২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`
প্রধান খাদ্যশস্য চালের দাম লাগামহীন

বাজার নজরদারিতে গাফিলতি

-

করোনার প্রভাবে আমাদের সামগ্রিক অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে; তাতে মধ্যবিত্ত ও নি¤œবিত্তের অবস্থা অবর্ণনীয়। দেশী-বিদেশী সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপে তাদের করুণ চিত্র ফুটে উঠেছে। বেসরকারি সংস্থা ‘সানেম’ পরিচালিত জরিপে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়ে ৪২ শতাংশ হওয়ার কথা বলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতেও দেশে অব্যাহতভাবে নিত্যপণ্য দ্রব্যের দাম বাড়ছে। ফলে বিপুলসংখ্যক মানুষ ভয়াবহ কষ্টে নিপতিত হয়ে জীবন চালাতে খাবি খাচ্ছেন। বিশেষ করে চালের দাম লাগামহীন হওয়া ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে নিপতিত হয়েছে তাদের জীবনে।
সরকারি হিসেবে দেশে চালের কোনো সঙ্কট ছিল না। কিন্তু সারা বছর দফায় দফায় চালের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে ক্রেতাসাধারণের। দাম যাতে না বাড়ে এবং একই সাথে নিয়ন্ত্রণে থাকে; এ জন্য সরকারের পক্ষ থেকে মিল মালিকদের কঠোর হুঁশিয়ারি দেয়া হয়েছিল। কয়েক দফা চাল আমদানির সিদ্ধান্ত দিয়েছে সরকার। শুল্কহার কমিয়ে ১৭ লাখ দুই হাজার টন চাল আমদানির অনুমতি দিয়েছে। সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমদানি করা সব চাল বাজারজাতকরণের নির্দেশও দেয়া হয়। এতকিছুর পরও চালের দাম কমেনি, বরং আরো বেড়েছে। বাজারদর বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, রাজধানীর খুচরা বাজারে সপ্তাহের ব্যবধানে সরু ও মাঝারি চালের দাম বেড়েছে কেজিতে ২-৩ টাকা। সোমবার সরকারি বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) দেয়া তথ্যমতে, সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি কেজি সরু চাল ২ দশমিক ৪৮ শতাংশ বেশি দরে বিক্রি হয়েছে। মাঝারি আকারের প্রতি কেজি চাল বিক্রি হয় ২ দশমিক ৯১ শতাংশ বেশি দরে। খুচরা বাজারে সরু চাল মানভেদে প্রতি কেজি ৫৬ থেকে ৬৮ এবং মাঝারি চাল ৫০ থেকে ৫৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে; যা এক সপ্তাহ আগে ছিল সরু চাল ৫৫ থেকে ৬৬ এবং মাঝারি চাল ৪৮ থেকে ৫৫ টাকা। তবে নতুন করে মোটা চালের দাম বাড়েনি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০২০ সালে দেশে চালের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৬৬ লাখ ৩ হাজার ৯২৭ টন। এর আগের অর্থবছর ছিল ২ লাখ ১৩ হাজার টনের বেশি। সংস্থাটি বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছর চালের উৎপাদন ছিল ৩ কোটি ৬৪ লাখ টন। গত অর্থবছর বোরো চালের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৯৬ লাখ ৪৫ হাজার টন। অন্য দিকে আমন চালের উৎপাদন ছিল ১ কোটি ৪২ লাখ টন ও আউশ ২৭ লাখ ৫৫ হাজার টন। দেশের উৎপাদিত চালের ৫৫ শতাংশের বেশি আসে বোরো থেকে, বাকিটা আউশ ও আমন থেকে। চলতি বোরো মৌসুমেও ধানের ভালো ফলন হয়েছে। সেই হিসেবে দেশে চালের সঙ্কট থাকার কথা নয়।
সরকারের নানামুখী উদ্যোগের পরও কেন কমছে না চালের দামÑ এমন প্রশ্ন যখন সাধারণ ক্রেতাদের, তখন কৃষিমন্ত্রী জানালেন ভিন্ন তথ্য। গত রোববার এক অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে খাদ্যের কোনো অভাব নেই। কিন্তু দেশের মানুষ ভাতের ওপর বেশি নির্ভরশীল বলে চালের ঘাটতি পড়েছে। একই কারণে দামও বাড়ছে।’ তবে চালের দাম বেড়ে যাওয়ার বিষয়ে খুচরা বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের মতে, মিল মালিকরা সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়ানোয় পাইকারি ও খুচরা বাজারে দাম বাড়ছে। বাজার বিশ্লেষকদের মতে, বাজারমূল্যের সাথে আমদানির খরচ সঙ্গতিপূর্ণ না হলে চালের দাম কমবে না। শুল্ক কমিয়ে আমদানির সুযোগ দেয়ার পরও যদি দেখা যায়, প্রাইস এবং ট্যাক্স অনুযায়ী যে দাম আসে সেটা স্থানীয় বাজারের কাছাকাছি, তাহলে দাম কমবে না। তাই চালের দাম কমাতে হলে শুল্ক কমানোই যুক্তিসঙ্গত।
বাজার বিশ্লেষকদের মতো আমরাও মনে করি, সরকার যদি সত্যিই সাধারণ মানুষের জন্য চালের দাম কমাতে চায়, তাহলে ওএমএসের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি যেসব সামাজিক কর্মসূচি রয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে পর্যাপ্ত চাল বিতরণ করতে হবে। এটি করা হলে যারা অতি মুনাফা করতে চান, তাদের পক্ষে চাল ধরে রাখা সম্ভব হবে না। তখন দামও কমবে। সেজন্য টিসিবিসহ সরকারের যেসব সংস্থা রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে বিতরণব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। একই সাথে বাজারে কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। কিন্তু চালের বাজার নজরদারিতে সরকারের গাফিলতিই লক্ষণীয়।

 


আরো সংবাদ



premium cement
৪৬তম বিএসএস প্রিলি পরীক্ষা : শুরুতেই স্বপ্নভঙ্গ ৮১ শিক্ষার্থীর মরুর উষ্ণতায় ক্ষতির মুখে কৃষি ছেলেদের কারণে বিপাকে মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথির দুই বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে ফ্রান্স, ব্রাজিল ও প্যারাগুয়ে সফরে যাচ্ছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ড সফরকে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে মাইলফলক বললেন প্রধানমন্ত্রী লালমনিরহাটে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী যুবক নিহত এখনো শেষ হয়নি বিতর্কিত আউটের রেশ, ব্যতিক্রমী প্রতিবাদ মুশফিকের ‘ফ্রি ভিসার গল্প’ আর শূন্য হাতে ফেরা লাখো শ্রমিক নোয়াখালীতে প্রবাসীর স্ত্রীর ব্যক্তিগত ছবি দেখিয়ে চাঁদা আদায় দেশের উন্নয়নে পাকিস্তান প্রশংসা করে, অথচ বিরোধী দল দেখে না : কাদের

সকল