১৪ মে ২০২৪, ৩১ বৈশাখ ১৪৩১, ০৫ জিলকদ ১৪৪৫
`


চাল-পেঁয়াজের ‘সিন্ডিকেট’

নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতা

-

দেশে নিত্যপণ্যের বাজার প্রায়ই অস্থিতিশীল হয়ে পড়ছে। সম্প্রতি এই প্রবণতা বেড়েছে; যা সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয়। অথচ করোনাকালে দেশের বেশির ভাগ মানুষের আয় কমেছে। নিত্যপণ্যের দাম বাড়ায় নি¤œ ও নি¤œমধ্যবিত্তের জীবনমান আরো নেমে গেছে। বাস্তবতা হলো, বাজারদর নিয়ন্ত্রণে সরকারের তরফ থেকে তোড়জোড় দেখা গেলেও তা কার্যকর হয়নি। ফলে চড়া দামে নিত্যপণ্য কেনার বিষয়টি মানুষের নিয়তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রতিনিয়ত ভোক্তার পকেট থেকে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ী চক্র। মুনাফাখোর এই চক্রকে নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকারি ব্যর্থতা এখন দৃশ্যমান। ফলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে বৈ কমছে না।
দীর্ঘ দিন ধরে অভিযোগ আছে, নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই। সরকারি নীতি মূলত ব্যবসায়ীদের পক্ষেই চলে যাচ্ছে। এতে করে নিত্যপণ্যের দর নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার ব্যর্থ হচ্ছে। সাধারণের অভিযোগ যে ভিত্তিহীন নয়, এবার তা প্রমাণ হলো খোদ সরকারি এক গবেষণার তথ্যে। সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে চাল, আলু ও পেঁয়াজের মতো ভোগ্যপণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের ‘সিন্ডিকেট’ এবং তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের ব্যর্থতাকে দায়ী করা হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের (বিএআরসি) এক প্রতিবেদনে।
এতে বলা হয়েছে, বাজারে চাল, আলু ও পেঁয়াজের মতো নিত্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির পেছনে সরবরাহ সঙ্কট নয়; বরং তৃতীয় পক্ষের হাত রয়েছে। উৎপাদক, খুচরা ব্যবসায়ী ও ভোক্তার মধ্যে এই তৃতীয় পক্ষ বলতে মধ্যস্বত্বভোগী, বিশেষ করে মিলার, আড়তদার ও পাইকারদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। একই সাথে নতুন মৌসুমি ব্যবসায়ী ও বড় ব্যবসায়ীদের আধিপত্যকেও এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হয়েছে। তবে পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির মূল কারণ ছিল উৎপাদন ঘাটতি। গত কয়েক বছরে বিভিন্ন সময় চাল, পেঁয়াজ ও আলুর দামে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দাম বৃদ্ধির কারণ উদঘাটনে কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) গবেষণাটি চালায়। গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে পরোক্ষভাবে সরকারের ব্যর্থতা স্বীকার করে নিয়ে কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আবদুর রাজ্জাক বলেছেন, ‘সরকারিভাবে ধান-চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত না হওয়া এবং সরকারি খাদ্যগুদামে পর্যাপ্ত মজুদ না থাকায় মিল মালিক ও পাইকাররা সুযোগ নিয়েছে, বাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।’
প্রতিবেদনে ধান-চালের মূল্য স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে বেশ কিছু সুপারিশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে, ধান-চাল সংগ্রহ পদ্ধতি আধুনিকায়ন করা, কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান সংগ্রহ করে তা মিলারদের মাধ্যমে চালে পরিণত করা। ন্যূনতম ২৫ লাখ টন চাল সংগ্রহ করা। মোট চাল উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ সংগ্রহ করার সক্ষমতা অর্জন করা, যাতে সরকার বাজারে কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে। উৎপাদন ব্যয়ের ওপর কমপক্ষে ২০ শতাংশ মুনাফা বিবেচনা করে ধান-চালের সংগ্রহমূল্য নির্ধারণ করা হলে কৃষকরা লাভবান হবেন। একই সাথে তারা সরকারের কাছে ধান বিক্রি করবেন। আলুর ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ প্রয়োজন মিটিয়ে রফতানি করা। আর পেঁয়াজের ঘাটতি মেটাতে দেশে উৎপাদন বাড়ানো।
আমরা মনে করি, নিত্যপণ্যের বাজরদর নিয়ন্ত্রণে সর্বপ্রথম দরকার অসাধু বাণিজ্য সিন্ডিকেট শনাক্ত করে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা। এ ক্ষেত্রে দোষীদের কোনো ছাড় দেয়া যাবে না। একই সাথে যেসব কৃষিপণ্যের ঘাটতি রয়েছে, সেগুলোর অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বাড়ানোর মাধ্যমে আমদানিনির্ভরতা কমাতে বাস্তবভিত্তিক কর্মসূচি নিতে হবে। কৃষিমূল্য কমিশন গঠনের মাধ্যমে সারা বছর বাজারে কৃষিপণ্যের দাম নির্ধারণ ও তদারকি করাও জরুরি হয়ে পড়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement