০৫ মে ২০২৪, ২২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`


পাহাড়ি নদী মাতামুহুরীতে নাব্যতাসঙ্কট

পানিপ্রবাহ ফেরাতে খনন দরকার

-

মাতামুহুরী আমাদের দেশের পাহাড়ি একটি নদী। সরকারি তথ্য মতে, মাতামুহুরীর আয়তন এক হাজার ৮৮০ একর। বান্দবানের আলীকদম উপজেলা সদর থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে পাহাড়ভাঙা মুরুংপাড়া থেকে উজানে অগ্রসর হলে নদীর উৎপত্তিস্থল। যা বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের দোছরি-ফাত্থারায়। দোছরি ও ফাত্থারা নামের আলাদা দু’টি খালের সংযোগস্থল ইংরেজি ‘ওয়াই’ অক্ষরের মতো পয়েন্ট থেকে মাতামুহুরীর উৎপত্তি। ফলে একান্তভাবেই এটি বাংলাদেশের নদী। এর উৎপত্তিস্থলে রয়েছে অগুনতি ঝিরি, খাল ও ছড়া। নদীর দুই ধারে রয়েছে পাহাড়। নদীটি আলীকদম, লামা ও চকরিয়া হয়ে বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিশেছে। গত শতকের আশির দশকেও মাতামুহুরী নদীর গভীরতা ছিল ৫০-৬০ ফুট। প্রস্থ ছিল ১৫০০ থেকে ১৬০০ ফুট পর্যন্ত। নদীতে ছিল বড় বড় কুম (বিশাল নীল জলাধার)। কিন্তু এককালের খরস্রোতা মাতামুহুরীতে এখন তীব্র নাব্যতাসঙ্কট দেখা দিয়েছে।
নাব্যতাসঙ্কটের কারণ হিসেবে জানা যায়, মাতামুহুরী নদীর নামানুসারে গড়ে ওঠা প্রায় এক লাখ তিন হাজার একরের বিশাল সংরক্ষিত বনাঞ্চল থেকে গত দুই দশক ধরে অবাধে বৃক্ষ নিধন, বাঁশ কেটে ফেলা এবং জুমচাষে পাহাড়ের মাটি ক্ষয়ে নদীতে পড়ছে। ফলে নদীর তলদেশ ক্রমেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া পাহাড় ও ঝিরি খুঁড়ে অবাধে পাথর উত্তোলন করায় ঝিরি থেকে পানিপ্রবাহ কমে গেছে। বর্ষা শেষ হতে না হতেই নদীতে জেগে উঠছে অনেক চর। বর্ষায় বৃষ্টি হলেই নদীর দু’কূল ছাপিয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। এতে দুই তীরের বাসিন্দাদের ভোগান্তির সীমা থাকে না। আবার গ্রীষ্মকালের খরায় হয়ে পড়ে শীর্ণকায় জলাধারা। বর্তমানে নদীটির বেহাল অবস্থা এমনই যে; যার বর্ণনা দিতে গিয়ে আশ্রয় নিতে হয়, ‘পার হয়ে যায় গরু পার হয় গাড়ি’Ñ কবিতায় বর্ণিত সেই চিত্রকল্পের। নিকট-অতীতেও খরস্রোতা ছিল মাতামুহুরী। আর এখন বর্ষা শেষ হওয়ার কয়েক মাস যেতে না যেতেই নৌ চলাচল, কাঠ ও বাঁশ পরিবহনে দুর্ভোগের অন্ত থাকে না। পানিপ্রবাহ কমে যাওয়ায় মাছের উৎপাদনেও পড়েছে বিরূপ প্রভাব। এতে করে মাছ ধরে যারা জীবিকা নির্বাহ করেন সেসব পরিবারে নেমে এসেছে চরম হতাশা। সাথে সাথে নদীতীরবর্তী দুই পারের বিস্তীর্ণ জনপদে পরিবেশের সুদূরপ্রসারী বিরূপ প্রভাবের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবিদরা।
সরকারি পুরনো নথিপত্র ঘেঁটে জানা যায়, মাতামুহুরী নদীর নাব্যতা ধরে রাখতে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার সর্বপ্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। ওই উদ্যোগের আওতায় ১৮৭৮ সালের ভারতীয় বন আইনে তৎকালীন ‘দ্য গভর্নমেন্ট অব বেঙ্গল ১৮৮০ সালের ১৭ নভেম্বর মাতামুহুরী নদীর অববাহিকা ঘিরে প্রায় এক লাখ তিন হাজার পাহাড়ি ভূমিকে ‘মাতামুহুরী রিজার্ভ ফরেস্ট’ ঘোষণা করা হয়। যাতে নদীর নাব্যতা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অটুট থাকে। কিন্তু নিজেদের অবিবেচনাপ্রসূত কর্মকাণ্ডে মাতামুহুরীর মতো পাহাড়ি নদীও মরতে বসেছে। এমনিতেই আমরা নিজেদের প্রধান প্রধান নদীর পানি উজানের প্রতিবেশী দেশের কারণে ন্যায্য হিস্যা থেকে বঞ্চিত। এতে করে দেশের অনেক নদী মৃতপ্রায় হয়ে পড়েছে। এখন যদি একান্ত দেশীয় নদীরও আমাদের কারণে হারিয়ে যায়; তা হবে দেশের জন্য বড়ই দুর্ভাগ্যজনক।
সবার জানা, নদীরও পরিচর্যা দরকার। তাই মাতামুহুরীরও এখন পরিচর্যা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। মাতামুহুরীকে বাঁচাতে হলে সেখানকার বনাঞ্চলের গাছ কাটা এবং অবিবেচকের মতো জুমচাষ করা থেকে বিরত রাখতে হবে ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের। একই সাথে নাব্যতা পুনরুদ্ধারে আলীকদম থেকে লামা পর্যন্ত নদী খনন করতে হবে। তা না হলে সার্বিকভাবে প্রতিবেশগত ভারসাম্য নষ্ট হয়ে খেসারত দিতে হবে সবাইকে।


আরো সংবাদ



premium cement
গ্রিড লাইনের ত্রুটিতে সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ভুক্তভোগী নারী ও তার পাশে দাঁড়ানো ব্যক্তিদের হয়রানির প্রতিবাদ বাড্ডায় নারীর অর্ধগলিত লাশ উদ্ধার কথিত স্বামী পলাতক গ্রেফতারকৃতদের পরিবারের সাথে সাক্ষাৎ করবে খতমে নবুওয়ত ঝিনাইদহ-১ আসনে উপ-নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নায়েব আলী জাতীয় গ্রিডে ত্রু‌টি, সিলেট বিভাগে বিদ্যুৎ বিপর্যয় ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থীদের জন্য ঢাবিতে নিয়মিত ২০ আসন বরাদ্দ রেকর্ড গড়ে সাদিক খান আবারো লন্ডনের মেয়র আগামী ২ মাসের মধ্যে ভাঙ্গা-খুলনা-যশোর পর্যন্ত ট্রেন চালু হবে : জিল্লুল হাকিম ফতুল্লায় ব্যবসায়ী অপহরণ, গ্রেফতার ৭ তাপদাহের কারণে গোসল করতে গিয়ে কলেজছাত্রের মৃত্যু

সকল