৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫
`


অরাজকতার দ্রুত অবসান দরকার

বসুরহাটে আর কত লাশ পড়বে

-

দেশের প্রায় সব এলাকায় ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে উপদলীয় কোন্দল বিদ্যমান। কোন্দল প্রায়ই হানাহানির রূপ নিচ্ছে এবং হত্যা ও খুনের মতো হিংসাত্মক ঘটনা ঘটছে। মূলত স্থানীয় সরকারের বিভিন্ন নির্বাচনে দলের মনোনয়ন, দলীয় পদ-পদবি প্রাপ্তি এবং স্থানীয় উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ভাগবাটোয়ারা থেকে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র হয়ে উঠেছে ভয়াবহ দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত। এ ধরনের সঙ্ঘাত কেবল দলীয় লোকের প্রাণহানি, অঙ্গহানির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকছে না। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে স্থানীয় জনসাধারণও। গত প্রায় আড়াই মাস ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এলাকায় এমন সঙ্ঘাতের ঘটনা ঘটছে। তার আপন ছোট ভাই ও বসুরহাট পৌর মেয়র আবদুল কাদের মির্জার সাথে দফায় দফায় সংঘর্ষ বাধছে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অন্য প্রতিপক্ষের। এতে একজন সাংবাদিকসহ এ পর্যন্ত দু’জন মারা গেছেন। স্থানীয় মানুষ এই উপদলীয় কোন্দলে কয়েক মাস ধরে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও দলটি এ কোন্দল মেটাতে এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার স্থানীয় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমান বাদলের অনুসারীদের সাথে কাদের মির্জার সমর্থকদের দুই দফায় সংঘর্ষ হয়। উভয় পক্ষ বিভিন্ন ধরনের অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে একে অপরের ওপর আক্রমণ করেছে। সেখানে বিবদমান দুই পক্ষের প্রকাশ্য সন্ত্রাসে একজন নিহত ও অর্ধশত আহত হয়েছেন। বসুরহাটে এর আগেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। প্রতিবারই সন্ত্রাসীরা বিপুল বিক্রমে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে। সন্ত্রাসকবলিত এমন পরিস্থিতিতে সেখানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যকর তৎপরতা আছে বলে মনে হচ্ছে না। যদিও সর্বশেষ ঘটনায় ২৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাদলের অভিযোগ, এদের মধ্যে ২৭ জন তার রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আগত নিরীহ সমর্থক। পুলিশ এদেরকে একটি পিকআপ ভ্যান থেকে একসাথে ধরে নিয়ে গেছে।
কাদের মির্জা ক্ষমতাসীন দলের নানা অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে যাচ্ছেন। বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ তুলছেন। তিনি যেসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা বলছেন, সেসবের বিরুদ্ধে সরকারের কোনো পদক্ষেপ নেই। একইভাবে ক্ষমতাসীন দলও কাদের মির্জার বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না। একবার তাকে দলীয় সব কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেয়ার একটি বিজ্ঞপ্তি সংবাদমাধ্যমে পাঠানো হয়। কয়েক ঘণ্টা পর সেটি আবার প্রত্যাহারের ঘোষণাও পাওয়া যায়।
ক্ষমতাসীন দলের প্রতিপক্ষের দ্বন্দ্ব-সঙ্ঘাত ঘিরে বসুরহাটে প্রশাসন কয়েকবার ১৪৪ ধারা জারি করেছে। এতে সাধারণ মানুষ প্রতিনিয়ত ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ তাদের সন্ত্রাসের কারণে ঘর থেকে বের হতে পারছে না। স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ব্যাঘাত ঘটছে। মানুষ সারাক্ষণ চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাতে বাধ্য হচ্ছে। অথচ সন্ত্রাস বন্ধে দল বা প্রশাসন কারো পক্ষ থেকেই কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না।
অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, কাদের মির্জার বলার অধিকার রয়েছে। তিনি বড় বড় অন্যায়-অনিয়ম নিয়ে কথা বলার অধিকার রাখেন। এ কথা আমরা এ জন্য বলছি, দেশে অনেক কথাই খোলাসা করে বলা যায় না। সরকারের রোষানলে পড়তে হয়। এখন মনে হচ্ছে, সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদকের ভাই হওয়াতে তিনি এভাবে স্বাধীনতা ভোগ করছেন। মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হিসেবে এর ইতিবাচক দিক থাকলেও নেতিবাচক ঘটনার দায় ক্রমেই এখন বড় হয়ে দেখা দিচ্ছে। এরই মধ্যে দুইজন প্রাণ হারিয়েছেন, আহত হয়েছেন অনেকে, অনেক সম্পদ, শক্তি হানি হয়েছে। এমনকি সেখানে যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে সেটি তিনি সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদকের ভাই হওয়ার কারণেই হতে পারছে, এমন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের একজন নেতা যেভাবে চলছেন তার রাশ কেন টানা যাচ্ছে না? আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কেন নিশ্চুপ সেই আলোচনা এখন সর্বত্র। আমরা মনে করি, কাদের মির্জার উত্থাপিত অভিযোগগুলোর ব্যাপারে সরকারের অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আর বসুরহাটে যে অরাজকতা সৃষ্টি হয়েছে সেটিও অচিরেই বন্ধ করা দরকার।


আরো সংবাদ



premium cement