে ভালো চাকরির প্রলোভন দেখাত। রাজধানীর মিরপুর, উত্তরা, তেজগাঁও এবং চুয়াডাঙ্গায় তার অবৈধ কর্মের আস্তানা পাওয়া গেছে। এ চক্রের সাথে ভারতের নারীপাচারকারী চক্রের সংযোগ ছিল। উভয় দেশের সীমান্তে তারা গড়ে তুলেছিল নিরাপদ আস্তানা। সেগুলোকে ব্যবহার করে সুযোগ বুঝে চলত নারীপাচার। চক্রের সদস্যদের আটকের সময় র্যাব তাদের আস্তানা থেকে ৫৩টি পাসপোর্ট ও ২০টি মোবাইল উদ্ধার করে। হিসাব মতে, কামরুল চক্রের প্রধান কাজ নারীপাচার। তারা ২০১৯ সাল থেকে সক্রিয়। কিন্তু বাংলাদেশ থেকে নারীপাচার হওয়ার যে পরিসংখ্যান সেটি বিশাল। বৈশ্বিক ট্রাফিকিং ইন পারসন (টিআইপি) অনুযায়ী, ১০ বছরে বাংলাদেশ থেকে পাচার হয়ে গেছে দুই লাখ নারী ও শিশু। প্রতি বছর গড়ে ২০ হাজার নারী-শিশু পাচার হচ্ছে। ভারত পাকিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে তাদের পাচার করা হয়।
একজন কামরুল অন্ধকার ঢাকার একটি মাত্র চরিত্র। তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ নারীপাচারের। পরিসংখ্যান থেকে আমরা টের পাচ্ছি নারীপাচার চক্রের হোতা হিসেবে তার চেয়ে অনেক বড় বড় ‘কারিগর’ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। অন্য দিকে, অন্ধকার ঢাকায় চলছে আরো নানা চক্রের অবৈধ কর্মকাণ্ড। যেমনÑ জুয়া, মাদক, নারীব্যবসাসহ আরো ভয়াবহ সব অবৈধ কর্মকাণ্ড চলছে এ শহরে। ওই সব ঘৃণিত অপরাধের রাশ টেনে ধরতে হলে কামরুলের মতো আরো যত চক্র রয়েছে সবার বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। সিলেকটিভ অভিযান নয়, দরকার চিরুনি অভিযান। তাতে ঢাকার অন্ধকার জগতের ‘সম্রাট’রা বিচারের মুখোমুখি হতে পারে।

 


আরো সংবাদ



premium cement